Powered by Blogger.
Love Bit
  • Home
  • All Videos
  • All Poem
  • Short Biography
  • About Us
  • Contact Us

CATEGORY >

Showing posts with label শামসুর রাহমান. Show all posts

একটি পাখী রোজ আমার জানালায়
আস্তে এসে বসে, তাকায় আশেপাশে।
কখনো দেয় শিস, বাড়ায় গলা তার;
আবার কখনোবা পাখাটা ঝাপটায়।

পালকে তার আঁকা কিসের ছবি যেন,
দু’চোখে আছে জমা মেঘের স্মৃতি কিছু;
নদীর স্বপ্নের জলজ কণাগুলি
এখনো তাঁর ঠোটে হয়তো গচ্ছিত।

কাউকে নীড়ে তার এসেছে ফেলে বুঝি?
হয়তো সেই নীড়, আকাশই আস্তানা।
তাই তো চোখ তার এমন গাঢ় নীল,
মেললে পাখা জাগে নীলের উৎসব।

যখন লিখি আমি টেবিলে ঝুঁকে আর
পড়তে বসি বই, তখন সেই পাখি
চকিতে দোল খায় আমার জানালায়-
খাতার পাতা জুড়ে ছড়িয়ে দেয় খুশি।

আমার মৃত্যুর পরেও যদি সেই
সুনীল পাখি আসে আমার জানালায়,
আবার শিস দেয়, আমার বইখাতা
যদি সে ঠোকরায়, দিও না বাধা তাকে।
Share on:

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা,
তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?

তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো,
সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর।
তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
শহরের বুকে জলপাইয়ের রঙের ট্যাঙ্ক এলো
দানবের মত চিৎকার করতে করতে
তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
ছাত্রাবাস বস্তি উজাড় হলো। রিকয়েললেস রাইফেল
আর মেশিনগান খই ফোটালো যত্রতত্র।
তুমি আসবে ব’লে, ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম।
তুমি আসবে ব’লে, বিধ্বস্ত পাড়ায় প্রভূর বাস্তুভিটার
ভগ্নস্তূপে দাঁড়িয়ে একটানা আর্তনাদ করলো একটা কুকুর।
তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিলো পিতামাতার লাশের উপর।

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?
স্বাধীনতা, তোমার জন্যে এক থুত্থুরে বুড়ো
উদাস দাওয়ায় ব’সে আছেন – তাঁর চোখের নিচে অপরাহ্ণের
দুর্বল আলোর ঝিলিক, বাতাসে নড়ছে চুল।
স্বাধীনতা, তোমার জন্যে
মোল্লাবাড়ির এক বিধবা দাঁড়িয়ে আছে
নড়বড়ে খুঁটি ধ’রে দগ্ধ ঘরের।

স্বাধীনতা, তোমার জন্যে
হাড্ডিসার এক অনাথ কিশোরী শূন্য থালা হাতে
বসে আছে পথের ধারে।
তোমার জন্যে,
সগীর আলী, শাহবাজপুরের সেই জোয়ান কৃষক,
কেষ্ট দাস, জেলেপাড়ার সবচেয়ে সাহসী লোকটা,
মতলব মিয়া, মেঘনা নদীর দক্ষ মাঝি,
গাজী গাজী ব’লে নৌকা চালায় উদ্দান ঝড়ে
রুস্তম শেখ, ঢাকার রিকশাওয়ালা, যার ফুসফুস
এখন পোকার দখলে
আর রাইফেল কাঁধে বনে জঙ্গলে ঘুড়ে বেড়ানো
সেই তেজী তরুণ যার পদভারে
একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হ’তে চলেছে –
সবাই অধীর প্রতীক্ষা করছে তোমার জন্যে, হে স্বাধীনতা।

পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জলন্ত
ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে,
মতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক
এই বাংলায়
তোমাকেই আসতে হবে, হে স্বাধীনতা।
Share on:

স্বাধীনতা তুমি
রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।
Share on:

‘এই যে আসুন, তারপর কী খবর?
আছেন তো ভাল? ছেলেমেয়ে?’ কিছু আলাপের পর
দেখিয়ে সফেদ দেয়ালের শান্ত ফটোগ্রাফটিকে
বললাম জিজ্ঞাসু অতিথিকে–
‘এই যে আমার ছোট ছেলে, যে নেই এখন,
পাথরের টুকরোর মতন
ডুবে গেছে আমাদের গ্রামের পুকুরে
বছর-তিনেক আগে কাক-ডাকা গ্রীষ্মের দুপুরে।’

কী সহজে হয়ে গেল বলা,
কাঁপলো না গলা
এতটুকু, বুক চিরে বেরুলো না দীর্ঘশ্বাস, চোখ ছলছল
করলো না এবং নিজের কন্ঠস্বর শুনে
নিজেই চমকে উঠি, কি নিস্পৃহ, কেমন শীতল।
তিনটি বছর মাত্র তিনটি বছর
কত উর্ণাজাল বুনে
কেটেছে, অথচ এরই মধ্যে বাজখাঁই
কেউ যেন আমার শোকের নদীটিকে কত দ্রুত রুক্ষ চর
করে দিলো। অতিথি বিদায় নিলে আবার দাঁড়াই
এসে ফটোগ্রাফটির প্রশ্নাকুল চোখে,
ক্ষীয়মান শোকে।

ফ্রেমের ভেতর থেকে আমার সন্তান
চেয়ে থাকে নিষ্পলক,তার চোখে নেই রাগ কিংবা অভিমান।
Share on:

কখনো আমার মাকে কোনো গান গাইতে শুনিনি।
সেই কবে শিশু রাতে ঘুম পাড়ানিয়া গান গেয়ে
আমাকে কখনো ঘুম পাড়াতেন কি না আজ মনেই পড়ে না।
যখন শরীরে তার বসন্তের সম্ভার আসেনি,
যখন ছিলেন তিনি ঝড়ে আম-কুড়িয়ে বেড়ানো
বয়সের কাছাকাছি হয়তো তখনো কোনো গান
লতিয়ে ওঠেনি মীড়ে মীড়ে দুপুরে সন্ধ্যায়,
পাছে গুরুজনদের কানে যায়। এবং স্বামীর
সংসারে এসেও মা আমার সারাক্ষণ
ছিলেন নিশ্চুপ বড়ো, বড়ো বেশি নেপথ্যচারিণী। যতদূর
জানা আছে, টপ্পা কি খেয়াল তাঁকে করেনি দখল
কোনোদিন। মাছ কোটা কিংবা হলুদ বাটার ফাঁকে
অথবা বিকেলবেলা নিকিয়ে উঠোন
ধুয়ে মুছে বাসন-কোসন
সেলাইয়ের কলে ঝুঁকে, আলনায় ঝুলিয়ে কাপড়,
ছেঁড়া শার্টে রিফু কর্মে মেতে
আমাকে খেলার মাঠে পাঠিয়ে আদরে
অবসরে চুল বাঁধবার ছলে কোনো গান গেয়েছেন কি না
এতকাল কাছাকাছি আছি তবু জানতে পারিনি।
যেন তিনি সব গান দুঃখ-জাগানিয়া কোনো কাঠের সিন্দুকে
রেখেছেন বন্ধ ক’রে আজীবন, এখন তাদের
গ্রন্থিল শরীর থেকে কালেভদ্রে সুর নয়, শুধু
ন্যাপথলিনের তীব্র ঘ্রাণ ভেসে আসে !
Share on:

তুমি আমাকে ভুলে যাবে, আমি ভাবতেই পারি না।
আমাকে মন থেকে মুছে ফেলে
তুমি
আছো এই সংসারে, হাঁটছো বারান্দায়, মুখ দেখছো
আয়নায়, আঙুলে জড়াচ্ছো চুল, দেখছো
তোমার সিঁথি দিয়ে বেরিয়ে গেছে অন্তুহীন উদ্যানের পথ, দেখছো
তোমার হাতের তালুতে ঝলমল করছে রূপালি শহর,
আমাকে মন থেকে মুছে ফেলে
তুমি অস্তিত্বের ভূভাগে ফোটাচ্ছো ফুল
আমি ভাবতেই পারি না।

যখনই ভাবি, হঠাৎ কোনো একদিন তুমি
আমাকে ভুলে যেতে পারো,
যেমন ভুলে গেছো অনেকদিন আগে পড়া
কোনো উপন্যাস, তখন ভয়
কালো কামিজ প’রে হাজির হয় আমার সামনে,
পায়চারি করে ঘন ঘন মগজের মেঝেতে,
তখন
একটা বুনো ঘোড়া খুরের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে আমাকে,
আর আমার আর্তনাদ ঘুরপাক খেতে খেতে
অবসন্ন হয়ে নিশ্চুপ এক সময়, যেমন
ভ্রষ্ট পথিকের চিৎকার হারিয়ে যায় বিশাল মরুভূমিতে।

বিদায় বেলায় সাঝটাঝ আমি মানি না
আমি চাই ফিরে এসো তুমি
স্মৃতি বিস্মৃতির প্রান্তর পেরিয়ে
শাড়ীর ঢেউ তুলে,সব অশ্লীল চিৎকার
সব বর্বর বচসা স্তব্দ করে
ফিরে এসো তুমি, ফিরে এসো
স্বপ্নের মতো চিলেকোঠায়
মিশে যাও স্পন্দনে আমার।

কোথায় আমাদের সেই অনুচ্চারিত অঙ্গীকার?
কোথায় সেই অঙ্গীকার
যা রচিত হয়েছিলো চোখের বিদ্যুতের বর্ণমালায়?
আমরা কি সেই অঙ্গীকারে দিইনি এঁটে
আমাদের চুম্বনের সীলমোহর?
আমি ভাবতেই পারি না সেই পবিত্র দলিল ধুলোয় লুটিয়ে
দুপাশে মাড়িয়ে, পেছনে একটা চোরাবালি রেখে
তুমি চলে যাবে স্তব্ধতার গলায় দীর্ঘশ্বাস পুরে।

আমার চোখ মধ্যদিনের পাখির মতো ডেকে বলছে- তুমি এসো,
আমার হাত কাতর, ভায়োলিন হয়ে ডাকছে- তুমি এসো,
আমার ঠোঁট তৃষ্ণার্ত তটরেখার মতো ডাকছে- তুমি এসো।

যদি তুমি ফিরে না আসো
গীতবিতানের শব্দমালা মরুচারী পাখির মতো
কর্কশ পাখসাটে মিলিয়ে যাবে শূন্যে,
আর্ট গ্যালারীর প্রতিটি চিত্রের জায়গায় জুড়ে থাকবে
হা-হা শূন্যতা,
ভাস্করের প্রতিটি মুর্তি পুনরায় হয়ে যাবে কেবলি পাথর,
সবগুলো সেতার, সরোদ, গীটার, বেহালা
শুধু স্তুপ স্তুপ কাষ্ঠখন্ড হয়ে পড়ে থাকবে এক কোণে।

যদি তুমি ফিরে না আসো,
গরুর ওলান থেকে উধাও হবে দুধের ধারা,
প্রত্যেকটি রাজহাঁসের পালক ঝরে যাবে,
পদ্মায় একটি মেয়ে ইলিশও আর ছাড়বে না ডিম।

যদি তুমি ফিরে না আসো,
ত্রাণ তহবিলে একটি কনাকড়িও জমা হবে না,
বেবী ফুডের প্রত্যেকটি কৌটায় গুড়ো দুধ নয়
কিলবিল করবে শুধু পোকামাকড়।

যদি তুমি ফিরে না আসো,
দেশের প্রত্যেক চিত্রকর বর্ণের অলৌকিক ব্যাকরণ
ভুল মেরে বসে থাকবেন, প্রত্যেক কবির খাতায়
কবিতার পংক্তির বদলে পড়ে থাকবে রাশি রাশি মরা মাছি।

যদি তুমি ফিরে না আসো,
এ দেশের প্রতিটি বালিকা
থুত্থুরে বুড়ি হয়ে যাবে এক পলকে,
এ দেশের প্রত্যেকটি যুবক খাবে মৃত্যুর মাত্রায়
ঘুমের বড়ি কিংবা গলায় দেবে দড়ি।

যদি তুমি ফিরে না আসো,
ভোরের শীতার্ত হাওয়ায় কান্না-পাওয়া চোখে নজরুল ইসলাম
হতদন্ত হয়ে ফেরি করবেন হরবোলা সংবাদপত্র।

যদি তুমি ফিরে না আসো,
সুজলা বাংলাদেশের প্রতিটি জলাশয় যাবে শুকিয়ে,
সুফলা শস্যশ্যামলা বাংলাদেশের
প্রতিটি শস্যক্ষেত্র পরিণত হবে মরুভূমির বালিয়াড়িতে,
বাংলাদেশের প্রতিটি গাছ হয়ে যাবে পাথরের গাছ,
প্রতিটি পাখি মাটির পাখি।
Share on:

এতকাল ছিলাম একা আর ব্যথিত,
আহত পশুর অনুভবে ছেঁড়াখোঁড়া।
দুর্গন্ধ-ভরা গুহাহিত রাত নিস্ফল ক্রোধে দীর্ণ,
শীর্ণ হাহাকার ছাড়া গান ছিল না মনে,
জানি প্রাণে ছিল না সতেজ পাতার কানাকানি
এমনকি মরম্নভূমির তীব্রতাও ছিল না ধমনীতে,
স্বপ্ন ছিল না,
ছিল না স্বপ্নের মতো হৃদয়।

কে জানতো এই খেয়ালি পতঙ্গ, শীতের ভোর,
হাওয়ায় হাওয়ায় মর্মরিত গাছ,
ঘাসে-ঢাকা জমি, ছায়া-মাখা শালিক
প্রিয় গানের কলি হয়ে গুঞ্জরিত হবে
ধমনীতে, পেখম মেলবে নানা রঙের মুহূর্তে।
কে জানতো লেখার টেবিলে রাখা বাসি রম্নটি
আর ফলের শুকনো খোসাগুলো
তাকাবে আমার দিকে অপলক
আত্মীয়ের মতো?
Share on:

জেনেছি কাকে চাই, কে এলে চোখে ফোটে
নিমেষে শরতের খুশির জ্যোতিকণা;
কাঁপি না ভয়ে আর দ্বিধার নেই দোলা
এবার তবে রাতে হাজার দীপ জ্বেলে
সাজাবো তার পথ যদি সে হেঁটে আসে।
যদি সে হেঁটে আসে, প্রাণের ছায়াপথ
ফুলের মতো ফুটে তারার মতো ফুটে
জ্বলবে সারারাত, ঝরবে সারারাত।
জেনেছি কাকে চাই, বলি না তার নাম
ভিড়ের ত্রিসীমায়; স্বপ্ন-ধ্বনি শুধু
হৃদয়ে বলে নাম, একটি মৃদু নাম।
Share on:

বার বার ফিরে আসে রক্তাপ্লুত শার্ট
ময়দানে ফিরে আসে, ব্যাপক নিসর্গে ফিরে আসে,
ফিরে আসে থমথমে শহরের প্রকাণ্ড চোয়ালে।
হাওয়ায় হাওয়ায় ওড়ে, ঘোরে হাতে হাতে,
মিছিলে পতাকা হয় বারবার রক্তাপ্লুত শার্ট।
বিষম দামাল দিনগুলি ফিরে আসে বারবার,
বারবার কল্লোলিত আমাদের শহর ও গ্রাম।

‘আবার আসবো ফিরে’ ব’লে সজীব কিশোর
শার্টের আস্তিন দ্রুত গোটাতে গোটাতে
শ্লোগানের নিভাঁজ উল্লাসে
বারবার মিশে যায় নতুন মিছিলে, ফেরে না যে আর।
একটি মায়ের চোখ থেকে
করুণ প্লাবন মুছে যেতে না যেতেই
আরেক মায়ের চোখ শ্রাবণের অঝোরে আকাশ হ’য়ে যায়।
একটি বধূর
সংসার উজাড়-করা হাহাকার থামতে না থামতেই, হায়,
আরেক বধূর বুক খাঁ-খাঁ গোরস্থান হ’য়ে যায়,
একটি পিতার হাত থেকে কবরের কাঁচা মাটি
ঝ’রে পড়তে না পড়তেই
আরেক পিতার বুক-শূন্য-করা গুলিবিদ্ধ সন্তানের লাশ
নেমে যায় নীরন্ধ্র কবরে।

বারবার ফিরে আসে রক্তাপ্লুত শার্ট,
ময়দানে ফিরে আসে, ব্যাপক নিসর্গে ফিরে আসে,
ফিরে আসে থমথমে শহরের প্রকাণ্ড চোয়ালে।
উনিশ শো উনসত্তরের
তরুণ চীৎকৃত রৌদ্রে যে-ছেলেটা খেলতো রাস্তায়,
বানাতো ধুলোর দুর্গ, খেতো লুটোপুটি নর্দমার ধারে
বিস্ময়ে দেখতো চেয়ে ট্রাক, জীপ,
রাইফেল, টিউনিক, বেয়োনেট, বুট, হেলমেট,
এখন সে টলমল পদভরে শরীক মিছিলে।
লাজনম্র যে মেয়েটি থাকতো আড়ালে সর্বক্ষণ,
যে ছিল অসূর্যস্পশ্যা, এখন সে ঝলসায় মিছিলে মিছিলে।
তাদের পায়ের নিচে করে জ্বলজ্বল নীল নকশা নব্য সভ্যতার।

বারবার ফিরে আসে রক্তাপ্লুত শার্ট,
ময়দানে ফিরে আসে, ব্যাপক নিসর্গে ফিরে আসে,
ফিরে আসে থমথমে শহরের প্রকাণ্ড চোয়ালে।
হতাশাকে লাথি মেরে, ভয়কে বেদম লাঠি পেটা ক’রে
সবখানের শ্লোগানের ফুলকি ছড়াই।
বারবার আমাদের হাত হয় উদ্দাম নিশান,
বারবার ঝড়ক্ষুব্ধ পদ্মা হই আমরা সবাই।

আমাকেই হত্যা করে ওরা, বায়ান্নোর রৌদ্রময় পথে,
আমাকেই হত্যা করে ওরা
উনসত্তরের বিদ্রোহী প্রহরে,
একাত্তরে পুনরায় হত্যা করে ওরা আমাকেই
আমাকেই হত্যা করে ওরা
পথের কিনারে
এভন্যুর মোড়ে
মিছিলে, সভায়-
আমাকেই হত্যা করে, ওরা হত্যা করে বারবার।
তবে কি আমার
বাংলাদেশ শুধু এক সুবিশাল শহীদ মিনার হ’য়ে যাবে ?
Share on:

তুমি হে সুন্দরীতমা নীলিমার দিকে তাকিয়ে বলতেই পারো
‘এই আকাশ আমার’
কিন্তু নীল আকাশ কোনো উত্তর দেবেনা।

সন্ধ্যেবেলা ক্যামেলিয়া হাতে নিয়ে বলতেই পারো,
‘ফুল তুই আমার’
তবু ফুল থাকবে নীরব নিজের সৌরভে আচ্ছন্ন হয়ে।

জ্যোত্স্না লুটিয়ে পড়লে তোমার ঘরে,
তোমার বলার অধিকার আছে, ‘এ জ্যোত্স্না আমার’
কিন্তু চাঁদিনী থাকবে নিরুত্তর।

মানুষ আমি, আমার চোখে চোখ রেখে
যদি বলো, ‘তুমি একান্ত আমার’, কী করে থাকবো নির্বাক ?
তারায় তারায় রটিয়ে দেবো, ‘আমি তোমার, তুমি আমার’।
Share on:

এই নিয়েছে ঐ নিল যাঃ! কান নিয়েছে চিলে,
চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে।
কানের খোঁজে ছুটছি মাঠে, কাটছি সাঁতার বিলে,
আকাশ থেকে চিলটাকে আজ ফেলব পেড়ে ঢিলে।

দিন-দুপুরে জ্যান্ত আহা, কানটা গেল উড়ে,
কান না পেলে চার দেয়ালে মরব মাথা খুঁড়ে।
কান গেলে আর মুখের পাড়ায় থাকল কি-হে বল?
কানের শোকে আজকে সবাই মিটিং করি চল।

যাচ্ছে, গেল সবই গেল, জাত মেরেছে চিলে,
পাঁজি চিলের ভূত ছাড়াব লাথি-জুতো কিলে।
সুধী সমাজ! শুনুন বলি, এই রেখেছি বাজি,
যে-জন সাধের কান নিয়েছে জান নেব তার আজই।

মিটিং হল ফিটিং হল, কান মেলে না তবু,
ডানে-বাঁয়ে ছুটে বেড়াই মেলান যদি প্রভু!
ছুটতে দেখে ছোট ছেলে বলল, কেন মিছে
কানের খোঁজে মরছ ঘুরে সোনার চিলের পিছে?

নেইকো খালে, নেইকো বিলে, নেইকো মাঠে গাছে;
কান যেখানে ছিল আগে সেখানটাতেই আছে।
ঠিক বলেছে, চিল তবে কি নয়কো কানের যম?
বৃথাই মাথার ঘাম ফেলেছি, পণ্ড হল শ্রম।
Share on:
  • ← Previous post
Facebook Twitter Gplus RSS

All Category List

  • All Videos (20)
  • Percy Bysshe Shelley (1)
  • Short Biography (15)
  • অমিয় চক্রবর্তী (5)
  • আনিসুল হক (1)
  • আপনি যখন কবি (2)
  • আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ (2)
  • আবুল হাসান (12)
  • আব্দুল হাকিম (1)
  • আল মাহমুদ (5)
  • আসাদ চৌধুরী (3)
  • আহসান হাবীব (5)
  • উৎপলকুমার বসু (1)
  • কাজী নজরুল ইসলাম (16)
  • কামিনী রায় (1)
  • কায়কোবাদ (3)
  • চিত্তরঞ্জন দাশ (6)
  • জয় গোস্বামী (9)
  • জসীম উদ্দিন (18)
  • জহির রায়হান (1)
  • জীবনানন্দ দাশ (18)
  • তসলিমা নাসরিন (6)
  • তারাপদ রায় (2)
  • দাউদ হায়দার (4)
  • নির্মলেন্দু গুণ (45)
  • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (1)
  • পুর্ণেন্দু পত্রী (15)
  • প্রেমেন্দ্র মিত্র (1)
  • ফকির লালন সাঁই (1)
  • ফররুখ আহমেদ (1)
  • বিষ্ণু দে (2)
  • বুদ্ধদেব বসু (2)
  • বেগম সুফিয়া কামাল (2)
  • ময়ুখ চৌধুরী (2)
  • মল্লিকা সেনগুপ্ত (2)
  • মহাদেব সাহা (11)
  • মাইকেল মধুসূদন দত্ত (1)
  • মাহবুব উল আলম চৌধুরী (1)
  • মোফাজ্জল করিম (1)
  • যতীন্দ্র মোহন বাগচী (1)
  • রজনীকান্ত সেন (1)
  • রফিক আজাদ (4)
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (26)
  • রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ (10)
  • রেজাউদ্দিন স্টালিন (1)
  • রোকনুজ্জামান খান (1)
  • শক্তি চট্টোপাধ্যায় (10)
  • শঙ্খ ঘোষ (7)
  • শহীদ কাদরী (2)
  • শামসুর রাহমান (11)
  • শিমুল মুস্তাফা (1)
  • সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (5)
  • সমর সেন (2)
  • সমুদ্র গুপ্ত (5)
  • সুকান্ত ভট্টাচার্য (8)
  • সুকুমার বড়ুয়া (1)
  • সুকুমার রায় (5)
  • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (21)
  • সুভাষ মুখোপাধ্যায় (3)
  • সৈয়দ শামসুল হক (3)
  • হুমায়ুন আজাদ (14)
  • হেলাল হাফিজ (23)

Blog Archive

  • ▼  2019 (1)
    • ▼  March (1)
      • তোমার কুমারীত্ব পরীক্ষা করার জন্য আমি বসে নেই
  • ►  2018 (396)
    • ►  July (37)
    • ►  June (253)
    • ►  May (24)
    • ►  April (29)
    • ►  March (13)
    • ►  February (22)
    • ►  January (18)
  • ►  2017 (17)
    • ►  December (14)
    • ►  November (2)
    • ►  October (1)

Translate Your Own Laguage

FB Page

Total Pageviews

Popular Posts

  • Those days of school life - স্কুল লাইফের সেই দিন গুলো || Love Bit
    Those days of school life - স্কুল লাইফের সেই দিন গুলো || Love Bit
  • Obohela (অবহেলা) Part#1 - Bangla New Sad Love Story 😭😥😥 Love Bit
    Obohela (অবহেলা) Part#1 - Bangla New Sad Love Story 😭😥😥 Love Bit
  • মেঘ বলতে আপত্তি কি ? – জয় গোস্বামী
    মেঘ বলতে আপত্তি কি ? – জয় গোস্বামী

Tags

All Videos (20) Percy Bysshe Shelley (1) Short Biography (15) অমিয় চক্রবর্তী (5) আনিসুল হক (1) আপনি যখন কবি (2) আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ (2) আবুল হাসান (12) আব্দুল হাকিম (1) আল মাহমুদ (5) আসাদ চৌধুরী (3) আহসান হাবীব (5) উৎপলকুমার বসু (1) কাজী নজরুল ইসলাম (16) কামিনী রায় (1) কায়কোবাদ (3) চিত্তরঞ্জন দাশ (6) জয় গোস্বামী (9) জসীম উদ্দিন (18) জহির রায়হান (1) জীবনানন্দ দাশ (18) তসলিমা নাসরিন (6) তারাপদ রায় (2) দাউদ হায়দার (4) নির্মলেন্দু গুণ (45) নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (1) পুর্ণেন্দু পত্রী (15) প্রেমেন্দ্র মিত্র (1) ফকির লালন সাঁই (1) ফররুখ আহমেদ (1) বিষ্ণু দে (2) বুদ্ধদেব বসু (2) বেগম সুফিয়া কামাল (2) ময়ুখ চৌধুরী (2) মল্লিকা সেনগুপ্ত (2) মহাদেব সাহা (11) মাইকেল মধুসূদন দত্ত (1) মাহবুব উল আলম চৌধুরী (1) মোফাজ্জল করিম (1) যতীন্দ্র মোহন বাগচী (1) রজনীকান্ত সেন (1) রফিক আজাদ (4) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (26) রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ (10) রেজাউদ্দিন স্টালিন (1) রোকনুজ্জামান খান (1) শক্তি চট্টোপাধ্যায় (10) শঙ্খ ঘোষ (7) শহীদ কাদরী (2) শামসুর রাহমান (11) শিমুল মুস্তাফা (1) সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (5) সমর সেন (2) সমুদ্র গুপ্ত (5) সুকান্ত ভট্টাচার্য (8) সুকুমার বড়ুয়া (1) সুকুমার রায় (5) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (21) সুভাষ মুখোপাধ্যায় (3) সৈয়দ শামসুল হক (3) হুমায়ুন আজাদ (14) হেলাল হাফিজ (23)
latest comments
Hercules Design @Hercules_group
@billykulpa Please contact us via info@hercules-design.com
Reply Retweet Favorite

06 May 2014

Hercules Design @Hercules_group
@billykulpa Please contact us via info@hercules-design.com
Reply Retweet Favorite

06 May 2014

Hercules Design @Hercules_group
@billykulpa Please contact us via info@hercules-design.com
Reply Retweet Favorite

06 May 2014

This blog is to provide you with daily outfit ideas and share my personal style. This is a super clean and elegant WordPress theme for every bloggers. Theme is perfect for sharing all sorts of media online. Photos, videos, quotes, links... etc.

Facebook Twitter Gplus Youtube

Love Bit

LoveBit is a Love Relationship Blog

  • Home
Copyright © LoveZoneBD. All Right Reserved.Developed By ArlenDevs
Created By SoraTemplates | Distributed By MyBloggerThemes