Powered by Blogger.
Love Bit
  • Home
  • All Videos
  • All Poem
  • Short Biography
  • About Us
  • Contact Us

CATEGORY >


এত হাসি কোথায় পেলে
এত কথার খলখলানি
কে দিয়েছে মুখটি ভরে
কোন বা গাঙের কলকলানি |
কে দিয়েছে রঙিন ঠোঁটে
কলমী ফুলের গুলগুলানি |
কে দিয়েছে চলন বলন
কোন সে লতার দোল দুলানী |

কাদের ঘরে রঙিন পুতুল
আদরে যে টইটুবানি |
কে এনেছে বরণ ডালায়
পাটের বনের বউটুবানী |
কাদের পাড়ার ঝামুর ঝুমুর
কাদের আদর গড়গড়ানি
কাদের দেশের কোন সে চাঁদের
জোছনা ফিনিক ফুল ছড়ানি |

তোমায় আদর করতে আমার
মন যে হলো উড়উড়ানি
উড়ে গেলাম সুরে পেলাম
ছড়ার গড়ার গড়গড়ানি |
Share on:

আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা, আমি বাধি তার ঘর,
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।
যে মোরে করিল পথের বিবাগী;
পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি;
দীঘল রজনী তার তরে জাগি ঘুম যে হয়েছে মোর;
আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা, আমি বাধি তার ঘর ।


আমার একুল ভাঙ্গিয়াছে যেবা আমি তার কুল বাধি,
যে গেছে বুকেতে আঘাত হানিয়া তার লাগি আমি কাঁদি;
সে মোরে দিয়েছে বিষ ভরা বান,
আমি দেই তারে বুক ভরা গান;
কাটা পেয়ে তারে ফুল করি দান সারাটি জনম ভর,
আপন করিতে কাদিঁয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর ।
মোর বুকে যেবা কবর বেধেছে আমি তার বুক ভরি,
রঙ্গীন ফুলের সোহাগ জড়ান ফুল মালঞ্চ ধরি।
যে মুখে সে নিঠুরিয়া বাণী,
আমি লয়ে সখী, তারি মুখ খানি,
কত ঠাই হতে কত কি যে আনি, সাজাই নিরন্তর,
আপন করিতে কাদিয়া বেড়াই যে মোরে করিয়াছে পর ।
Share on:

এই খানে তোর দাদির কবর ডালিম-গাছের তলে,
তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।
এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ,
পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।
এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে হইতাম সারা,
সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা!
সোনালি ঊষার সোনামুখ তার আমার নয়নে ভরি
লাঙল লইয়া খেতে ছুটিলাম গাঁয়ের ও-পথ ধরি।
যাইবার কালে ফিরে ফিরে তারে দেখে লইতাম কত
এ কথা লইয়া ভাবি-সাব মোরে তামাশা করিত শত।
এমনি করিয়া জানি না কখন জীবনের সাথে মিশে
ছোট-খাট তার হাসি ব্যথা মাঝে হারা হয়ে গেনু দিশে।

বাপের বাড়িতে যাইবার কাল কহিত ধরিয়া পা
আমারে দেখিতে যাইও কিন্তু উজান-তলীর গাঁ।
শাপলার হাটে তরমুজ বেচি পয়সা করি দেড়ী,
পুঁতির মালার একছড়া নিতে কখনও হত না দেরি।
দেড় পয়সার তামাক এবং মাজন লইয়া গাঁটে,
সন্ধাবেলায় ছুটে যাইতাম শ্বশুরবাড়ির বাটে!
হেস না­ হেস না­ শোন দাদু, সেই তামাক মাজন পেয়ে,
দাদি যে তোমার কত খুশি হত দেখিতিস যদি চেয়ে!
নথ নেড়ে নেড়ে কহিত হাসিয়া, এতদিন পরে এলে,
পথ পানে চেয়ে আমি যে হেথায় কেঁদে মরি আঁখিজলে।
আমারে ছাড়িয়া এত ব্যথা যার কেমন করিয়া হায়,
কবর দেশেতে ঘুমায়ে রয়েছে নিঝঝুম নিরালায়!
হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, আয় খোদা! দয়াময়,
আমার দাদীর তরেতে যেন গো ভেস্ত নসিব হয়।

তারপর এই শূন্য জীবনে যত কাটিয়াছি পাড়ি
যেখানে যাহারে জড়ায়ে ধরেছি সেই চলে গেছে ছাড়ি।
শত কাফনের, শত কবরের অঙ্ক হৃদয়ে আঁকি,
গণিয়া গণিয়া ভুল করে গণি সারা দিনরাত জাগি।
এই মোর হাতে কোদাল ধরিয়া কঠিন মাটির তলে,
গাড়িয়া দিয়াছি কত সোনামুখ নাওয়ায়ে চোখের জলে।
মাটিরে আমি যে বড় ভালবাসি, মাটিতে মিশায়ে বুক,
আয়-আয় দাদু, গলাগলি ধরি কেঁদে যদি হয় সুখ।

এইখানে তোর বাপজি ঘুমায়, এইখানে তোর মা,
কাঁদছিস তুই? কী করিব দাদু! পরাণ যে মানে না।
সেই ফালগুনে বাপ তোর এসে কহিল আমারে ডাকি,
বা-জান, আমার শরীর আজিকে কী যে করে থাকি থাকি।
ঘরের মেঝেতে সপটি বিছায়ে কহিলাম বাছা শোও,
সেই শোওয়া তার শেষ শোওয়া হবে তাহা কী জানিত কেউ?
গোরের কাফনে সাজায়ে তাহারে চলিলাম যবে বয়ে,
তুমি যে কহিলা বা-জানরে মোর কোথা যাও দাদু লয়ে?
তোমার কথার উত্তর দিতে কথা থেমে গেল মুখে,
সারা দুনিয়ার যত ভাষা আছে কেঁদে ফিরে গেল দুখে!

তোমার বাপের লাঙল-জোয়াল দুহাতে জঢ়ায়ে ধরি,
তোমার মায়ে যে কতই কাঁদিতে সারা দিনমান ভরি।
গাছের পাতার সেই বেদনায় বুনো পথে যেতো ঝরে,
ফালগুনী হাওয়া কাঁদিয়া উঠিত শুনো-মাঠখানি ভরে।
পথ দিয়া যেতে গেঁয়ো পথিকেরা মুছিয়া যাইত চোখ,
চরণে তাদের কাঁদিয়া উঠিত গাছের পাতার শোক।
আথালে দুইটি জোয়ান বলদ সারা মাঠ পানে চাহি,
হাম্বা রবেতে বুক ফাটাইত নয়নের জলে নাহি।
গলাটি তাদের জড়ায়ে ধরিয়া কাঁদিত তোমার মা,
চোখের জলের গহীন সায়রে ডুবায়ে সকল গাঁ।

ঊদাসিনী সেই পল্লী-বালার নয়নের জল বুঝি,
কবর দেশের আন্ধারে ঘরে পথ পেয়েছিল খুজি।
তাই জীবনের প্রথম বেলায় ডাকিয়া আনিল সাঁঝ,
হায় অভাগিনী আপনি পরিল মরণ-বিষের তাজ।
মরিবার কালে তোরে কাছে ডেকে কহিল, বাছারে যাই,
বড় ব্যথা র’ল, দুনিয়াতে তোর মা বলিতে কেহ নাই;
দুলাল আমার, যাদুরে আমার, লক্ষী আমার ওরে,
কত ব্যথা মোর আমি জানি বাছা ছাড়িয়া যাইতে তোরে।
ফোঁটায় ফোঁটায় দুইটি গন্ড ভিজায়ে নয়ন­জলে,
কী জানি আশিস করে গেল তোরে মরণ­ব্যথার ছলে।

ক্ষণপরে মোরে ডাকিয়া কহিল­ আমার কবর গায়
স্বামীর মাথার মাথালখানিরে ঝুলাইয়া দিও বায়।
সেই যে মাথাল পচিয়া গলিয়া মিশেছে মাটির সনে,
পরাণের ব্যথা মরে নাকো সে যে কেঁদে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে।
জোড়মানিকেরা ঘুমায়ে রয়েছে এইখানে তরু­ছায়,
গাছের শাখারা স্নেহের মায়ায় লুটায়ে পড়েছে গায়।
জোনকি­মেয়েরা সারারাত জাগি জ্বালাইয়া দেয় আলো,
ঝিঁঝিরা বাজায় ঘুমের নূপুর কত যেন বেসে ভালো।
হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, রহমান খোদা! আয়;
ভেস্ত নসিব করিও আজিকে আমার বাপ ও মায়!

এখানে তোর বুজির কবর, পরীর মতন মেয়ে,
বিয়ে দিয়েছিনু কাজিদের বাড়ি বনিয়াদি ঘর পেয়ে।
এত আদরের বুজিরে তাহারা ভালবাসিত না মোটে,
হাতেতে যদিও না মারিত তারে শত যে মারিত ঠোঁটে।
খবরের পর খবর পাঠাত, দাদু যেন কাল এসে
দুদিনের তরে নিয়ে যায় মোরে বাপের বাড়ির দেশে।
শ্বশুর তাহার কশাই চামার, চাহে কি ছাড়িয়া দিতে
অনেক কহিয়া সেবার তাহারে আনিলাম এক শীতে।
সেই সোনামুখ মলিন হয়েছে ফোটে না সেথায় হাসি,
কালো দুটি চোখে রহিয়া রহিয়া অশ্রু উঠিছে ভাসি।
বাপের মায়ের কবরে বসিয়া কাঁদিয়া কাটাত দিন,
কে জানিত হায়, তাহারও পরাণে বাজিবে মরণ­বীণ!
কী জানি পচানো জ্বরেতে ধরিল আর উঠিল না ফিরে,
এইখানে তারে কবর দিয়েছি দেখে যাও দাদু! ধীরে।

ব্যথাতুরা সেই হতভাগিনীরে বাসে নাই কেহ ভালো,
কবরে তাহার জড়ায়ে রয়েছে বুনো ঘাসগুলি কালো।
বনের ঘুঘুরা উহু উহু করি কেঁদে মরে রাতদিন,
পাতায় পাতায় কেঁপে উঠে যেন তারি বেদনার বীণ।
হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, আয় খোদা! দয়াময়।
আমার বু­জীর তরেতে যেন গো বেস্ত নসিব হয়।

হেথায় ঘুমায় তোর ছোট ফুপু, সাত বছরের মেয়ে,
রামধনু বুঝি নেমে এসেছিল ভেস্তের দ্বার বেয়ে।
ছোট বয়সেই মায়েরে হারায়ে কী জানি ভাবিত সদা,
অতটুকু বুকে লুকাইয়াছিল কে জানিত কত ব্যথা!
ফুলের মতন মুখখানি তার দেখিতাম যবে চেয়ে,
তোমার দাদির ছবিখানি মোর হদয়ে উঠিত ছেয়ে।
বুকেতে তাহারে জড়ায়ে ধরিয়া কেঁদে হইতাম সারা,
রঙিন সাঁঝেরে ধুয়ে মুছে দিত মোদের চোখের ধারা।

একদিন গেনু গজনার হাটে তাহারে রাখিয়া ঘরে,
ফিরে এসে দেখি সোনার প্রতিমা লুটায় পথের পরে।
সেই সোনামুখ গোলগাল হাত সকলি তেমন আছে।
কী জানি সাপের দংশন পেয়ে মা আমার চলে গেছে।
আপন হস্তে সোনার প্রতিমা কবরে দিলাম গাড়ি,
দাদু! ধর­ধর­ বুক ফেটে যায়, আর বুঝি নাহি পারি।
এইখানে এই কবরের পাশে আরও কাছে আয় দাদু,
কথা কস নাকো, জাগিয়া উটিবে ঘুম­ভোলা মোর যাদু।
আস্তে আস্তে খুঁড়ে দেখ দেখি কঠিন মাটির তলে,

ওই দূর বনে সন্ধ্যা নামিয়ে ঘন আবিরের রাগে,
অমনি করিয়া লুটায়ে পড়িতে বড় সাধ আজ জাগে।
মজিদ হইতে আযান হাঁকিছে বড় সুকরুণ সুরে,
মোর জীবনের রোজকেয়ামত ভাবিতেছি কত দূরে।
জোড়হাত দাদু মোনাজাত কর, আয় খোদা! রহমান।
ভেস্ত নসিব করিও সকল মৃত্যু­ব্যথিত প্রাণ।
Share on:

গনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভারা ভারা
ধান-কাটা হল সারা,
ভরা নদী ক্ষুরধারা
খরপরশা–
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা॥

একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা—
চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।
পরপারে দেখি আঁকা
তরুছায়ামসী-মাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা
প্রভাতবেলা—
এপারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা॥

গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে!
দেখে যেন মনে হয়, চিনি উহারে।
ভরা পালে চলে যায়,
কোনো দিকে নাহি চায়,
ঢেউগুলি নিরুপায়
ভাঙে দু ধারে—
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে॥

ওগো, তুমি কোথা যাও কোন্‌ বিদেশে?
বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।
যেয়ো যেথা যেতে চাও,
যারে খুশি তারে দাও—
শুধু তুমি নিয়ে যাও
ক্ষণিক হেসে
আমার সোনার ধান কূলেতে এসে॥ 

যত চাও তত লও তরণী-পরে।
আর আছে?— আর নাই, দিয়েছি ভরে॥
এতকাল নদীকূলে
যাহা লয়ে ছিনু ভুলে
সকলি দিলাম তুলে
থরে বিথরে—
এখন আমারে লহো করুণা ক’রে॥

ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই, ছোটো সে তরী
আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।
শ্রাবণগগন ঘিরে
ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শূন্য নদীর তীরে
রহি নু পড়ি—
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী॥
Share on:

তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,
গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়;
মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি
মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি,
মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভাইয়ের স্নেহের ছায়,
তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,

ছোট গাঁওখানি- ছোট নদী চলে, তারি একপাশ দিয়া,
কালো জল তার মাজিয়াছে কেবা কাকের চক্ষু নিয়া;
ঘাটের কিনারে আছে বাঁধা তরী
পারের খবর টানাটানি করি;
বিনাসুতি মালা গাথিছে নিতুই এপার ওপার দিয়া;
বাঁকা ফাঁদ পেতে টানিয়া আনিছে দুইটি তটের হিয়া।

তুমি যাবে ভাই- যাবে মোর সাথে, ছোট সে কাজল গাঁয়,
গলাগলি ধরি কলা বন; যেন ঘিরিয়া রয়েছে তায়।
সরু পথ খানি সুতায় বাঁধিয়া
দূর পথিকেরে আনিছে টানিয়া,
বনের হাওয়ায়, গাছের ছায়ায়, ধরিয়া রাখিবে তায়,
বুকখানি তার ভরে দেবে বুঝি, মায়া আর মমতায়!


তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে – নরম ঘাসের পাতে
চম্বন রাখি অধরখানিতে মেজে লয়ো নিরালাতে।
তেলাকুচা – লতা গলায় পরিয়া
মেঠো ফুলে নিও আঁচল ভরিয়া,
হেথায় সেথায় ভাব করো তুমি বুনো পাখিদের সাথে,
তোমার গায়ের রংখানি তুমি দেখিবে তাদের পাতে।

তুমি যদি যাও আমাদের গাঁয়ে, তোমারে সঙ্গে করি
নদীর ওপারে চলে যাই তবে লইয়া ঘাটের তরী।
মাঠের যত না রাখাল ডাকিয়া
তোর সনে দেই মিতালী করিয়া
ঢেলা কুড়িইয়া গড়ি ইমারত সারা দিনমান ধরি,
সত্যিকারের নগর ভুলিয়া নকল নগর গড়ি।

তুমি যদি যাও – দেখিবে সেখানে মটর লতার সনে,
সীম আর সীম – হাত বাড়াইলে মুঠি ভরে সেই খানে।
তুমি যদি যাও সে – সব কুড়ায়ে
নাড়ার আগুনে পোড়ায়ে পোড়ায়ে,
খাব আর যত গেঁয়ো – চাষীদের ডাকিয়া নিমন্ত্রণে,
হাসিয়া হাসিয়া মুঠি মুঠি তাহা বিলাইব দুইজনে।

তুমি যদি যাও – শালুক কুড়ায়ে, খুব – খুব বড় করে,
এমন একটি গাঁথিব মালা যা দেখনি কাহারো করে,
কারেও দেব না, তুমি যদি চাও
আচ্ছা না হয় দিয়ে দেব তাও,
মালাটিরে তুমি রাখিও কিন্তু শক্ত করিয়া ধরে,
ও পাড়ার সব দুষ্ট ছেলেরা নিতে পারে জোর করে;

সন্ধ্যা হইলে ঘরে ফিরে যাব, মা যদি বকিতে চায়,
মতলব কিছু আঁটিব যাহাতে খুশী তারে করা যায়!
লাল আলোয়ানে ঘুঁটে কুড়াইয়া
বেঁধে নিয়ে যাব মাথায় করিয়া
এত ঘুষ পেয়ে যদি বা তাহার মন না উঠিতে চায়,
বলিব – কালিকে মটরের শাক এনে দেব বহু তায়।

খুব ভোর ক’রে উঠিতে হইবে, সূয্যি উঠারও আগে,
কারেও ক’বি না, দেখিস্ পায়ের শব্দে কেহ না জাগে
রেল সড়কের ছোট খাদ ভরে
ডানকিনে মাছ কিলবিল করে;
কাদার বাঁধন গাঁথি মাঝামাঝি জল সেঁচে আগে ভাগে
সব মাছগুলো কুড়ায়ে আনিব কাহারো জানার আগে।

ভর দুপুরেতে এক রাশ কাঁদা আর এক রাশ মাছ,
কাপড়ে জড়ায়ে ফিরিয়া আসিব আপন বাড়ির কাছ।
ওরে মুখ – পোড়া ওরে বাঁদর।
গালি – ভরা মার অমনি আদর,
কতদিন আমি শুনি নারে ভাই আমার মায়ের পাছ;
যাবি তুই ভাই, আমাদের গাঁয়ে যেথা ঘন কালো গাছ।

যাবি তুই ভাই, যাবি মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়।
ঘন কালো বন – মায়া মমতায় বেঁধেছে বনের বায়।
গাছের ছায়ায় বনের লতায়
মোর শিশুকাল লুকায়েছে হায়!
আজি সে – সব সরায়ে সরায়ে খুজিয়া লইব তায়,
যাবি তুই ভাই, যাবি মোর সাথে আমাদের ছোট গায়।

তোরে নিয়ে যাব আমাদের গাঁয়ে ঘন-পল্লব তলে
লুকায়ে থাকিস, খুজে যেন কেহ পায় না কোনই বলে।
মেঠো কোন ফুল কুড়াইতে যেয়ে,
হারাইয়া যাস পথ নাহি পেয়ে;
অলস দেহটি মাটিতে বিছায়ে ঘুমাস সন্ধ্যা হলে,
সারা গাঁও আমি খুজিয়া ফিরিব তোরি নাম বলে বলে।
Share on:

দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ি ; বেলা দ্বিপ্রহর ;
হেমন্তের রৌদ্র ক্রমে হতেছে প্রখর ।
জনশূন্য পল্লিপথে ধূলি উড়ে যায়
মধ্যাহ্ন-বাতাসে ; স্নিগ্ধ অশত্থের ছায়
ক্লান্ত বৃদ্ধা ভিখারিণী জীর্ণ বস্ত্র পাতি
ঘুমায়ে পড়েছে ; যেন রৌদ্রময়ী রাতি
ঝাঁ ঝাঁ করে চারি দিকে নিস্তব্ধ নিঃঝুম —
শুধু মোর ঘরে নাহি বিশ্রামের ঘুম ।
গিয়েছে আশ্বিন — পূজার ছুটির শেষে
ফিরে যেতে হবে আজি বহুদূরদেশে
সেই কর্মস্থানে । ভৃত্যগণ ব্যস্ত হয়ে
বাঁধিছে জিনিসপত্র দড়াদড়ি লয়ে ,
হাঁকাহাঁকি ডাকাডাকি এ-ঘরে ও-ঘরে ।
ঘরের গৃহিণী , চক্ষু ছলছল করে ,
ব্যথিছে বক্ষের কাছে পাষাণের ভার ,
তবুও সময় তার নাহি কাঁদিবার
একদণ্ড তরে ; বিদায়ের আয়োজনে
ব্যস্ত হয়ে ফিরে ; যথেষ্ট না হয় মনে
যত বাড়ে বোঝা । আমি বলি , ‘ এ কী কাণ্ড!
এত ঘট এত পট হাঁড়ি সরা ভাণ্ড
বোতল বিছানা বাক্স রাজ্যের বোঝাই
কী করিব লয়ে কিছু এর রেখে যাই
কিছু লই সাথে । ‘

সে কথায় কর্ণপাত
নাহি করে কোনো জন । ‘ কী জানি দৈবাৎ
এটা ওটা আবশ্যক যদি হয় শেষে
তখন কোথায় পাবে বিভুঁই বিদেশে ?
সোনামুগ সরু চাল সুপারি ও পান ;
ও হাঁড়িতে ঢাকা আছে দুই-চারিখান
গুড়ের পাটালি ; কিছু ঝুনা নারিকেল ;
দুই ভাণ্ড ভালো রাই-সরিষার তেল ;
আমসত্ত্ব আমচুর ; সের দুই দুধ —
এই-সব শিশি কৌটা ওষুধবিষুধ ।
মিষ্টান্ন রহিল কিছু হাঁড়ির ভিতরে ,
মাথা খাও , ভুলিয়ো না , খেয়ো মনে করে । ‘
বুঝিনু যুক্তির কথা বৃথা বাক্যব্যয় ।
বোঝাই হইল উঁচু পর্বতের ন্যায় ।
তাকানু ঘড়ির পানে , তার পরে ফিরে
চাহিনু প্রিয়ার মুখে ; কহিলাম ধীরে ,
‘ তবে আসি ‘ । অমনি ফিরায়ে মুখখানি
নতশিরে চক্ষু- ‘ পরে বস্ত্রাঞ্চল টানি
অমঙ্গল অশ্রুজল করিল গোপন ।

বাহিরে দ্বারের কাছে বসি অন্যমন
কন্যা মোর চারি বছরের । এতক্ষণ
অন্য দিনে হয়ে যেত স্নান সমাপন ,
দুটি অন্ন মুখে না তুলিতে আঁখিপাতা
মুদিয়া আসিত ঘুমে ; আজি তার মাতা
দেখে নাই তারে ; এত বেলা হয়ে যায়
নাই স্নানাহার । এতক্ষণ ছায়াপ্রায়
ফিরিতেছিল সে মোর কাছে কাছে ঘেঁষে ,
চাহিয়া দেখিতেছিল মৌন নির্নিমেষে
বিদায়ের আয়োজন । শ্রান্তদেহে এবে
বাহিরের দ্বারপ্রান্তে কী জানি কী ভেবে
চুপিচাপি বসে ছিল । কহিনু যখন
‘ মা গো , আসি ‘ সে কহিল বিষণ্ন-নয়ন
ম্লান মুখে , ‘ যেতে আমি দিব না তোমায় । ‘
যেখানে আছিল বসে রহিল সেথায় ,
ধরিল না বাহু মোর , রুধিল না দ্বার ,
শুধু নিজ হৃদয়ের স্নেহ-অধিকার
প্রচারিল — ‘ যেতে আমি দিব না তোমায় ‘ ।
তবুও সময় হল শেষ , তবু হায়
যেতে দিতে হল ।

ওরে মোর মূঢ় মেয়ে ,
কে রে তুই , কোথা হতে কী শকতি পেয়ে
কহিলি এমন কথা , এত স্পর্ধাভরে —
‘ যেতে আমি দিব না তোমায় ‘ ? চরাচরে
কাহারে রাখিবি ধরে দুটি ছোটো হাতে
গরবিনী , সংগ্রাম করিবি কার সাথে
বসি গৃহদ্বারপ্রান্তে শ্রান্ত ক্ষুদ্র দেহ
শুধু লয়ে ওইটুকু বুকভরা স্নেহ ।
ব্যথিত হৃদয় হতে বহু ভয়ে লাজে
মর্মের প্রার্থনা শুধু ব্যক্ত করা সাজে
এ জগতে , শুধু বলে রাখা ‘ যেতে দিতে
ইচ্ছা নাহি ‘ । হেন কথা কে পারে বলিতে
‘ যেতে নাহি দিব ‘ ! শুনি তোর শিশুমুখে
স্নেহের প্রবল গর্ববাণী , সকৌতুকে
হাসিয়া সংসার টেনে নিয়ে গেল মোরে ,
তুই শুধু পরাভূত চোখে জল ভরে
দুয়ারে রহিলি বসে ছবির মতন ,
আমি দেখে চলে এনু মুছিয়া নয়ন ।

চলিতে চলিতে পথে হেরি দুই ধারে
শরতের শস্যক্ষেত্র নত শস্যভারে
রৌদ্র পোহাইছে । তরুশ্রেণী উদাসীন
রাজপথপাশে , চেয়ে আছে সারাদিন
আপন ছায়ার পানে । বহে খরবেগ
শরতের ভরা গঙ্গা । শুভ্র খণ্ডমেঘ
মাতৃদুগ্ধ পরিতৃপ্ত সুখনিদ্রারত
সদ্যোজাত সুকুমার গোবৎসের মতো
নীলাম্বরে শুয়ে । দীপ্ত রৌদ্রে অনাবৃত
যুগ-যুগান্তরক্লান্ত দিগন্তবিস্তৃত
ধরণীর পানে চেয়ে ফেলিনু নিশ্বাস ।

কী গভীর দুঃখে মগ্ন সমস্ত আকাশ ,
সমস্ত পৃথিবী । চলিতেছি যতদূর
শুনিতেছি একমাত্র মর্মান্তিক সুর
‘ যেতে আমি দিব না তোমায় ‘ । ধরণীর
প্রান্ত হতে নীলাভ্রের সর্বপ্রান্ততীর
ধ্বনিতেছে চিরকাল অনাদ্যন্ত রবে ,
‘ যেতে নাহি দিব । যেতে নাহি দিব । ‘ সবে
কহে ‘ যেতে নাহি দিব ‘ । তৃণ ক্ষুদ্র অতি
তারেও বাঁধিয়া বক্ষে মাতা বসুমতী
কহিছেন প্রাণপণে ‘ যেতে নাহি দিব ‘ ।
আয়ুক্ষীণ দীপমুখে শিখা নিব-নিব ,
আঁধারের গ্রাস হতে কে টানিছে তারে
কহিতেছে শত বার ‘ যেতে দিব না রে ‘ ।
এ অনন্ত চরাচরে স্বর্গমর্ত ছেয়ে
সব চেয়ে পুরাতন কথা , সব চেয়ে
গভীর ক্রন্দন — ‘ যেতে নাহি দিব ‘ । হায় ,
তবু যেতে দিতে হয় , তবু চলে যায় ।
চলিতেছে এমনি অনাদি কাল হতে ।
প্রলয়সমুদ্রবাহী সৃজনের স্রোতে
প্রসারিত-ব্যগ্র-বাহু জ্বলন্ত-আঁখিতে
‘ দিব না দিব না যেতে ‘ ডাকিতে ডাকিতে
হু হু করে তীব্রবেগে চলে যায় সবে
পূর্ণ করি বিশ্বতট আর্ত কলরবে ।
সম্মুখ-ঊর্মিরে ডাকে পশ্চাতের ঢেউ
‘ দিব না দিব না যেতে ‘ — নাহি শুনে কেউ
নাহি কোনো সাড়া ।

চারি দিক হতে আজি
অবিশ্রাম কর্ণে মোর উঠিতেছে বাজি
সেই বিশ্ব-মর্মভেদী করুণ ক্রন্দন
মোর কন্যাকণ্ঠস্বরে ; শিশুর মতন
বিশ্বের অবোধ বাণী । চিরকাল ধরে
যাহা পায় তাই সে হারায় , তবু তো রে
শিথিল হল না মুষ্টি , তবু অবিরত
সেই চারি বৎসরের কন্যাটির মতো
অক্ষুণ্ন প্রেমের গর্বে কহিছে সে ডাকি
‘ যেতে নাহি দিব ‘ । ম্লান মুখ , অশ্রু-আঁখি ,
দণ্ডে দণ্ডে পলে পলে টুটিছে গরব ,
তবু প্রেম কিছুতে না মানে পরাভব ,
তবু বিদ্রোহের ভাবে রুদ্ধ কণ্ঠে কয়
‘ যেতে নাহি দিব ‘ । যত বার পরাজয়
তত বার কহে , ‘ আমি ভালোবাসি যারে
সে কি কভু আমা হতে দূরে যেতে পারে ।
আমার আকাঙ্ক্ষা-সম এমন আকুল ,
এমন সকল-বাড়া , এমন অকূল ,
এমন প্রবল বিশ্বে কিছু আছে আর! ‘
এত বলি দর্পভরে করে সে প্রচার
‘ যেতে নাহি দিব ‘ । তখনি দেখিতে পায় ,
শুষ্ক তুচ্ছ ধূলি-সম উড়ে চলে যায়
একটি নিশ্বাসে তার আদরের ধন ;
অশ্রুজলে ভেসে যায় দুইটি নয়ন ,
ছিন্নমূল তরু-সম পড়ে পৃথ্বীতলে
হতগর্ব নতশির । তবু প্রেম বলে ,
‘ সত্যভঙ্গ হবে না বিধির । আমি তাঁর
পেয়েছি স্বাক্ষর-দেওয়া মহা অঙ্গীকার
চির-অধিকার-লিপি । ‘ — তাই স্ফীত বুকে
সর্বশক্তি মরণের মুখের সম্মুখে
দাঁড়াইয়া সুকুমার ক্ষীণ তনুলতা
বলে , ‘ মৃত্যু তুমি নাই । — হেন গর্বকথা!
মৃত্যু হাসে বসি । মরণপীড়িত সেই
চিরজীবী প্রেম আচ্ছন্ন করেছে এই
অনন্ত সংসার , বিষণ্ন নয়ন- ‘ পরে
অশ্রুবাষ্প-সম , ব্যাকুল আশঙ্কাভরে
চির-কম্পমান । আশাহীন শ্রান্ত আশা
টানিয়া রেখেছে এক বিষাদ-কুয়াশা
বিশ্বময় । আজি যেন পড়িছে নয়নে —
দুখানি অবোধ বাহু বিফল বাঁধনে
জড়ায়ে পড়িয়া আছে নিখিলেরে ঘিরে ,
স্তব্ধ সকাতর । চঞ্চল স্রোতের নীরে
পড়ে আছে একখানি অচঞ্চল ছায়া —
অশ্রুবৃষ্টিভরা কোন্ মেঘের সে মায়া ।
তাই আজি শুনিতেছি তরুরক মর্মরে
এত ব্যাকুলতা ; অলস ঔদাস্যভরে
মধ্যাহ্নের তপ্ত বায়ু মিছে খেলা করে
শুষ্ক পত্র লয়ে ; বেলা ধীরে যায় চলে
ছায়া দীর্ঘতর করি অশত্থের তলে ।
মেঠো সুরে কাঁদে যেন অনন্তের বাঁশি
বিশ্বের প্রান্তর-মাঝে ; শুনিয়া উদাসী
বসুন্ধরা বসিয়া আছেন এলোচুলে
দূরব্যাপী শস্যক্ষেত্রে জাহ্নবীর কূলে
একখানি রৌদ্রপীত হিরণ্য-অঞ্চল
বক্ষে টানি দিয়া ; স্থির নয়নযুগল
দূর নীলাম্বরে মগ্ন ; মুখে নাহি বাণী ।
দেখিলাম তাঁর সেই ম্লান মুখখানি
সেই দ্বারপ্রান্তে লীন , স্তব্ধ মর্মাহত
মোর চারি বৎসরের কন্যাটির মতো ।
Share on:

যাবার দিনে এই কথাটি বলে যেন যাই –
যা দেখেছি, যা পেয়েছি, তুলনা তার নাই।
এই জ্যোতিসমুদ্র মাঝে       যে শতদল পদ্ম রাজে
তারি মধু পান করেছি, ধন্য আমি তাই।
যাবার দিনে এই কথাটি জানিয়ে যেন যাই।।

বিশ্বরূপের খেলাঘরে কতই গেলেম খেলে,
অপরূপকে দেখে গেলেম দুটি নয়ন মেলে।
পরশ যাঁরে যায় না করা     সকল দেহে দিলেন ধরা,
এইখানে শেষ করেন যদি শেষ করে দিন তাই –
যাবার বেলা এই কথাটি জানিয়ে যেন যাই।।
Share on:

তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি
শত রূপে শত বার
জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।
চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়
গাঁথিয়াছে গীতহার,
কত রূপ ধরে পরেছ গলায়,
নিয়েছ সে উপহার
জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।


যত শুনি সেই অতীত কাহিনী,
প্রাচীন প্রেমের ব্যথা,
অতি পুরাতন বিরহমিলনকথা,
অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে
দেখা দেয় অবশেষে
কালের তিমিররজনী ভেদিয়া
তোমারি মুরতি এসে,
চিরস্মৃতিময়ী ধ্রুবতারকার বেশে।

আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি
যুগল প্রেমের স্রোতে
অনাদিকালের হৃদয়-উৎস হতে।
আমরা দুজনে করিয়াছি খেলা
কোটি প্রেমিকের মাঝে
বিরহবিধুর নয়নসলিলে,
মিলনমধুর লাজে—
পুরাতন প্রেম নিত্যনূতন সাজে।

আজি সেই চিরদিবসের প্রেম
অবসান লভিয়াছে
রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে।
নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ,
নিখিল প্রাণের প্রীতি,
একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে
সকল প্রেমের স্মৃতি—
সকল কালের সকল কবির গীতি।
Share on:

বাবা নাকি বই লেখে সব নিজে।
কিছুই বোঝা যায় না লেখেন কী যে!
সেদিন পড়ে শোনাচ্ছিলেন তোরে,
বুঝেছিলি? – বল্‌ মা, সত্যি করে।
এমন লেখায় তবে
বল্‌ দেখি কী হবে।।
তোর মুখে মা, যেমন কথা শুনি
তেমন কেন লেখেন নাকো উনি।
ঠাকুরমা কি বাবাকে কক্‌খনো
রাজার কথা শোনায় নিকো কোনো?
সে-সব কথাগুলি
গেছেন বুঝি ভুলি?
স্নান করতে বেলা হল দেখে
তুমি কেবল যাও, মা, ডেকে ডেকে –
খাবার নিয়ে তুমি বসেই থাকো,
সে কথা তাঁর মনেই থাকে নাকো।
করেন সারা বেলা
লেখা-লেখা খেলা।।
বাবার ঘরে আমি খেলতে গেলে
তুমি আমায় বল ‘দুষ্টু’ ছেলে!
বকো আমায় গোল করলে পরে,
‘দেখছিস নে লিখছে বাবা ঘরে!’
বল্‌ তো, সত্যি বল্‌ ,
লিখে কী হয় ফল।।
আমি যখন বাবার খাতা টেনে
লিখি বসে দোয়াত কলম এনে –
ক খ গ ঘ ঙ হ য ব র,
আমার বেলা কেন, মা, রাগ কর!
বাবা যখন লেখে
কথা কও না দেখে।।
বড়ো বড়ো রুল-কাটা কাগোজ
নষ্ট বাবা করেন না কি রোজ?
আমি যদি নৌকো করতে চাই
অম্‌নি বল ‘নষ্ট করতে নাই’।
সাদা কাগজে কালো
করলে বুঝি ভালো ?
Share on:

মেঘের পরে মেঘ জমেছে,
আঁধার করে আসে-
আমায় কেন বসিয়ে রাখ
একা দ্বারের পাশে।
কাজের দিনে নানা কাজে
থাকি নানা লোকের মাঝে,
আজ আমি যে বসে আছি
তোমারই আশ্বাসে।
আমায় কেন বসিয়ে রাখ
একা দ্বারের পাশে।
তুমি যদি না দেখা দাও
কর আমায় হেলা,
কেমন করে কাটে আমার
এমন বাদল-বেলা।
দূরের পানে মেলে আঁখি
কেবল আমি চেয়ে থাকি,
পরাণ আমার কেঁদে বেড়ায়
দুরন্ত বাতাসে।
আমায় কেন বসিয়ে রাখ
একা দ্বারের পাশে।
Share on:

হৃদয়-পানে হৃদয় টানে, নয়ন-পানে নয়ন ছোটে-
দুটি প্রাণীর কাহিনীটা এইটুকু বৈ নয়কো মোটে।
শুক্লসন্ধ্যা চৈত্রমাসে হেনার গন্ধ হাওয়ায় ভাসে,
আমার বাঁশি লুটায় ভূমে, তোমার কোলে ফুলের পুঁজি-
তোমার আমার এই-যে প্রণয় নিতান্তই এ সোজাসুজি।।
বসন্তীরঙ বসনখানি নেশার মতো চক্ষে ধরে,
তোমার গাঁথা যূথীর মালা স্তুতির মতো বক্ষে পড়ে;
একটু দেওয়া, একটু রাখা, একটু প্রকাশ, একটু ঢাকা,
একটু হাসি, একটু শরম- দুজনের এই বোঝাবুঝি
তোমার আমার এই-যে প্রণয় নিতান্তই এ সোজাসুজি।।
মধুমাসের মিলন-মাঝে মহান্ কোনো রহস্য নেই,
অসীম কোনো অবাধ কথা যায় না বেধে মনে-মনেই।
আমাদের এই সুখের পিছু ছায়ার মত নাইকো কিছু,
দোঁহার মুখে দোঁহে চেয়ে নাই হৃদয়ের খোঁজাখুঁজি।
মধুমাসে মোদের মিলন নিতান্তই এ সোজাসুজি।।
ভাষার মধ্যে তলিয়ে গিয়ে খুঁজি নে, ভাই, ভাষাতীত।
আকাশ-পানে বাহু তুলে চাহি নে, ভাই, আশাতীত!
যেটুকু দিই যেটুকু পাই তাহার বেশি আর-কিছু নাই-
সুখের বক্ষ চেপে ধরে করি নে কেউ যোঝাযুঝি।
মধুমাসে মোদের মিলন নিতান্তই এ সোজাসুজি।।
শুনেছিনু প্রেমের পাথার, নাইকো তাহার কোন দিশা-
শুনেছিনু প্রেমের মধ্যে অসীম ক্ষুধা, অসীম তৃষা।
বীণার তন্ত্রী কঠিন টানে ছিঁড়ে পড়ে প্রমের তানে,
শুনেছিনু প্রেমের কুঞ্জে অনেক বাঁকা গলিঘুঁজি।
আমাদের এই দোঁহার মিলন নিতান্তই এ সোজাসুজি।।
Share on:

আজিকে হয়েছে শান্তি ,
জীবনের ভুলভ্রান্তি
      সব গেছে চুকে ।
রাত্রিদিন ধুক্‌ধুক্‌
তরঙ্গিত দুঃখসুখ
      থামিয়াছে বুকে ।
যত কিছু ভালোমন্দ
যত কিছু দ্বিধাদ্বন্দ্ব
      কিছু আর নাই ।
বলো শান্তি , বলো শান্তি ,
দেহ-সাথে সব ক্লান্তি
       হয়ে যাক ছাই ।

গুঞ্জরি করুক তান
ধীরে ধীরে করো গান
      বসিয়া শিয়রে ।
যদি কোথা থাকে লেশ
জীবনস্বপ্নের শেষ
      তাও যাক মরে ।
তুলিয়া অঞ্চলখানি
মুখ- ' পরে দাও টানি ,
      ঢেকে দাও দেহ ।
করুণ মরণ যথা
ঢাকিয়াছে সব ব্যথা
       সকল সন্দেহ ।

বিশ্বের আলোক যত
দিগ্‌বিদিকে অবিরত
       যাইতেছে বয়ে ,
শুধু ওই আঁখি- ' পরে
নামে তাহা স্নেহভরে
       অন্ধকার হয়ে ।
জগতের তন্ত্রীরাজি
দিনে উচ্চে উঠে বাজি ,
      রাত্রে চুপে চুপে
সে শব্দ তাহার ‘ পরে
চুম্বনের মতো পড়ে
      নীরবতারূপে ।

মিছে আনিয়াছ আজি
বসন্তকুসুমরাজি
       দিতে উপহার ।
নীরবে আকুল চোখে
ফেলিতেছ বৃথা শোকে
       নয়নাশ্রুধার ।
ছিলে যারা রোষভরে
বৃথা এতদিন পরে
       করিছ মার্জনা ।
অসীম নিস্তব্ধ দেশে
চিররাত্রি পেয়েছে সে
      অনন্ত সান্ত্বনা ।

গিয়েছে কি আছে বসে
জাগিল কি ঘুমাল সে
      কে দিবে উত্তর ।
পৃথিবীর শ্রান্তি তারে
ত্যজিল কি একেবারে
      জীবনের জ্বর!
এখনি কি দুঃখসুখে
কর্মপথ-অভিমুখে
      চলেছে আবার ।
অস্তিত্বের চক্রতলে
একবার বাঁধা প ' লে
      পায় কি নিস্তার ।

বসিয়া আপন দ্বারে
ভালোমন্দ বলো তারে
      যাহা ইচ্ছা তাই ।
অনন্ত জনমমাঝে
গেছে সে অনন্ত কাজে ,
       সে আর সে নাই ।
আর পরিচিত মুখে
তোমাদের দুখে সুখে
      আসিবে না ফিরে ।
তবে তার কথা থাক্‌ ,
যে গেছে সে চলে যাক
       বিস্মৃতির তীরে ।

জানি না কিসের তরে
যে যাহার কাজ করে
      সংসারে আসিয়া ,
ভালোমন্দ শেষ করি
যায় জীর্ণ জন্মতরী
      কোথায় ভাসিয়া ।
দিয়ে যায় যত যাহা
রাখো তাহা ফেলো তাহা
      যা ইচ্ছা তোমার ।
সে তো নহে বেচাকেনা —
ফিরিবে না , ফেরাবে না
      জন্ম-উপহার ।

কেন এই আনাগোনা ,
কেন মিছে দেখাশোনা
     দু-দিনের তরে ,
কেন বুকভরা আশা ,
কেন এত ভালোবাসা
      অন্তরে অন্তরে ,
আয়ু যার এতটুক ,
এত দুঃখ এত সুখ
      কেন তার মাঝে ,
অকস্মাৎ এ সংসারে
কে বাঁধিয়া দিল তারে
       শত লক্ষ কাজে —

হেথায় যে অসম্পূর্ণ ,
সহস্র আঘাতে চূর্ণ
       বিদীর্ণ বিকৃত ,
কোথাও কি একবার
সম্পূর্ণতা আছে তার
      জীবিত কি মৃত ,
জীবনে যা প্রতিদিন
ছিল মিথ্যা অর্থহীন
      ছিন্ন ছড়াছড়ি
মৃত্যু কি ভরিয়া সাজি
তারে গাঁথিয়াছে আজি
      অর্থপূর্ণ করি —

হেথা যারে মনে হয়
শুধু বিফলতাময়
      অনিত্য চঞ্চল
সেথায় কি চুপে চুপে
অপূর্ব নূতন রূপে
      হয় সে সফল —
চিরকাল এই-সব
রহস্য আছে নীরব
       রুদ্ধ-ওষ্ঠাধর ।
জন্মান্তের নবপ্রাতে
সে হয়তো আপনাতে
      পেয়েছে উত্তর ।

সে হয়তো দেখিয়াছে
পড়ে যাহা ছিল পাছে
       আজি তাহা আগে ,
ছোটো যাহা চিরদিন
ছিল অন্ধকারে লীন
      বড়ো হয়ে জাগে ।
যেথায় ঘৃণার সাথে
মানুষ আপন হাতে
       লেপিয়াছে কালি
নূতন নিয়মে সেথা
জ্যোতির্ময় উজ্জ্বলতা
       কে দিয়াছে জ্বালি ।

কত শিক্ষা পৃথিবীর
খসে পড়ে জীর্ণচীর
      জীবনের সনে ,
সংসারের লজ্জাভয়
নিমেষেতে দগ্ধ হয়
      চিতাহুতাশনে ।
সকল অভ্যাস-ছাড়া
সর্ব-আবরণ-হারা
      সদ্যশিশুসম
নগ্নমূর্তি মরণের
নিষ্কলঙ্ক চরণের
      সম্মুখে প্রণমো ।

আপন মনের মতো
সংকীর্ণ বিচার যত
       রেখে দাও আজ ।
ভুলে যাও কিছুক্ষণ
প্রত্যহের আয়োজন ,
      সংসারের কাজ ।
আজি ক্ষণেকের তরে
বসি বাতায়ন- ' পরে
      বাহিরেতে চাহো ।
অসীম আকাশ হতে
বহিয়া আসুক স্রোতে
        বৃহৎ প্রবাহ ।

উঠিছে ঝিল্লির গান ,
তরুর মর্মরতান ,
      নদীকলস্বর —
প্রহরের আনাগোনা
যেন রাত্রে যায় শোনা
      আকাশের'পর ।
উঠিতেছে চরাচরে
অনাদি অনন্ত স্বরে
       সংগীত উদার —
সে নিত্য-গানের সনে
মিশাইয়া লহো মনে
       জীবন তাহার ।

ব্যাপিয়া সমস্ত বিশ্বে
দেখো তারে সর্বদৃশ্যে
       বৃহৎ করিয়া ।
জীবনের ধূলি ধুয়ে
দেখো তারে দূরে থুয়ে
      সম্মুখে ধরিয়া ।
পলে পলে দণ্ডে দণ্ডে
ভাগ করি খণ্ডে খণ্ডে
      মাপিয়ো না তারে ।
থাক্‌ তব ক্ষুদ্র মাপ
ক্ষুদ্র পুণ্য ক্ষুদ্র পাপ
       সংসারের পারে ।

আজ বাদে কাল যারে
ভুলে যাবে একেবারে
       পরের মতন
তারে লয়ে আজি কেন
বিচার-বিরোধ হেন ,
      এত আলাপন ।
যে বিশ্ব কোলের'পরে
চিরদিবসের তরে
      তুলে নিল তারে
তার মুখে শব্দ নাহি ,
প্রশান্ত সে আছে চাহি
       ঢাকি আপনারে ।

বৃথা তারে প্রশ্ন করি ,
বৃথা তার পায়ে ধরি ,
      বৃথা মরি কেঁদে ,
খুঁজে ফিরি অশ্রুজলে —
কোন্‌ অঞ্চলের তলে
      নিয়েছে সে বেঁধে ।
ছুটিয়া মৃত্যুর পিছে ,
ফিরে নিতে চাহি মিছে ,
      সে কি আমাদের ?
পলেক বিচ্ছেদে হায়
তখনি তো বুঝা যায়
      সে যে অনন্তের ।

চক্ষের আড়ালে তাই
কত ভয় সংখ্যা নাই ,
       সহস্র ভাবনা ।
মুহূর্ত মিলন হলে
টেনে নিই বুকে কোলে ,
       অতৃপ্ত কামনা ।
পার্শ্বে বসে ধরি মুঠি ,
শব্দমাত্রে কেঁপে উঠি ,
      চাহি চারিভিতে ,
অনন্তের ধনটিরে
আপনার বুক চিরে
      চাহি লুকাইতে ।

হায় রে নির্বোধ নর ,
কোথা তোর আছে ঘর ,
       কোথা তোর স্থান ।
শুধু তোর ওইটুকু
অতিশয় ক্ষুদ্র বুক
      ভয়ে কম্পমান ।
ঊর্ধ্বে ওই দেখ্‌ চেয়ে
সমস্ত আকাশ ছেয়ে
      অনন্তের দেশ —
সে যখন এক ধারে
লুকায়ে রাখিবে তারে
      পাবি কি উদ্দেশ ?

ওই হেরো সীমাহারা
গগনেতে গ্রহতারা
      অসংখ্য জগৎ ,
ওরি মাঝে পরিভ্রান্ত
হয়তো সে একা পান্থ
      খুঁজিতেছে পথ ।
ওই দূর-দূরান্তরে
অজ্ঞাত ভুবন- ' পরে
       কভু কোনোখানে
আর কি গো দেখা হবে ,
আর কি সে কথা কবে ,
     কেহ নাহি জানে ।

যা হবার তাই হোক ,
ঘুচে যাক সর্ব শোক ,
       সর্ব মরীচিকা ।
নিবে যাক চিরদিন
পরিশ্রান্ত পরিক্ষীণ
      মর্তজন্মশিখা ।
সব তর্ক হোক শেষ ,
সব রাগ সব দ্বেষ ,
      সকল বালাই ।
বলো শান্তি , বলো শান্তি ,
দেহ-সাথে সব ক্লান্তি
      পুড়ে হোক ছাই ।
Share on:

স্বপ্ন দেখেছেন রাত্রে হবুচন্দ্র ভূপ —
অর্থ তার ভাবি ভাবি গবুচন্দ্র চুপ।
শিয়রে বসিয়ে যেন তিনটে বাদঁরে
উকুন বাছিতেছিল পরম আদরে —
একটু নড়িতে গেলে গালে মারে চড় ,
চোখে মুখে লাগে তার নখের আঁচড় ।
সহসা মিলালো তারা , এল এক বেদে,
‘পাখি উড়ে গেছে ‘ ব‘লে মরে কেঁদে কেঁদে।
সম্মুখে রাজারে দেখি তুলি নিল ঘাড়ে ,
ঝুলায়ে বসায়ে দিল উচু এক দাঁড়ে।
নীচেতে দাঁড়ায়ে এক বুড়ি থুড়থুড়ি
হাসিয়া পায়ের তলে দেয় সুড়সুড়ি।
রাজা বলে ‘কী আপদ ‘ কেহ নাহি ছাড়ে—
পা দুটা তুলিতে চাহে , তুলিতে না পারে ।
পাখির মত রাজা করে ঝটপট্
বেদে কানে কানে বলে —- হিং টিং ছট্।
স্বপ্ন মঙ্গলের কথা অমৃতসমান,
গৌড়ানন্দ কবি ভনে , শুনে পুণ্যবান।।
হবুপুর রাজ্যে আজ দিন ছয় –সাত
চোখে কারো নিদ্রা নাই, পেটে নাই ভাত।
শীর্ণ গালে হাত দিয়ে নত করি শির
রাজ্যসুদ্ধ বালকবৃদ্ধ ভেবেই অস্থির ।
ছেলেরা ভুলেছে খেলা, পন্ডিতেরা পাঠ,
মেয়েরা করেছে চুপ এতই বিভ্রাট।
সারি সারি বসে গেছে, কথা নাহি মুখে,
চিন্তা যত ভারী হয় মাথা পড়ে ঝুঁকে ।
ভুঁইফোঁড় তত্ত্ব যেন ভূমিতলে খোঁজে,
সবে যেন বসে গেছে নিরাকার ভোজে।
মাঝে মঝে দীর্ঘশ্বাস ছাড়িয়া উৎকট
হঠাৎ ফুকারি উঠে-হিং টিং ছট্।
স্বপ্নমঙ্গলের কথা অমৃতসমান,
গৌড়ানন্দ কবি ভনে, শুনে পুণ্যবান।।
চারি দিক হতে এল পন্ডিতের দল—
অযোধ্যা কনোজ কাঞ্চী মগধ কোশল।
উজ্জয়িনী হতে এল বুধ-অবতংস
কালিদাস কবীন্দ্রের ভাগিনেয় বংশ।
মোটা মোটা পুঁথি লয়ে উলটায় পাতা,
ঘন ঘন নাড়ে বসি টিকিসুদ্ধ মাথা।
বড়ো বড়ো মস্তকের পাকা শস্যখেত
বাতাসে দুলিছে যেন শীর্ষ- সমেত।
কেহ শ্রুতি, কেহ স্মৃতি, কেহ-বা পুরাণ,
কেহ ব্যাকারণ দেখে, কেহ অভিধান ।
কোনোখানে নাহি পায় অর্থ কোনোরূপ,
বেড়ে ওঠে অনুস্বর-বিসর্গের স্তূপ।
চুপ করে বসে থাকে, বিষম সংকট,
থেকে থেকে হেঁকে ওঠে -হিং টিং ছট্।
স্বপ্ন মঙ্গলের কথা অমৃতসমান,
গৌড়ানন্দ কবি ভনে, শুনে পুণ্যবান।।
কহিলেন হতাশ্বাস হবুচন্দ্ররাজ,
ম্লেচ্ছদেশে আছে নাকি পন্ডিত সমাজ–
তাহাদের ডেকে আন যে যেখানে আছে,
অর্থ যদি ধরা পড়ে তাহাদের কাছে।‘
কটা-চুল নীলচক্ষু কপিশকপোল
যবন পন্ডিত আসে , বাজে ঢাক ঢোল ॥
গায়ে কলো মোটা মোটা ছাঁটাছোঁটা কুর্তি-
গ্রীষ্ম তাপে উষ্মা বাড়ে, ভারি উগ্রমূর্তি।
ভূমিকা না করি কিছু ঘড়ি খুলি কয়,
‘সতেরো মিনিট মাত্র রয়েছে সময়—-
কথা যদি থাকে কিছু বলো চট্পট্।‘
সভাসুদ্ধ বলি উঠে – হিং টিং ছট্।
স্বপ্ন মঙ্গলের কথা অমৃতসমান ।।
গৌড়ানন্দ কবি ভনে, শুনে পুণ্যবান।।
স্বপ্ন শুনি ম্লেচ্ছমুখ রাঙা টকটকে,
আগুন ছুটিতে চায় মুখে আর চোখে ।
কিন্তু তবু স্বপ্ন ওটা করি অনুমান ,
যদিও রাজার শিরে পেয়েছিল স্থান ।
অর্থ চাই? রাজ কোষে আছে ভূরি ভূরি –
রাজ স্বপ্নে অর্থ নাই যত মাথা খুড়ি ।
নাই অর্থ, কিন্তু তবু কহি অকপট
শুনিতে কী মিষ্ট আহা –হিং টিং ছট্।’
স্বপ্ন মঙ্গলের কথা অমৃতসমান,
গৌড়ানন্দ কবি ভনে, শুনে পুন্যবান।।
শুনিয়া সভাস্থ সবে করে ধিক্-ধিক ,
কোথাকার গন্ডমূ�র্খ পাষন্ড নাস্তিক!
স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন মাত্র মস্তিষ্ক বিকার
এ কথা কেমন করে করিব স্বীকার !
জগৎ বিখ্যাত মোরা ‘ধর্মপ্রাণ‘ জাতি–
স্বপ্ন উড়াইয়ে দিবে! দুপুরে ডাকাতি!
হবুচন্দ্র রাজা কহে পাকালিয়া চোখে,
‘গবুচন্দ্র, এদের উচিত শিক্ষা হোক ।
হেঁটোয় কন্টক দাও , উপরে কন্টক,
ডালকুত্তাদের মাঝে করহ বন্টক‘।
সতেরো মিনিট—কাল না হইতে শেষ
ম্লেচ্ছ পন্ডিতের আর না মিলে উদ্দেশ।
সভাস্থ সবাই ভাসে আনন্দাশ্রুনীরে,
ধর্মরাজ্যে পুনর্বার শান্তি� এল ফিরে।
পন্ডিতেরা মুখচক্ষু করিয়া বিকট
পুনর্বার উচ্চারিল —- হিং টিং ছট্
স্বপ্ন মঙ্গলের কথা অমৃতসমান,
গৌড়ানন্দ কবি ভনে, শুনে পুণ্যবান।।
অতঃপর গৌড় হতে এল হেন বেলা
যবন পন্ডিতদের গুরু মারা চেলা।
নগ্নশির, সজ্জা নাই, লজ্জা নাই ধড়ে—-
কাছা কোঁচা শতবার খ‘সে খ‘সে পড়ে।
অস্তিত্ব আছে না আছে , ক্ষীণখর্ব দেহ,
বাক্য যবে বহিরায় না থাকে সন্দেহ।
এতটুকু যন্ত্র� হতে এত শব্দ হয়
দেখিয়া বিশ্বের লাগে বিষম বিস্ময়।
না জানে অভিবাদন, না পুছে কুশল ,
পিতৃনাম শুধাইলে উদ্যতমুষল।
সগর্বে জিজ্ঞাসা করে, কী লয়ে বিচার!
শুনিলে বলিতে পারি কথা দুই- চার,
ব্যাখ্যায় করিতে পারি উলট্পালট।‘
সমস্বরে কহে সবে –হিং টিং ছট্
স্বপ্ন মঙ্গলের কথা অমৃতসমান ,
গৌড়ানন্দ কবি ভনে, শুনে পুণ্যবান।।
স্বপ্ন কথা শুনি মুখ গম্ভীর করিয়া
কহিল গৌড়ীয় সাধু প্রহর ধরিয়া ,
‘নিতান্ত� সরল অর্থ, অতি পরিস্কার—
বহু পুরাতন ভাব, নব আবিস্কার ।
ত্র্যম্বকের ত্রিয়ন ত্রিকাল ত্রিগুন
শক্তিভেদে ব্যাক্তিভেদ দ্বিগুণ বিগুণ।
বিবর্তন আবর্তন সম্বর্তন আদি
জীবশক্তি শিবশক্তি করে বিসম্বাদী।
আকর্ষন বিকর্ষন পুরুষ প্রকৃতি।
আণব চৌম্বক বলে আকৃতি বিকৃতি।
কুশাগ্রে প্রবহমান জীবাত্মবিদ্যুৎ
ধারণা পরমা শক্তি সেথায় উদ্ভুদ।
ত্রয়ী শক্তি ত্রিস্বরূপে প্রপঞ্চে প্রকট,
সংক্ষেপে বলিতে গেলে—হিং টিং ছট্
স্বপ্নমঙ্গলের কথা অমৃতসমান,
গৌড়ানন্দ কবি ভনে, শুনে পুণ্যবান।।
‘ সাধু সাধু সাধু ‘ রবে কাঁপে চারি ধার–
সবে বলে , ‘পরিস্কার, অতি পরিস্কার!‘
দুর্বোধ যা-কিছু ছিল হয়ে গেল জল,
শ�ন্য আকাশের মতো অত্যন্ত� নির্মল।
হাঁপ ছাড়ি উঠিলেন হবুচন্দ্ররাজ,
আপনার মাথা হতে খুলি লয়ে তাজ
পরাইয়া দিল ক্ষীণ বাঙালির শিরে—
ভারে তার মাথা টুকৃ পড়ে বুঝি ছিড়ে।
বহু দিন পরে আজ চিন্তা গেল ছুটে,
হাবুডুবু হবুরাজ্য নড়িচড়ি ওঠে।
ছেলেরা ধরিল খেলা, বৃদ্ধেরা তামুক-
এক দন্ডে খুলে গেল রমণীর মুখ।
দেশ-জোড়া মাথা-ধরা ছেড়ে গেল চট্,
সবাই বুঝিয়া গেল-হিং টিং ছট্
স্বপ্নমঙ্গলের কথা অমৃতসমান,
গৌড়ানন্দ কবি ভনে, শুনে পুণ্যবান।।
যে শুনিবে এই স্বপ্ন মঙ্গলের কথা
সর্বভ্রম ঘুচে যবে, নহিবে অন্যথা।
বিশ্বে কভূ বিশ্ব ভেবে হবে না ঠকিতে,
সত্যেরে সে মিথ্যা বলি বুঝিবে চকিতে।
যা আছে তা নাই আর নাই যাহা আছে,
এ কথা জাজ্বল্যমান হবে তার কাছে ।
সবাই সরল ভাবে দেখিবে যা-কিছু
সে আপন লেজুড় জুড়িবে তার পিছু।
এসো ভাই, তোল হাই, শুয়ে পড়ো চিত,
অনিশ্চিত এ সংসারে এ কথা নিশ্চিত—
জগতে সকলেই মিথ্যা, সব মায়াময়,
স্বপ্ন শুধু সত্য আর সত্য কিছু নয়।
স্বপ্ন মঙ্গলের কথা অমৃতসমান,
গৌড়ানন্দ কবি ভনে, শুনে পুণ্যবান।
Share on:

আমাকে একটি কথা দাও যা আকাশের মতো
সহজ মহৎ বিশাল,
গভীর; – সমস্ত ক্লান্ত হতাহত গৃহবলিভুকদের রক্তে
মলিন ইতিহাসের অন্তর ধুয়ে চেনা হাতের মতন,
আমি যাকে আবহমান কাল ভালোবেসে এসেছি সেই নারীর।
সেই রাত্রির নক্ষত্রালোকিত নিবিড় বাতাসের মতো:
সেই দিনের – আলোর অন্তহীন এঞ্জিন চঞ্চল ডানার মতন
সেই উজ্জ্বল পাখিনীর – পাখির সমস্ত পিপাসাকে যে
অগ্নির মতো প্রদীপ্ত দেখে অন্তিমশরীরিণী মোমের মতন।
Share on:

আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।
পার হয়ে যায় গোরু, পার হয় গাড়ি,
দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি।

চিক্ চিক্ করে বালি, কোথা নাই কাদা,
একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা।
কিচিমিচি করে সেথা শালিকের ঝাঁক,
রাতে ওঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক।

আর-পারে আমবন তালবন চলে,
গাঁয়ের বামুন পাড়া তারি ছায়াতলে।
তীরে তীরে ছেলে মেয়ে নাইবার কালে
গামছায় জল ভরি গায়ে তারা ঢালে।

সকালে বিকালে কভু নাওয়া হলে পরে
আঁচল ছাঁকিয়া তারা ছোটো মাছ ধরে।
বালি দিয়ে মাজে থালা, ঘটিগুলি মাজে,
বধূরা কাপড় কেচে যায় গৃহকাজে।

আষাঢ়ে বাদল নামে, নদী ভর ভর
মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর।
মহাবেগে কলকল কোলাহল ওঠে,
ঘোলা জলে পাকগুলি ঘুরে ঘুরে ছোটে।
দুই কূলে বনে বনে পড়ে যায় সাড়া,
বরষার উৎসব জেগে ওঠে পাড়া।।
Share on:

আজি হতে শতবর্ষ পরে
কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি
কৌতুহলভরে,
আজি হতে শতবর্ষ পরে!
আজি নব বসন্তের প্রভাতের আনন্দের
লেশমাত্র ভাগ,
আজিকার কোনো ফুল, বিহঙ্গের কোনো গান,
আজিকার কোনো রক্তরাগ-
অনুরাগে সিক্ত করি পারিব কি পাঠাইতে
তোমাদের করে,
আজি হতে শতবর্ষ পরে?

তবু তুমি একবার খুলিয়া দক্ষিণদ্বার
বসি বাতায়নে
সুদূর দিগন্তে চাহি কল্পনায় অবগাহি
ভেবে দেখো মনে-
একদিন শতবর্ষ আগে
চঞ্চল পুলকরাশি কোন্ স্বর্গ হতে ভাসি
নিখিলের মর্মে আসি লাগে,
নবীন ফাল্গুনদিন সকল-বন্ধন-হীন
উন্মত্ত অধীর,
উড়ায়ে চঞ্চল পাখা পুষ্পরেণুগন্ধমাখা
দক্ষিণসমীর
সহসা আসিয়া ত্বরা রাঙায়ে দেয়েছে ধরা
যৌবনের রাগে,
তোমাদের শতবর্ষ আগে।
সেদিন উতলা প্রাণে, হৃদয় মগন গানে,
কবি একা জাগে-
কত কথা পুষ্প প্রায় বিকশি তুলিতে চায়
কত অনুরাগে,
একদিন শতবর্ষ আগে।

আজি হতে শতবর্ষ পরে
এখন করিছে গান সে কোন্ নুতন কবি
তোমাদের ঘরে!
আজিকার বসন্তের আনন্দ-অভিবাদন
পাঠায়ে দিলাম তাঁর করে।
আমার বসন্তগান তোমার বসন্তদিনে
ধ্বনিত হউক ক্ষণতরে-
হৃদয়স্পন্দনে তব, ভ্রমরগুঞ্জনে নব,
পল্লবমর্মরে,
আজি হতে শতবর্ষ পরে।।
Share on:

আমার মাঝে তোমার লীলা হবে,
তাই তো আমি এসেছি এই ভবে।
এই ঘরে সব খুলে যাবে দ্বার,
ঘুচে যাবে সকল অহংকার,
আনন্দময় তোমার এ সংসার
আমার কিছু আর বাকি না রবে।
মরে গিয়ে বাঁচব আমি, তবে
আমার মাঝে তোমার লীলা হবে।
সব বাসনা যাবে আমার থেমে
মিলে গিয়ে তোমারি এক প্রেমে,
দুঃখসুখের বিচিত্র জীবনে
তুমি ছাড়া আর কিছু না রবে।
Share on:

তখন রাত্রি আঁধার হল,
সাঙ্গ হল কাজ –
আমরা মনে ভেবেছিলেম,
আসবে না কেউ আজ |
মোদের গ্রামে দুয়ার যত
রুদ্ধ হল রাতের মত,
দু’এক জনে বলেছিল
“আসবে মহারাজ!”
আমরা হেসে বলেছিলেম
“আসবে না কেউ আজ!”
দ্বারে যেন আঘাত হল
শুনেছিলেম সবে,
আমরা তখন বলেছিলেম
বাতাস বুঝি হবে |
নিবিয়ে প্রদীপ ঘরে ঘরে
শুয়েছিলেম অলস ভরে,
দু’এক জনে বলেছিল
“দূত এল বা তবে!”
আমরা হেসে বলেছিলেম
“বাতাস বুঝি হবে!”
নিশীথরাতে শোনা গেল
কিসের যেন ধ্বনি |
ঘুমের ঘোরে ভেবেছিলেম
“মেঘের গরজনি!”
ক্ষণে ক্ষণে চেতন করি
কাঁপল ধরা থরহরি,
দু-একজনে বলেছিল
“চাকার ঝনঝনি।”
ঘুমের ঘোরে কহি মোরা
“মেঘের গরজনি।”
তখনো রাত আঁধার আছে,
বেজে উঠল ভেরী,
কে ফুকারে “জাগ সবাই,
আর কোরো না দেরী!”
বক্ষ’পরে দুহাত চেপে
আমরা ভয়ে উঠি কেঁপে,
দু-এক জনে কহে কানে
“রাজার ধ্বজা হেরি!”
আমরা জেগে উঠে বলি
“আর তবে নয় দেরী”
কোথায় আলো, কোথায় মাল্য
কোথায় আয়োজন।
রাজা আমার দেশে এল
কোথায় সিংহাসন।
হায়রে ভাগ্য, হায়রে লজ্জা,
কোথায় সভা, কোথায় সজ্জা।
দু-একজনে কহে কানে,
“বৃথা এ ক্রন্দন –
রিক্তকরে শূন্য ঘরে
করো অভ্যর্থন!”
ওরে দুয়ার খুলে দে রে,
বাজা শঙ্খ বাজা!
গভীর রাতে এসেছে আজ
আঁধার ঘরের রাজা |
বজ্র ডাকে শূন্যতলে
বিদ্যুতেরই ঝিলিক ঝলে,
ছিন্ন শয়ন টেনে এনে
আঙিনা তোর সাজা।
ঝড়ের সাথে হঠাত্‍‌ এল
দুঃখরাতের রাজা!
Share on:

আমি আজ কানাই মাস্টার,
বড় মোর বেড়াল ছানাটি
আমি ওকে মারি নে মা বেত,
মিছিমিছি বসি নিয়ে কাঠি।
রোজ রোজ দেরি করে আসে,
পড়াতে দেয় না ও তো মন,
ডান পা তুলিয়ে তোলে হাই,
যত আমি বলি ‘শোন, শোন’।
দিনরাত খেলা খেলা খেলা,
লেখা পড়ায় ভারি অবহেলা।
আমি বলি ‘চ ছ জ ঝ ঞ’
ও কেবল বলে ‘মিয়ো, মিয়ো’।
প্রথম ভাগের পাতা খুলে
আমি ওরে বোঝাই মা কত-
চুরি করে খাস নে কখনে,
ভাল হোস গোপালের মতো।
যত বলি সব হয় মিছে,
কথা যদি একটাও শোনে-
মাছ যদি দেখেছে কোথাও
কিছুই থাকে না আর মনে।
চড়াই পাখির দেখা পেলে
ছুটে যায় সব পড়া ফেলে।
যত বলি ‘চ ছ জ ঝ ঞ’
দুষ্টামি করে বলে ‘মিয়ো’।
আমি ওরে বলি বার বার
‘পড়ার সময় তুমি পড় –
তার পরে ছুটি হয়ে গেলে
খেলার সময় খেলা কোরো’।
ভাল মানুষের মত থাকে,
আড়ে আড়ে চায় মুখপানে,
এমনি সে ভান করে যেন
যা বলি বুঝেছে তার মানে।
একটু সুযোগা বোঝে যেই
কোথা যায় আর দেখা নেই।
আমি বলি ‘চ ছ জ ঝ ঞ’,
ও কেবল বলে ‘মিয়ো মিয়ো’।।
Share on:

ভূতের মতন চেহারা যেমন র্নিবোধ অতি ঘোর—
যা- কিছু হারায়, গিন্নি বলেন, “কেষ্ট বেটাই চোর।”
উঠিতে বসিতে করি বাপান্ত, শুনেও শোনে না কানে।
যত পায় বেত না পায় বেতন, তবু না চেতন মানে।
বড় প্রয়োজন, ডাকি প্রাণপণ চীত্কার করি ‘কেষ্টা’—
যত করি তাড়া নাহি পাই সাড়া, খুঁজে ফিরি সারা দেশটা।
তিনখানা দিলে একখানা রাখে, বাকি কোথা নাহি জানে;
একখানা দিলে নিমেষ ফেলিতে তিনখানা করে আনে।
যেখানে সেখানে দিবসে দুপুরে নিদ্রাটি আছে সাধা;
মহাকলরবে গালি দেই যবে `”পাজি হতভাগা গাধা”—
দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সে হাসে, দেখে জ্বলে যায় পিত্ত।
তবু মায়া তার ত্যাগ করা ভার— বড়ো পুরাতন ভৃত্য।

ঘরের কর্ত্রী রুক্ষ মূর্তি বলে, “আর পারি নাকো,
রহিল তোমার এ ঘর-দুয়ার, কেষ্টারে লয়ে থাকো।
না মানে শাসন বসন বাসন অশন আসন যত
কেথায় কী গেল, শুধু টাকাগুগুলো যেতেছ জলের মত।
গেলে সে বাজার সারা দিন আর দেখা পাওয়া তার ভার—
করিলে চেষ্টা কেষ্টা ছাড়া কি ভৃত্য মেলে না আর!”
শুনে মহা রেগে ছুটে যাই বেগে, আনি তার টিকি ধরে;
বলি তারে, “পাজি, বের হ তুই আজই, দূর করে দিনু তোরে।
ধীরে চলে যায়, ভাবি গেল দায়; পরদিন উঠে দেখি,
হুঁকাটি বাড়ায়ে, রয়েছে দাঁড়ায়ে বেটা বুদ্ধির ঢেঁকি—
প্রসন্ন মুখ, নাহি কোন দুখ, অতি অকাতর চিত্ত!
ছাড়লে না ছাড়ে, কী কিরব তারে— মোর পুরাতন ভৃত্য!
সে বছরে ফাঁকা পেনু কিছু টাকা করিয়া দালালিগির।
করিলাম মন শ্রী বিন্দাবন বারেক আসিব ফিরি।
পরিবার তায় সাথে যেতে চায়, বুঝায়ে বলিনু তারে—
পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য, নহিলে যে খরচ বাড়ে।
লয়ে রশারশি করি কষাকষি পোটলাপুঁটলি বাঁধি
বলয় বাজায়ে বাক্স সাজায়ে গৃহিণী কিহল কাঁদি,
“পরদেশে গিয়ে কেষ্টারে নিয়ে কষ্ট অনেক পাবে।”
আমি কহিলাম, “আরে রাম রাম! নিবারণ সাথে যাবে।”
রেলগাড়ি ধায়; হেরিলাম হায় নামিয়া বধর্মানে—
কৃষ্ণ কানত, অতি প্রশান্ত তামাক সাজিয়া আনে!
র্স্পধা তাহার হেনমতে আর কত বা সহিব নিত্য
যত তারে দুষি তবু হনু খুশি, হেরি পুরাতন ভৃত্য!
নামিনু শ্রীধামে— দক্ষিনে বামে পিছনে সমুখে যত
লাগিল পান্ডা,নিমেষে প্রাণটা করিল কুন্ঠাগত।
জন-ছয় সাতে মিলি এক-সাথে পরম বন্ধুভাবে
করিলাম বাসা; মনেহল আশা আরামে দিবস যাবে।
কোথা ব্রজবালা কোথা বনমালা,কোথা বনমালী হরি!
কোথা ছা হন্ত, চিরবসন্ত! আমি বসন্তে মরি।
বন্ধু যে যত স্বপ্নের মতো বাসা ছেড়ে দিল ভঙ্গ
আমি একা ঘরে ব্যাধি-খরশরে ভরিল সকল অঙ্গ
ডাকি নিশিদিন সকরুণ ক্ষীণ,”কেষ্টা আয় রে কাছে।
এতদিনে শেষে আসিয়া বিদেশে প্রাণ বুঝি নাহি বাঁচে।”
হেরি তার মুখ ভুরে ওঠে বুক, সে যেন পরম বিত্ত—
নিশিদিন ধরে দাঁড়ায়ে শিয়রে, মোর পুরাতন ভৃত্য।
মুখে দেয় জল, শুধায় কুশল, শিরে দেয় মোর হাত;
দাঁড়ায়ে নিঝুম চোখে নাই ঘুম, মুখে নাই তার ভাত।
বলে বার বার,”কর্তা তোমার কোন ভয়নাই,শুন—
যাবে দেশে ফিরে মাঠাকুরানীরে দেখিতে পাইবে পুন।”
লভিয়া আরাম আমি উঠিলাম; তাহারে ধরিল জ্বরে;
নিল সে আমার কাল ব্যাধিভার আপনার দেহ-পরে।
হয়ে জ্ঞানহীন কাটিল দু দিন, বন্ধ হইল নাড়ী;
এতবার তারে, গেনু ছাড়াবারে, এতদিনে গেল ছাড়ি।
বহুদিন পরে আপনার ঘরে, ফিরিনু সারিয়া তীর্থ;
আজ সাথে নেই চিরসাথি সেই, মোর পুরাতন ভৃত্য
Share on:

এই পৃথিবীতে আমি অবসর নিয়ে শুধু আসিয়াছি — আমি হৃষ্ট কবি
আমি এক; — ধুয়েছি আমার দেহ অন্ধকারে একা একা সমুদ্রের জলে;
ভালোবাসিয়াছি আমি রাঙা রোদ, ক্ষান্ত কার্তিকের মাঠে — ঘাসের আঁচলে
ফড়িঙের মতো আমি বেড়ায়েছি — দেখেছি কিশোরী এস হলুদ করবী
ছিঁড়ে নেয় — বুকে তার লাল পেড়ে ভিজে শাড়ি করুন শঙ্খের মতো ছবি
ফুটাতেছে — ভোরের আকাশখানা রাজহাস ভরে গেছে নব কোলাহলে
নব নব সূচনার: নদীর গোলাপী ঢেউ কথা বলে — তবু কথা বলে,
তবু জানি তার কথা কুয়াশায় ফুরায় না — কেউ যেন শুনিতেছে সবি।

কোন্‌ রাঙা শাটিনের মেঘে বসে — অথবা শোনে না কেউ, শূণ্য কুয়াশায়
মুছে যায় সব তার; একদিন বর্ণচ্ছটা মুছে যাবো আমিও এমন;
তবু আজ সবুজ ঘাসের পরে বসে থাকি; ভালোবাসি; প্রেমের আশায়
পায়ের ধ্বনির দিকে কান পেতে থাকি চুপে; কাঁটাবহরের ফল করি আহরণ
কারে যেন এই গুলো দেবো আমি; মৃদু ঘাসে একা — একা বসে থাকা যায়
এই সব সাধ নিয়ে; যখন আসিবে ঘুম তারপর, ঘুমাব তখন।
Share on:

ছুটি হলে রোজ ভাসাই জলে
কাগজ-নৌকাখানি।
লিখে রাখি তাতে আপনার নাম,
লিখি আমাদের বাড়ি কোন গ্রাম
বড়ো বড়ো ক’রে মোটা অক্ষরে
যতনে লাইন টানি।
যদি সে নৌকা আর-কোনো দেশে
আর-কারো হাতে পড়ে গিয়ে শেষে
আমার লিখন পড়িয়া তখন
বুঝিবে সে অনুমানি
কার কাছ হতে ভেসে এল স্রোতে
কাগজ-নৌকাখানি ।।


আমার নৌকা সাজাই যতনে
শিউলি বকুলে ভরি।
বাড়ির বাগানে গাছের তলায়
ছেয়ে থাকে ফুল সকাল বেলায়,
শিশিরের জল করে ঝলমল
প্রভাতের আলো পড়ি।
সেই কুসুমের অতি ছোটো বোঝা
কোন্‌ দিক-পানে চলে যায় সোজা,
বেলাশেষে যদি পার হয়ে নদী
ঠেকে কোনোখানে যেয়ে –
প্রভাতের ফুল সাঁঝে পাবে কূল
কাগজের তরী বেয়ে ।।

আমার নৌকা ভাসাইয়া জলে
চেয়ে থাকি বসি তীরে।
ছোটো ছোটো ঢেউ উঠে আর পড়ে,
রবির কিরণে ঝিকিমিকি করে,
আকাশেতে পাখি চলে যায় ডাকি,
বায়ু বহে ধীরে ধীরে ।
গগনের তলে মেঘ ভাসে কত
আমারি সে ছোটো নৌকার মতো –
কে ভাসালে তায়, কোথা ভেসে যায়,
কোন দেশে গিয়ে লাগে।
ঐ মেঘ আর তরণী আমার
কে যাবে কাহার আগে ।।

বেলা হলে শেষে বাড়ি থেকে এস
নিয়ে যায় মোরে টানি
আমি ঘরে ফিরি, থাকি কোনে মিশি,
যেথা কাটে দিন সেথা কাটে নিশি,
কোথা কোন্‌ গাঁয় ভেসে চলে যায়
আমার নৌকাখানি ।
কোন্‌ পথে যাবে কিছু নাই জানা,
কেহ তারে কভু নাহি করে মানা,
ধ’রে নাহি রাখে, ফিরে নাহি ডাকে –
ধায় নব নব দেশে।
কাগজের তরী, তারি ‘পরে চড়ি
মন যায় ভেসে ভেসে ।।

রাত হয়ে আসে, শুই বিছানায়,
মুখ ঢাকি দুই হাতে –
চোখ বুঁজে ভাবি এমন আঁধার,
কালী দিয়ে ঢালা নদীর দুধার –
তারি মাঝখানে কোথায় কে জানে
নৌকা চলেছে রাতে।
আকাশের তারা মিটি মিটি করে,
শিয়াল ডাকিছে প্রহরে প্রহরে,
তরীখানি বুঝি ঘর খুঁজি খুঁজি
তীরে তীরে ফিরে ভাসি।
ঘুম লয়ে সাথে চড়েছে তাহাতে
ঘুম-পাড়ানিয়া মাসি ।।
Share on:

এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ
তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক
যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে যাওয়া গীতি,
অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক।
মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা
রসের আবেশরাশি শুষ্ক করি দাও আসি,
আনো আনো আনো তব প্রলয়ের শাঁখ
মায়ার কুজ্ঝটিজাল যাক দূরে যাক।
Share on:

রৌদ্র ঝিল্‌মিল,
উষার আকাশ, মধ্য নিশীথের নীল,
অপার ঐশ্বর্যবেশে দেখা তুমি দাও বারে বারে
নিঃসহায় নগরীর কারাগার-প্রাচীরের পারে!
-উদ্বেলিছে হেথা গাঢ় ধূম্রের কুণ্ডলী,
উগ্র চুল্লিবহ্নি হেথা অনিবার উঠিতেছে জ্বলি,
আরক্ত কঙ্করগুলো মরুভূর তপ্তশ্বাস মাখা,
মরীচিকা-ঢাকা!
অগণন যাত্রিকের প্রাণ
খুঁজে মরে অনিবার, পায় নাকো পথের সন্ধান;
চরণে জড়ায়ে গেছে শাসনের কঠিন শৃঙ্খল-
হে নীলিমা নিষ্পলক, লক্ষ বিধিবিধানের এই কারাতল
তোমার ও মায়াদণ্ডে ভেঙেছ মায়াবী।
জনতার কোলাহলে একা ব’সে ভাবি
কোন্ দূর জাদুপুর-রহস্যের ইন্দ্রজাল মাখি
বাস্তবের রক্ততটে আসিলে একাকী!
স্ফটিক আলোকে তব বিথারিয়া নীলাম্বরখানা
মৌন স্বপ্ন-ময়ূরের ডানা!
চোখে মোর মুছে যায় ব্যাধবিদ্ধ ধরণীর রুধির-লিপিকা
জ্বলে ওঠে অন্তহারা আকাশের গৌরী দীপশিখা!
বসুধার অশ্রু-পাংশু আতপ্ত সৈকত,
ছিন্নবাস, নগ্নশির ভিক্ষুদল, নিষ্করুণ এই রাজপথ,
লক্ষ কোটি মুমূর্ষুর এই কারাগার,
এই ধূলি-ধূম্রগর্ভ বিস্তৃত আঁধার
ডুবে যায় নীলিমায়-স্বপ্নায়ত মুগ্ধ আঁখিপাতে,
-শঙ্খশুভ্র মেঘপুঞ্জে , শুক্লাকাশে, নক্ষত্রের রাতে;
ভেঙে যায় কীটপ্রায় ধরণীর বিশীর্ণ নির্মোক,
তোমার চকিত স্পর্শে, হে অতন্দ্র দূর কল্পলোক!
Share on:

এমন অনেক দিন গেছে
আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থেকেছি,
হেমন্তে পাতা-ঝরার শব্দ শুনবো ব’লে
নিঃশব্দে অপেক্ষা করেছি বনভূমিতে-
কোনো বন্ধুর জন্যে
কিংবা অন্য অনেকের জন্যে
হয়তো বা ভবিষ্যতেও অপেক্ষা করবো…
এমন অনেক দিনই তো গেছে
কারো অপেক্ষায় বাড়ি ব’সে আছি-
হয়তো কেউ বলেছিলো, “অপেক্ষা ক’রো
একসঙ্গে বেরুবো।”

এক শনিবার রাতে খুব ক্যাজুয়ালি
কোনো বন্ধু ঘোরের মধ্যে গোঙানির মতো
উচ্চারণ করেছিলো, “বাড়ি থেকো
ভোরবেলা তোমাকে তুলে নেবো।”
হয়তো বা ওর মনের মধ্যে ছিলো
চুনিয়া অথবা শ্রীপুর ফরেস্ট বাংলো;
-আমি অপেক্ষায় থেকেছি।

যুদ্ধের অনেক আগে
একবার আমার প্রিয়বন্ধু অলোক মিত্র
ঠাট্টা ক’রে বলেছিলো,
“জীবনে তো কিছুই দেখলি না
ন্যুব্জপীঠ পানশালা ছাড়া। চল, তোকে
দিনাজপুরে নিয়ে যাবো
কান্তজীর মন্দির ও রামসাগর দেখবি,
বিরাট গোলাকার চাঁদ মস্ত খোলা আকাশ দেখবি,
পলা ও আধিয়ারদের জীবন দেখবি,
গল্প-টল্প লেখার ব্যাপারে কিছু উপাদান
পেয়ে যেতেও পারিস,
তৈরী থাকিস- আমি আসবো”
-আমি অপেক্ষায় থেকেছি;

আমি বন্ধু, পরিচিত-জন, এমনকি- শত্রুর জন্যেও
অপেক্ষায় থেকেছি,
বন্ধুর মধুর হাসি আর শত্রুর ছুরির জন্যে
অপেক্ষায় থেকেছি-

কিন্তু তোমার জন্য আমি অপেক্ষায় থাকবো না,
-প্রতীক্ষা করবো।
‘প্রতীক্ষা’ শব্দটি আমি শুধু তোমারই জন্যে খুব যত্নে
বুকের তোরঙ্গে তুলে রাখলাম,
অভিধানে শব্দ-দু’টির তেমন কোনো
আলাদা মানে নেই-
কিন্তু আমরা দু’জন জানি
ঐ দুই শব্দের মধ্যে পার্থক্য অনেক,
‘অপেক্ষা’ একটি দরকারি শব্দ—
আটপৌরে, দ্যোতনাহীন, ব্যঞ্জনাবিহীন,
অনেকের প্রয়োজন মেটায়।
‘প্রতীক্ষা’ই আমাদের ব্যবহার্য সঠিক শব্দ,
ঊনমান অপর শব্দটি আমাদের ব্যবহারের অযোগ্য,
আমরা কি একে অপরের জন্যে প্রতীক্ষা করবো না ?

আমি তোমার জন্যে পথপ্রান্তে অশ্বত্থের মতো
দাঁড়িয়ে থাকবো-
ঐ বৃক্ষ অনন্তকাল ধ’রে যোগ্য পথিকের
জন্যে প্রতীক্ষমান,
আমাকে তুমি প্রতীক্ষা করতে বোলো
আমি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবো অনড় বিশ্বাসে,
দাঁড়িয়ে থাকতে-থাকতে
আমার পায়ে শিকড় গজাবে…

আমার প্রতীক্ষা তবু ফুরোবে না…
Share on:

তোমার কথা ভেবে রক্তে ঢেউ ওঠে—
তোমাকে সর্বদা ভাবতে ভালো লাগে,
আমার পথজুড়ে তোমারই আনাগোনা—
তোমাকে মনে এলে রক্তে আজও ওঠে
তুমুল তোলপাড় হূদয়ে সর্বদা…
হলো না পাশাপাশি বিপুল পথ-হাঁটা,
এমন কথা ছিল চলব দুজনেই
জীবন-জোড়া পথ যে-পথ দিকহীন
মিশেছে সম্মুখে আলোর গহ্বরে…
Share on:

ভালোবাসা মানে দুজনের পাগলামি,
পরস্পরকে হৃদয়ের কাছে টানা;
ভালোবাসা মানে জীবনের ঝুঁকি নেয়া,
বিরহ-বালুতে খালিপায়ে হাঁটাহাঁটি;

ভালোবাসা মানে একে অপরের প্রতি
খুব করে ঝুঁকে থাকা;
ভালোবাসা মানে ব্যাপক বৃষ্টি, বৃষ্টির একটানা
ভিতরে-বাহিরে দুজনের হেঁটে যাওয়া;
ভালোবাসা মানে ঠাণ্ডা কফির পেয়ালা সামনে
অবিরল কথা বলা;
ভালোবাসা মানে শেষ হয়ে-যাওয়া কথার পরেও
মুখোমুখি বসে থাকা।
Share on:

যদি ভালবাসা পাই আবার শুধরে নেব
জীবনের ভুলগুলি
যদি ভালবাসা পাই ব্যাপক দীর্ঘপথে
তুলে নেব ঝোলাঝুলি
যদি ভালবাসা পাই শীতের রাতের শেষে
মখমল দিন পাব
যদি ভালবাসা পাই পাহাড় ডিঙ্গাবো
আর সমুদ্র সাঁতরাবো
যদি ভালবাসা পাই আমার আকাশ হবে
দ্রুত শরতের নীল
যদি ভালবাসা পাই জীবনে আমিও পাব
মধ্য অন্তমিল।
Share on:

বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই,
“কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই,
আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে
তুমি কত কষ্ট পাও রোধ, বৃষ্টির, ঝড়ে।”

বাবুই হাসিয়া কহে, “সন্দেহ কি তাই ?
কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়।
পাকা হোক, তবু ভাই, পরের ও বাসা,
নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা।”
Share on:

বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
মাগো আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই?
পুকুর ধারে লেবুর তলে থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না একলা জেগে রই-
মাগো আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই?
সেদিন হতে কেন মা আর দিদিরে না ডাকো;-
দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো?
খাবার খেতে আসি যখন, দিদি বলে ডাকি তখন,
ওঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো?
আমি ডাকি তুমি কেন চুপটি করে থাকো?
বল মা দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে?
কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল-বিয়ে হবে!
দিদির মত ফাঁকি দিয়ে, আমিও যদি লুকাই গিয়ে
তুমি তখন একলা ঘরে কেমন করে রবে,
আমিও নাই-দিদিও নাই- কেমন মজা হবে।
ভুঁই চাপাতে ভরে গেছে শিউলি গাছের তল,
মাড়াস্ নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল।
ডালিম গাছের ফাঁকে ফাঁকে বুলবুলিটি লুকিয়ে থাকে,
উড়িয়ে তুমি দিও না মা, ছিঁড়তে গিয়ে ফল,-
দিদি এসে শুনবে যখন, বলবি কি মা বল!
বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই-
এমন সময় মাগো আমার কাজলা দিদি কই?
লেবুর ধারে পুকুর পাড়ে ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোপে ঝাড়ে’
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, তাইতে জেগে রই
রাত্রি হলো মাগো আমার কাজলা দিদি কই?
Share on:

বাপজান আশা করি কুশলেই আছেন,
পরসমাচার এই যে,
সেদিন আপনি যে কান্ডটা করিলেন
তার জন্য এই পত্রটি না লিখিয়া পারিতেছিনা
দেখিতেছি যতই বয়স বাড়িতেছে, ততই আপনার কান্ড
একেবারেই লোপ পাইতেছে!

আপনি কি করিয়া সেদিন আমার ড্রইংরুমে,
অর্থাৎ বৈঠকখানায় বেমোক্কা ঢুকিয়া পড়িলেন,
বুঝিলাম না
সারাগায়ে ঘামের গন্ধ, ময়লা তেল চিপচিপে পান্ঞ্জাবী,
বগলে ছেঁড়া ছাতা, মাথায় চিতিপড়া কিস্তি টুপি,
যেনো আকবর বাদশার উর্নিশ আর কি!
হাতে মাটির হাড়ি, সর্বোপরি দু’পায়ের চামড়ার
কুচ কুচে কালো রং, বোধহয় লজ্জায় ঢাকিয়া ফেলিবার
আশায়, রাস্তার সবটুকু ধুলি মাখাইয়া
পা দু’টিকে মনে হইতেছিল চুনকাম করাইয়াছেন।
কি লজ্জা, আপনার ঐমূর্তি দেখিয়া আমার বন্ধুগন
এবং তাদের সুন্দরী স্ত্রীরা, বজ্রাহতের মতো তাকাইয়া রহিলো।
যেনো তাহারা চাক্ষুস ভুত দেখিতেছে
আর আমার অবস্হাটা একবার ভাবিয়া দেখুন,
মান, সম্মান, মর্যাদা সব জাহান্নামে গেল,
তাও-না হয়, আপনি যদি দয়া করিয়া একটু চুপ থাকিতেন
তবু একটা কথা ছিল!
তা-না আপনার আবার আহল্লাদে মুখ দিয়া
কথার ফোয়ারা ছুটিতে লাগিলোঃ
“বাবা কেমন আছো? বৌমা কোথায়?”
বলিহারে ভাগ্যিস সেই মুহুর্তে ও সেখানে ছিল না!
থাকিলে সে বেচারির হার্ট এটাক হইয়া যাইতো,
সে তো আবার হঠাৎ কোনো খারাপ দৃশ্য
মোটেই সহ্য করিতে পারেনা,
বড় কোমল হৃদয়ের মানুষ কিনা!
বাপজান তোমাকে সাবধান করিয়া দিতেছি
আর যাই করো, এইভাবে আমাকে ডুবাইয়ো না
টাকা-পয়সা লাগিলে চিঠি দিও পারিলে পাঠাইবো,
আর অতো টাকা পয়সাও যে কেন লাগে তোমাদের তাও বুঝিনা
তোমাদের আবার অতো খরচ কিসের
ক্লাবে যাওনা, পার্টি দাওনা
ইসুবগুল, আর চিরতার পানি ছাড়া
আরতো কোনো নেশাও করো না।
এইটুকু পড়িয়া দরিদ্র স্কুল মাস্টার
পিতা আনমনে বলিয়া উঠিলেনঃ
না, না ভুল বললিরে বাবা
নেশা একটা আছে, বড় পুরানো নেশা
কিছুতেই ছাড়িতে পারিনা সেই নেশা
তোর জন্মের পর থেকে সারাক্ষণ তোকে দেখার নেশা
কিছুতেই ছাড়িতে পারিনা বাপ, কিছুতেই ছাড়িতে পারিনা।।
Share on:

আজ রাত্রে বালিশ ফেলে দাও, মাথা রাখো পরস্পরের বাহুতে,
শোনো দূরে সমুদ্রের স্বর, আর ঝাউবনে স্বপ্নের মতো নিস্বন,
ঘুমিয়ে পোড়ো না, কথা ব’লেও নষ্ট কোরো না এই রাত্রি-
শুধু অনুভব করো অস্তিত্ব।

কেন না কথাগুলোকে বড়ো নিষ্ঠুরভাবে চটকানো হ’য়ে গেছে,
কোনো উক্তি নির্মল নয় আর, কোনো বিশেষণ জীবন্ত নেই;
তাই সব ঘোষণা এত সুগোল, যেন দোকানের জানালায় পুতুল-
অতি চতুর রবারে তৈরি, রঙিন।

কিন্তু তোমরা কেন ধরা দেবে সেই মিথ্যায়, তোমরা যারা সম্পন্ন,
তোমরা যারা মাটির তলায় শস্যের মতো বর্ধিষ্ণু?
বোলো না ‘সুন্দর’, বোলো না ‘ভালোবাসা’, উচ্ছ্বাস হারিয়ে ফেলো না
নিজেদের-
শুধু আবিষ্কার করো, নিঃশব্দে।

আবিষ্কার করো সেই জগৎ, যার কোথাও কোনো সীমান্ত নেই,
যার উপর দিয়ে বাতাস ব’য়ে যায় চিরকালের সমুদ্র থেকে,
যার আকাশে এক অনির্বাণ পুঁথি বিস্তীর্ণ-
নক্ষত্রময়, বিস্মৃতিহীন।

আলিঙ্গন করো সেই জগৎকে, পরষ্পরের চেতনার মধ্যে নিবিড়।
দেখবে কেমন ছোটো হ’তেও জানে সে, যেন মুঠোর মধ্যে ধ’রে যায়,
যেন বাহুর ভাঁজে গহ্বর, যেখানে তোমরা মুখ গুঁজে আছো
অন্ধকারে গোপনতায় নিস্পন্দ-

সেই একবিন্দু স্থান, যা পবিত্র, আক্রমণের অতীত,
যোদ্ধার পক্ষে অদৃশ্য, মানচিত্রে চিহ্নিত নয়,
রেডিও আর হেডলাইনের বাইরে সংঘর্ষ থেকে উত্তীর্ণ-
যেখানে কিছুই ঘটে না শুধু আছে সব

সব আছে- কেননা তোমাদেরই হৃদয় আজ ছড়িয়ে পড়লো
ঝাউবনে মর্মর তুলে, সমুদ্রের নিয়তিহীন নিস্বনে,
নক্ষত্র থেকে নক্ষত্রে, দিগন্তের সংকেতরেখায়-
সব অতীত, সব ভবিষ্যৎ আজ তোমাদের।

আমাকে ভুল বুঝোনা। আমি জানি, বারুদ কত নিরপেক্ষ,
প্রাণ কত বিপন্ন।
কাল হয়তো আগুন জ্বলবে দারুণ, হত্যা হবে লেলিহান,
যেমন আগে, অনেকবার, আমাদের মাতৃভুমি এই পৃথিবীর
মৃত্তিকায়-
চাকার ঘূর্ণনের মতো পুনরাবৃত্ত।

তবু এও জানি ইতিহাস এক শৃঙ্খল, আর আমরা চাই মুক্তি,
আর মুক্তি আছে কোন পথে, বলো, চেষ্টাহীন মিলনে ছাড়া?
মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলন, মানুষের সঙ্গে বিশ্বের-
যার প্রমাণ, যার প্রতীক আজ তোমরা।

নাজমা, শামসুদ্দিন, আর রাত্রির বুকে লুকিয়ে-থাকা যত প্রেমিক,
যারা ভোলোনি আমাদের সনাতন চুক্তি, সমুদ্র আর নক্ষত্রের সঙ্গে,
রচনা করেছো পরস্পরের বাহুর ভাঁজে আমাদের জন্য
এক স্বর্গের আভাস, অমরতায় কল্পনা :

আমি ভাবছি তোমাদের কথা আজকের দিনে, সারাক্ষণ-
সেই একটি মাত্র শিখা আমার অন্ধকারে, আমার চোখের সামনে
নিশান।
মনে হয় এই জগৎ-জোড়া দুর্গন্ধ আর অফুরান বিবমিষার বিরুদ্ধে
শুধু তোমরা আছো উত্তর, আর উদ্ধার।
Share on:

কোথায় চলেছো? এদিকে এসো না! দুটো কথা শোনা দিকি
এই নাও- এই চকচকে ছোটো, নুতন রূপোর সিকি
ছোকানুর কাছে দুটো আনি আছে, তোমারে দেবো গো তা-ও,
আমাদের যদি তোমার সঙ্গে নৌকায় তুলে নাও।
নৌকা তোমার ঘাটে বাঁধা আছে- যাবে কি অনেক দূরে?
পায়ে পড়ি, মাঝি, সাথে নিয়ে চলো মোরে আর ছোকানুরে
আমারে চেনো না? মোর নাম খোকা, ছোকানু আমার বোন
তোমার সঙ্গে বেড়াবো আমরা মেঘনা-পদ্মা-শোন।
দিদি মোরে ডাকে গোবিন্দচাঁদ, মা ডাকে চাঁদের আলো,
মাথা খাও, মাঝি, কথা রাখো! তুমি লক্ষী, মিষ্টি, ভালো!
বাবা বলেছেন, বড় হয়ে আমি হব বাঙলার লাট,
তখন তোমাকে দিয়ে দেব মোর ছেলেবেলাকার খাট।
চুপি-চুপি বলি, ঘুমিয়ে আছে মা, দিদি গেছে ইস্কুলে,
এই ফাঁকে মোরে-আর ছোকানুরে- নৌকোয়া লও তুলে।
কোন ভয় নেই – বাবার বকুনি তোমাকে হবে না খেতে
যত দোষ সব, আমার- না, আমি একা ল’ব মাথা পেতে।
নৌকো তোমার ডুবে যাবে নাকো, মোরা বেশি ভারি নই,
কিচ্ছু জিনিস নেবো না সঙ্গে কেবল ঝন্টু বই।
চমকালে কেন! ঝন্টু পুতুল, ঝন্টু মানুষ নয়,
একা ফেলে গেলে, ছোকানুরে ভেবে কাঁদিবে নিশ্চয়।
অনেক রঙের পাল আছে, মাঝি? বাদামী? সোনালী? লাল?
সবুজও? তা হলে সেটা দাও আজ, সোনালীটা দিয়ো কাল।
সবগুলো নদী দেখাবে কিন্তু। আগে চলো পদ্মায়,
দুপুরের রোদে রূপো ঝলমল সাদা জল উছলায়
শুয়ে’ শুয়ে’ – মোরা দেখিব আকাশ- আকাশ ম-স্ত বড়,
পৃথিবীর যত নীল রঙ- সব সেখানে করেছে জড়।
মায়ের পূজোর ঘরটির মত, একটু ময়লা নাই,
আকাশেরে কে যে ধোয় বারবার, তুমি কি জানো তা ভাই?
কালো-কালো পাখি বাঁকা ঝাঁক বেঁধে উড়ে চলে যায় দূরে,
উঁচু থেকে ওরা দেখিতে কি পায় মোরে আর ছোকানুরে?
রূপোর নদীতে রূপোর ইলিশ- চোখ ঝলসানো আঁশ,
ওখানে দ্যাখো না- জালে বেঁধে জেলে তুলিয়াছে একরাশ।
ওটা চর বুঝি? একটু রাখো না, এ তো ভারি সুন্দর।
এ যেন নতুন কার্পেট বোনা! এই পদ্মার চর?
ছোকানু, চল রে, চান ক’রে আসি দিয়ে সাত-শোটা ডুব,
ঝাঁপায়ে-দাপায়ে টলটলে জলে নাইতে ফুর্তি খুব।
ইলিশ কিনলে? আঃ, বেশ বে তুমি খুব ভালো, মাঝি
উনুন ধরাও ছোকানু দেখাবে রান্নার কারসাজি।
খাওয়া হ’লো শেষ- আবার চলেছি, দুলছে ছোট্ট নাও,
হাল্কা নরম হাওয়ায় তোমার লাল পাল তুলে দাও।
আমর দু’জন দেখি ব’সে ব’সে আকাশ কত না নীল,
ছোট পাখি আরো ছোট হ’য়ে যায়- আকাশের মুখে তিল
সারাদিন গোলা, সূর্য লুকালো জলের তলার ঘরে,
সোনা হ’য়ে জ্বলে পদ্মার জল কালো হ’লো তার পরে।
সন্ধ্যার বুকে তারা ফুটে ওঠে- এবার নামাও পাল
গান ধরো, মাঝি; জলের শব্দ ঝুপঝুপ দেবে তাল।
ছোকানুর চোখ ঘুমে ঢুলে আসে- আমি ঠিক জেগে আছি,
গান গাওয়া হ’লে আমায় অনেক গল্প বলবে, মাঝি?
শুনতে-শুনতে আমিও ঘুমাই বিছানা বালিশ বিনা
– মাঝি, তুমি দেখো ছোকানুরে, ভাই, ও বড়োই ভীতু কিনা
আমার জন্য কিচ্ছু ভেবো না, আমিই তো বড়োই প্রায়,
ঝড় এলে ডেকো আমারে- ছোকানু যেন সুখে ঘুম যায়।
Share on:

আমি নহি পুরূরবা। হে উর্বশী,
ক্ষনিকের মরালকায়
ইন্দ্রিয়ের হর্ষে, জান গড়ে তুলি আমার ভুবন?
এসো তুমি সে ভুবনে, কদম্বের রোমাঞ্চ ছড়িয়ে।
ক্ষণেক সেখানে থাকো,
তোমার দেহের হায় অন্তহীন আমন্ত্রণবীথি
ঘুরি যে সময় নেই- শুধু তুমি থাকো ক্ষণকাল,
ক্ষণিকের আনন্দাঅলোয়
অন্ধকার আকাশসভায়
নগ্নতায় দীপ্ত তনু জ্বালিয়ে যাও
নৃত্যময় দীপ্ত দেয়ালিতে।
আর রাত্রি, রবে কি উর্বশী,
আকাশের নক্ষত্রাঅভায়, রজনীর শব্দহীনতায়
রাহুগ্রস্ত হয়ে রবে বহুবন্ধে পৃথিবীর নারী
পরশ-কম্পিত দেহ সলজ্জ উত্সুক?
আমি নহি পুরূরবা। হে উর্বশী,
আমরণ আসঙ্গলোলুপ,
আমি জানি আকাশ-পৃথিবী
আমি জানি ইন্দ্রধনু প্রেম আমাদের।
Share on:

হৃদয় তোমাকে পেয়েছি, স্রোতস্বিনী !
তুমি থেকে থেকে উত্তাল হয়ে ছোটো,
কখনো জোয়ারে আকণ্ঠ বেয়ে ওঠো
তোমার সে-রূপ বেহুলার মতো চিনি।
তোমার উৎসে স্মৃতি করে যাওয়া আসা
মনে-মনে চলি চঞ্চল অভিযানে,
সাহচর্যেই চলি, নয় অভিমানে,
আমার কথায় তোমারই তো পাওয়া ভাষা।
রক্তের স্রোতে জানি তুমি খরতোয়া,
ঊর্মিল জলে পেতেছি আসনপিঁড়ি,
থৈথৈ করে আমার ঘাটের সিঁড়ি,
কখনো-বা পলিচড়া-ই তোমার দোয়া।
তোমারই তো গান মহাজনী মাল্লার,
কখনো পান্সী-মাঝি গায় ভাটিয়ালি,
কখনো মৌন ব্যস্তের পাল্লায়,
কখনো-বা শুধু তক্তাই ভাসে খালি।
কত ডিঙি ভাঙো, যাও কত বন্দর,
কত কী যে আনো, দেখো কত বিকিকিনি,
তোমার চলায় ভাসাও, স্রোতস্বিনী,
Share on:

রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?
সেতারা, হেলার এখনো ওঠেনি জেগে?
তুমি মাস্তলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি।
রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
দীঘল রাতের শ্রান্তসফর শেষে
কোন দরিয়ার কালো দিগন্তে আমরা পড়েছি এসে?
এ কী ঘন-সিয়া জিন্দেগানীর বা’ব
তোলে মর্সিয়া ব্যথিত দিলের তুফান-শ্রান্ত খা’ব
অস্ফুট হয়ে ক্রমে ডুবে যায় জীবনের জয়ভেরী।
তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
সম্মুখে শুধু অসীম কুয়াশা হেরি।
রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
বন্দরে বসে যাত্রীরা দিন গোনে,
বুঝি মৌসুমী হাওয়ায় মোদের জাহাজের ধ্বনি শোনে,
বুঝি কুয়াশায়, জোছনা- মায়ায় জাহাজের পাল দেখে।
আহা, পেরেশান মুসাফির দল।
দরিয়া কিনারে জাগে তক্দিরে
নিরাশায় ছবি এঁকে!
পথহারা এই দরিয়া- সোঁতারা ঘুরে
চলেছি কোথায়? কোন সীমাহীন দূরে?
তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
একাকী রাতের গান জুলমাত হেরি!
রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
শুধু গাফলতে শুধু খেয়ালের ভুলে,
দরিয়া- অথই ভ্রান্তি- নিয়াছি ভুলে,
আমাদেরি ভুলে পানির কিনারে মুসাফির দল বসি
দেখেছে সভয়ে অস্ত গিয়াছে তাদের সেতারা, শশী।
মোদের খেলায় ধুলায় লুটায়ে পড়ি।
কেটেছে তাদের দুর্ভাগ্যের বিস্বাদ শর্বরী।
সওদাগরের দল মাঝে মোরা ওঠায়েছি আহাজারি,
ঘরে ঘরে ওঠে ক্রন্দনধ্বনি আওয়াজ শুনছি তারি।
ওকি বাতাসের হাহাকার,- ও কি
রোনাজারি ক্ষুধিতের!
ও কি দরিয়ার গর্জন,- ও কি বেদনা মজলুমের!
ও কি ধাতুর পাঁজরায় বাজে মৃত্যুর জয়ভেরী।
পাঞ্জেরি!
জাগো বন্দরে কৈফিয়তের তীব্র ভ্রুকুটি হেরি,
জাগো অগণন ক্ষুধিত মুখের নীরব ভ্রুকুটি হেরি!
দেখ চেয়ে দেখ সূর্য ওঠার কত দেরি, কত দেরি!!
Share on:

এমন মানব জনম আর কি হবে।
মন যা কর, ত্বরায় কর এই ভবে।।
অনন্ত রূপ সৃষ্টি করলেন সাঁই,
শুনি মানবের তুলনা কিছুই নাই ।
দেব-দানবগণ,
করে আরাধন
জনম নিতে মানবে।।

কত ভাগ্যের ফলে না জানি,
মন রে, পেয়েছ এই মানব-তরণী
বেয়ে যাও ত্বরায়
তরী সুধারায়,
যেন ভরা না ডোবে।।

এই মানুষে হবে মাধুর্য্য ভজন,
তাইতে মানুষ রূপ এই গঠিল নিরঞ্জন,
এবার ঠিকিলে আর
না দেখি কিনার,
লালন কয় কাতর ভাবে।।
Share on:

তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে
সব গাছ ছাড়িয়ে
উঁকি মারে আকাশে।
মনে সাধ, কালো মেঘ ফুঁড়ে যায়,
একেবারে উড়ে যায়;
কোথা পাবে পাখা সে?
তাই তো সে ঠিক তার মাথাতে
গোল গোল পাতাতে
ইচ্ছাটি মেলে তার, –
মনে মনে ভাবে, বুঝি ডানা এই,
উড়ে যেতে মানা নেই
বাসাখানি ফেলে তার।
সারাদিন ঝরঝর থত্থর
কাঁপে পাতা-পত্তর,
ওড়ে যেন ভাবে ও,
মনে মনে আকাশেতে বেড়িয়ে
তারাদের এড়িয়ে
যেন কোথা যাবে ও।
তার পরে হাওয়া যেই নেমে যায়,
পাতা কাঁপা থেমে যায়,
ফেরে তার মনটি
যেই ভাবে, মা যে হয় মাটি তার
ভালো লাগে আরবার
পৃথিবীর কোণটি।
Share on:

কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।
মেঘলাদিনে দেখেছিলেম মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
ঘোমটা মাথায় ছিলনা তার মোটে,
মুক্তবেণী পিঠের ‘পরে লোটে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে
ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই,
শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে
কুটির হতে ত্রস্ত এল তাই।
আকাশ-পানে হানি যুগল ভুরু
শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
পূবে বাতাস এল হঠাত্‍‌ ধেয়ে,
ধানের ক্ষেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ।
আলের ধারে দাঁড়িয়েছিলেম একা,
মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ।
আমার পানে দেখলে কিনা চেয়ে,
আমি জানি আর জানে সেই মেয়ে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
এমনি করে কাজল কালো মেঘ
জ্যৈষ্ঠমাসে আসে ঈশান কোণে।
এমনি করে কালো কোমল ছায়া
আষাঢ়মাসে নামে তমাল-বনে।
এমনি করে শ্রাবণ-রজনীতে
হঠাত্‍‌ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
আর যা বলে বলুক অন্য লোক।
দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
মাথার পরে দেয়নি তুলে বাস,
লজ্জা পাবার পায়নি অবকাশ।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
Share on:

যদি আমি ঝরে যাই একদিন কার্তিকের নীল কুয়াশায়;
যখন ঝরিছে ধান বাংলার ক্ষেতে-ক্ষেতে ম্লান চোখ বুজে,
যখন চড়াই পাখি কাঁঠালীচাপাঁর নীড়ে ঠোঁট আছে গুজে,
যখন হলুদ পাতা মিশিতেছে খয়েরি পাতায়,
যখন পুকুরে হাঁস সোঁদা জলে শিশিরের গন্ধ শুধু পায়,
শামুক গুগলিগুলো পড়ে আছে শ্যাওলার মলিন সবুজে-
তখন আমারে যদি পাও নাকো লালশাক-ছাওয়া মাঠে খুঁজে,
ঠেস্‌ দিয়ে বসে আর থাকি নাকো যদি বুনো চালতার গায়ে,

তাহলে জানিও তুমি আসিয়াছে অন্ধকার মৃত্যুর আহ্বান-
যার ডাক শুনে রাঙা রৌদ্রেরো চিল আর শালিখের ভিড়
একদিন ছেড়ে যাবে আম জাম বনে নীল বাংলার তীর,
যার ডাক শুনে আজ ক্ষেতে-ক্ষেতে ঝরিতেছে খই আর মৌরির ধান;-
কবে যে আসিবে মৃত্যু; বাসমতী চালে-ভেজা শাদা হাতখান-
রাখো বুকে, হে কিশোরী, গোরোচনারূপে আমি করিব যে ম্লান।
Share on:

আমার সেই গল্পটা এখনো শেষ হয়নি।
শোনো।
পাহাড়টা, আগেই বলেছি
ভালোবেসেছিলো মেঘকে
আর মেঘ কি ভাবে শুকনো খটখটে পাহাড়টাকে
বানিয়ে তুলেছিল ছাব্বিশ বছরের ছোকরা
সে তো আগেই শুনেছো।

সেদিন ছিলো পাহাড়টার জন্মদিন।
পাহাড় মেঘকে বললে
– আজ তুমি লাল শাড়ি পরে আসবে।
মেঘ পাহাড়কে বললে
– আজ তোমাকে স্নান করিয়ে দেবো চন্দন জলে।

ভালোবাসলে নারীরা হয়ে যায় নরম নদী
পুরুষেরা জ্বলন্ত কাঠ।
সেইভাবেই মেঘ ছিল পাহাড়ের আলিঙ্গনের আগুনে
পাহাড় ছিলো মেঘের ঢেউ-জলে।
হঠাৎ,
আকাশ জুড়ে বেজে উঠলো ঝড়ের জগঝম্প
ঝাঁকড়া চুল উড়িয়ে ছিনতাই এর ভঙ্গিতে ছুটে এল
এক ঝাঁক হাওয়া
মেঘের আঁচলে টান মেরে বললে
– ওঠ্‌ ছুঁড়ি! তোর বিয়ে ।

এখনো শেষ হয়নি গল্পটা।
বজ্রের সঙ্গে মেঘের বিয়েটা হয়ে গেলো ঠিকই
কিন্তু পাহাড়কে সে কোনোদিন ভুলতে পারলনা।
বিশ্বাস না হয় তো চিরে দেখতে পারো
পাহাড়টার হাড়-পাঁজর,
ভিতরে থৈথৈ করছে
শত ঝর্ণার জল।
Share on:

যে টেলিফোন আসার কথা সে টেলিফোন আসেনি।
প্রতীক্ষাতে প্রতীক্ষাতে
সূর্য ডোবে রক্তপাতে
সব নিভিয়ে একলা আকাশ নিজের শূণ্য বিছানাতে।
একান্তে যার হাসির কথা হাসেনি।
যে টেলিফোন আসার কথা আসেনি।

অপেক্ষমান বুকের ভিতর কাঁসন ঘন্টা শাঁখের উলু
একশ বনেরবাতাস এস একটা গাছে হুলুস্থুলু
আজ বুঝি তার ইচ্ছে আছে
ডাকবে আলিঙ্গনের কাছে
দীঘির পড়ে হারিয়ে যেতে সাঁতার জলের মত্ত নাচে।
এখনো কি ডাকার সাজে সাজেনি?
যে টেলিফোন বাজার কথা বাজেনি।
তৃষ্ণা যেন জলের ফোঁটা বাড়তে বাড়তে বৃষ্টি বাদল
তৃষ্ণা যেন ধূপের কাঠি গন্ধে আঁকে সুখের আদল
খাঁ খাঁ মনের সবটা খালি
মরা নদীর চড়ার বালি
অথচ ঘর দুয়ার জুড়ে তৃষ্ণা বাজায় করতালি।
প্রতীক্ষা তাই প্রহরবিহীন
আজীবন ও সর্বজনীন
সরোবর তো সবার বুকেই, পদ্ম কেবল পর্দানশীল।
স্বপ্নকে দেয় সর্বশরীর, সমক্ষে সে ভাসে না।
যে টেলিফোন আসার কথা সচরাচর আসে না।
Share on:

-কি করছো?
– ছবি আকঁছি।
– ওটা তো একটা বিন্দু।
– তুমি ছুঁয়ে দিলেই বৃত্ত হবে। কেন্দ্র হবে তুমি। আর আমি হবো বৃত্তাবর্ত।
– কিন্তু আমি যে বৃত্তে আবদ্ধ হতে চাই না। আমি চাই অসীমের অধিকার।
– একটু অপেক্ষা করো। . . . এবার দেখো।
ওটা কি? ওটা তো মেঘ।
– তুমি ছুঁয়ে দিলেই আকাশ হবে। তুমি হবে নি:সীম দিগন্ত। আর আমি হবো দিগন্তরেখা।
– কিন্তু সে তো অন্ধকার হলেই মিলিয়ে যাবে। আমি চিরন্তন হতে চাই।
– আচ্ছা, এবার দেখো।
– একি! এ তো জল।
– তুমি ছুঁয়ে দিলেই সাগর হবে। তিনভাগ জলের তুমি হবে জলকন্যা। আর আমি হবো জলাধার।
– আমার যে খন্ডিতে বিশ্বাস নেই। আমার দাবী সমগ্রের।
– একটু অপেক্ষা করো। এবার চোখ খোল।
– ওটা কি আঁকলে? ওটা তো একটা হৃদয়।
– হ্যাঁ, এটা হৃদয়। যেখানে তুমি আছো অসীম মমতায়, চিরন্তন ভালোবাসায়। এবার বলো আর কি চাই তোমার?
– সারাজীবন শুধু ওখানেই থাকতে চাই।
Share on:


এতো দেরী করলে কেন? সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি।
– কি করবো বলুন ম্যাডাম? টিউশনি শেষ করে বাইরে তখন ঝুম বৃষ্টি। আমার জন্যে তো আর গেইটের বাইরে মার্সিডিজ দাঁড়িয়ে থাকে না যে ড্রাইভারের কুর্নিশ নিতে নিতে হুট করে ঢুকে পড়বো। তাই ঝুম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, কাদা-জল ভেঙ্গে, গরীবের গাড়ি মানে দু’পায়ের উপর ভরসা করেই আসতে হয় আপনার আমন্ত্রণ রক্ষা করতে। তবে আজ রিক্সায় করে এসেছি নইলে একেবারে কাকভেজা হয়ে যেতাম। রিক্সা খুঁজে পেতেই যা দেরী হলো।
: ইস্ বেশ ভিজে গেছো দেখছি। কাছে এসো তো, রুমাল দিয়ে মুছে দিই।
– ওহো, আমি তো ভেবেছিলাম তোমার শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দেবে। ঠিক আছে, রুমালই সই।
: না মিস্টার, ওটা ভবিষ্যতের জন্য জমা থাকুক। যখন তোমার বউ হবো তখন ইচ্ছেটা পূরণ হবে।
– আচ্ছা। আর যদি তা না হও, তবে আমি বুড়ো বয়েসে পান চিবোতে চিবোতে কোন এক বাদলঘন দিনে বসে বসে রোমন্থন করবো আজকের এই রুমালি ভালোবাসাময় সময়টাকে। নাতিপুতিকে তখন প্রথম প্রেমিকা আর এই রুমালটার গল্প শোনাবো।
: প্লিজ, এভাবে বলো না। কেন আমি তোমাকে পাবো না? তুমি কি আমাকে চাও না? আমাকে ভালোবাসো না?
– উত্তরটা আসলে একটু কঠিন। তোমাকে চাই আবার চাই না। ভালোবাসি আবার বাসি না।
: হেয়াঁলি রাখো। আমি স্পষ্ট জানতে চাই।
– তবে শোন। আমার প্রতিদিনের জীবন সংগ্রামের নির্মম বাস্তবতা তোমার জানা নেই। সেই জীবনে তুমি কখনো অভ্যস্ত হতে পারবেও না। তোমাকে একটা প্রশ্ন করি?
: হ্যাঁ, করো।
– একটু আগে একটা টং-এর দোকানের ছাউনিতে গা বাচিয়ে রিক্সা খুঁজছিলাম। খুব শীত শীত লাগছিলো, তখন চা খেয়েছিলাম ভাঙ্গা কাপে। আধধোয়া সে কাপে লেগেছিলো অনেক মেহনতি মানুষের ঠোঁটের ছোঁয়া, লেগেছিলো থুতুও যা এখনো আমার ঠোঁটে লেগে আছে। তুমি কি পারবে সেই ঠোঁটে চুমু খেতে?
Share on:
  • ← Previous post
  • Next Post →
Facebook Twitter Gplus RSS

All Category List

  • All Videos (20)
  • Percy Bysshe Shelley (1)
  • Short Biography (15)
  • অমিয় চক্রবর্তী (5)
  • আনিসুল হক (1)
  • আপনি যখন কবি (2)
  • আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ (2)
  • আবুল হাসান (12)
  • আব্দুল হাকিম (1)
  • আল মাহমুদ (5)
  • আসাদ চৌধুরী (3)
  • আহসান হাবীব (5)
  • উৎপলকুমার বসু (1)
  • কাজী নজরুল ইসলাম (16)
  • কামিনী রায় (1)
  • কায়কোবাদ (3)
  • চিত্তরঞ্জন দাশ (6)
  • জয় গোস্বামী (9)
  • জসীম উদ্দিন (18)
  • জহির রায়হান (1)
  • জীবনানন্দ দাশ (18)
  • তসলিমা নাসরিন (6)
  • তারাপদ রায় (2)
  • দাউদ হায়দার (4)
  • নির্মলেন্দু গুণ (45)
  • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (1)
  • পুর্ণেন্দু পত্রী (15)
  • প্রেমেন্দ্র মিত্র (1)
  • ফকির লালন সাঁই (1)
  • ফররুখ আহমেদ (1)
  • বিষ্ণু দে (2)
  • বুদ্ধদেব বসু (2)
  • বেগম সুফিয়া কামাল (2)
  • ময়ুখ চৌধুরী (2)
  • মল্লিকা সেনগুপ্ত (2)
  • মহাদেব সাহা (11)
  • মাইকেল মধুসূদন দত্ত (1)
  • মাহবুব উল আলম চৌধুরী (1)
  • মোফাজ্জল করিম (1)
  • যতীন্দ্র মোহন বাগচী (1)
  • রজনীকান্ত সেন (1)
  • রফিক আজাদ (4)
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (26)
  • রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ (10)
  • রেজাউদ্দিন স্টালিন (1)
  • রোকনুজ্জামান খান (1)
  • শক্তি চট্টোপাধ্যায় (10)
  • শঙ্খ ঘোষ (7)
  • শহীদ কাদরী (2)
  • শামসুর রাহমান (11)
  • শিমুল মুস্তাফা (1)
  • সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (5)
  • সমর সেন (2)
  • সমুদ্র গুপ্ত (5)
  • সুকান্ত ভট্টাচার্য (8)
  • সুকুমার বড়ুয়া (1)
  • সুকুমার রায় (5)
  • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (21)
  • সুভাষ মুখোপাধ্যায় (3)
  • সৈয়দ শামসুল হক (3)
  • হুমায়ুন আজাদ (14)
  • হেলাল হাফিজ (23)

Blog Archive

  • ►  2019 (1)
    • ►  March (1)
  • ▼  2018 (396)
    • ►  July (37)
    • ▼  June (253)
      • এত হাসি কোথায় পেলে – জসীম উদ্দিন
      • প্রতিদান – জসীমউদ্দীন
      • কবর – জসীম উদ্দিন
      • সোনার তরী – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • নিমন্ত্রণ – জসীম উদ্দিন
      • যেতে নাহি দিব – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • যাবার দিন – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • অনন্ত প্রেম – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • সমালোচক – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • মেঘের পরে মেঘ জমেছে – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • সোজাসুজি -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • মৃত্যুর পরে – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • হিং টিং ছট্ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • আমাকে একটি কথা দাও – জীবনানন্দ দাশ
      • আমাদের ছোট নদী – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • ১৪০০ সাল – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • আমার মাঝে তোমার লীলা হবে – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • আগমন – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • মাস্টার বাবু – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • পুরাতন ভৃত্য – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • এই পৃথিবীতে আমি অবসর নিয়ে শুধু আসিয়াছি – জীবনানন্দ...
      • কাগজের নৌকা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • এসো হে বৈশাখ এসো এসো – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • নীলিমা – জীবনানন্দ দাশ
      • প্রতীক্ষা – রফিক আজাদ
      • তোমার কথা ভেবে – রফিক আজাদ
      • ভালোবাসার সংজ্ঞা – রফিক আজাদ
      • যদি ভালবাসা পাই – রফিক আজাদ
      • স্বাধীনতার সুখ – রজনীকান্ত সেন
      • কাজলা দিদি – যতীন্দ্র মোহন বাগচী
      • নেশা – মোফাজ্জল করিম
      • মুক্তিযুদ্ধের কবিতা – বুদ্ধদেব বসু
      • নদী-স্বপ্ন – বুদ্ধদেব বসু
      • উর্বশী – বিষ্ণু দে
      • এবং লখিন্দর! – বিষ্ণু দে
      • পাঞ্জেরি – ফররুখ আহমেদ
      • এমন মানব জনম আর কি হবে – ফকির লালন সাঁই
      • তালগাছ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (সেই ক্ল্যাসিক কবিতা)
      • কৃষ্ণকলি – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • যদি আমি ঝরে যাইএকদিন – জীবনানন্দ দাশ
      • সেই গল্পটা – পূর্ণেন্দু পত্রী
      • যে টেলিফোন আসার কথা -পুর্ণেন্দু পত্রী
      • কথোপকথন – ১ – পুর্ণেন্দু পত্রী
      • কথোপকথন-২ – পুর্ণেন্দু পত্রী
      • কথোপকথন – ৩ -পূর্ণেন্দু পত্রী
      • বীরপুরুষ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (সকল মায়ের জন্য রইল শ...
      • কথোপকথন – ৪ – পূর্ণেন্দু পত্রী
      • কথোপকথন ৫ – পূর্ণেন্দু পত্রী
      • কথোপকথন ৬ – পূর্ণেন্দু পত্রী
      • কথোপকথন ১১ – পুর্ণেন্দু পত্রী
      • কথোপকথন – ৭ – পুর্ণেন্দু পত্রী
      • নিষিদ্ধ ভালোবাসার তিন সাক্ষী – পুর্ণেন্দু পত্রী
      • কথোপকথন – ২১ – পুর্ণেন্দু পত্রী
      • স্মৃতি বড় উচ্ছৃঙ্খল – পুর্ণেন্দু পত্রী
      • নগ্ন নির্জন হাত – জীবনানন্দ দাশ
      • নির্জন স্বাক্ষর – জীবনানন্দ দাশ
      • লোকেন বোসের জার্নাল – জীবনানন্দ দাশ
      • স্বপ্নের হাত – জীবনানন্দ দাশ
      • দান – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • জুতা-আবিষ্কার – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • নিরুদ্দেশ যাত্রা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • হঠাৎ দেখা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • হে স্তন্যদায়িনী – পুর্ণেন্দু পত্রী
      • একমুঠো জোনাকী – পুর্ণেন্দু পত্রী
      • ওটা কিছু নয় – নির্মলেন্দু গুণ
      • মানুষ – নির্মলেন্দু গুণ
      • আমি চলে যাচ্ছি – নির্মলেন্দু গুণ
      • সেই রাত্রির কল্পকাহিনী – নির্মলেন্দু গুণ
      • তুলনামূলক হাত – নির্মলেন্দু গুণ
      • তোমার চোখ এতো লাল কেন – নির্মলেন্দু গুন
      • আমাকে কী মাল্য দেবে, দাও – নির্মলেন্দু গুণ
      • টেলিফোনে প্রস্তাব – নির্মলেন্দু গুণ
      • হুলিয়া – নির্মলেন্দু গুণ (এক কথায় অসাধারণ)
      • ভালোবাসা, ভারসাম্যহীন – নির্মলেন্দু গুণ
      • চির অনাবৃতা হে নগ্নতমা – নির্মলেন্দু গুণ
      • এবারই প্রথম তুমি – নির্মলেন্দু গুণ
      • আকাশ – নির্মলেন্দু গুন
      • মুখোমুখি – নির্মলেন্দু গুণ
      • দু’জনের ভাত – নির্মলেন্দু গুণ
      • আক্রোশ – নির্মলেন্দু গুণ
      • যাত্রা-ভঙ্গ – নির্মলেন্দু গুণ
      • গতকাল একদিন – নির্মলেন্দু গুণ
      • এক ধরনের এপিটাফ – নির্মলেন্দু গুণ
      • আসমানী প্রেম – নির্মলেন্দু গুণ
      • শুধু তোমার জন্য – নির্মলেন্দু গুণ
      • এপিটাফ – নির্মলেন্দু গুণ
      • স্ববিরোধী – নির্মলেন্দু গুণ
      • পতিগৃহে পুরোনো প্রেমিক – নির্মলেন্দু গুণ
      • স্বাধীনতা, উলঙ্গ কিশোর – নির্মলেন্দু গুণ
      • স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো – নির্মলেন্...
      • পূর্ণিমার মধ্যে মৃত্যু – নির্মলেন্দু গুণ
      • হুলিয়া – নির্মলেন্দু গুণ
      • তোমার পায়ের নিচে পৃথিবীর ঘাস – নির্মলেন্দু গুণ
      • উপেক্ষা – নির্মলেন্দু গুণ
      • আগ্নেয়াস্ত্র – নির্মলেন্দু গুণ
      • আকাশ ও মানুষ – নির্মলেন্দু গুণ
      • আবার যখনই দেখা হবে – নির্মলেন্দু গুণ
      • আকাশ সিরিজ – নির্মলেন্দু গুণ
      • আমার কিছু স্বপ্ন ছিল – নির্মলেন্দু গুণ
    • ►  May (24)
    • ►  April (29)
    • ►  March (13)
    • ►  February (22)
    • ►  January (18)
  • ►  2017 (17)
    • ►  December (14)
    • ►  November (2)
    • ►  October (1)

Translate Your Own Laguage

FB Page

Total Pageviews

Popular Posts

  • Those days of school life - স্কুল লাইফের সেই দিন গুলো || Love Bit
    Those days of school life - স্কুল লাইফের সেই দিন গুলো || Love Bit
  • Obohela (অবহেলা) Part#1 - Bangla New Sad Love Story 😭😥😥 Love Bit
    Obohela (অবহেলা) Part#1 - Bangla New Sad Love Story 😭😥😥 Love Bit
  • মেঘ বলতে আপত্তি কি ? – জয় গোস্বামী
    মেঘ বলতে আপত্তি কি ? – জয় গোস্বামী

Tags

All Videos (20) Percy Bysshe Shelley (1) Short Biography (15) অমিয় চক্রবর্তী (5) আনিসুল হক (1) আপনি যখন কবি (2) আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ (2) আবুল হাসান (12) আব্দুল হাকিম (1) আল মাহমুদ (5) আসাদ চৌধুরী (3) আহসান হাবীব (5) উৎপলকুমার বসু (1) কাজী নজরুল ইসলাম (16) কামিনী রায় (1) কায়কোবাদ (3) চিত্তরঞ্জন দাশ (6) জয় গোস্বামী (9) জসীম উদ্দিন (18) জহির রায়হান (1) জীবনানন্দ দাশ (18) তসলিমা নাসরিন (6) তারাপদ রায় (2) দাউদ হায়দার (4) নির্মলেন্দু গুণ (45) নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (1) পুর্ণেন্দু পত্রী (15) প্রেমেন্দ্র মিত্র (1) ফকির লালন সাঁই (1) ফররুখ আহমেদ (1) বিষ্ণু দে (2) বুদ্ধদেব বসু (2) বেগম সুফিয়া কামাল (2) ময়ুখ চৌধুরী (2) মল্লিকা সেনগুপ্ত (2) মহাদেব সাহা (11) মাইকেল মধুসূদন দত্ত (1) মাহবুব উল আলম চৌধুরী (1) মোফাজ্জল করিম (1) যতীন্দ্র মোহন বাগচী (1) রজনীকান্ত সেন (1) রফিক আজাদ (4) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (26) রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ (10) রেজাউদ্দিন স্টালিন (1) রোকনুজ্জামান খান (1) শক্তি চট্টোপাধ্যায় (10) শঙ্খ ঘোষ (7) শহীদ কাদরী (2) শামসুর রাহমান (11) শিমুল মুস্তাফা (1) সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (5) সমর সেন (2) সমুদ্র গুপ্ত (5) সুকান্ত ভট্টাচার্য (8) সুকুমার বড়ুয়া (1) সুকুমার রায় (5) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (21) সুভাষ মুখোপাধ্যায় (3) সৈয়দ শামসুল হক (3) হুমায়ুন আজাদ (14) হেলাল হাফিজ (23)
latest comments
Hercules Design @Hercules_group
@billykulpa Please contact us via info@hercules-design.com
Reply Retweet Favorite

06 May 2014

Hercules Design @Hercules_group
@billykulpa Please contact us via info@hercules-design.com
Reply Retweet Favorite

06 May 2014

Hercules Design @Hercules_group
@billykulpa Please contact us via info@hercules-design.com
Reply Retweet Favorite

06 May 2014

This blog is to provide you with daily outfit ideas and share my personal style. This is a super clean and elegant WordPress theme for every bloggers. Theme is perfect for sharing all sorts of media online. Photos, videos, quotes, links... etc.

Facebook Twitter Gplus Youtube

Love Bit

LoveBit is a Love Relationship Blog

  • Home
Copyright © LoveZoneBD. All Right Reserved.Developed By ArlenDevs
Created By SoraTemplates | Distributed By MyBloggerThemes