Powered by Blogger.
Love Bit
  • Home
  • All Videos
  • All Poem
  • Short Biography
  • About Us
  • Contact Us

CATEGORY >

যখন আঁধারেরা নামে,
তোমার প্রতিক্ষার শোকগাথায়-
তখন আমি অর্ধনিমগ্ন ।
গলা চিপা ঘুপচি আঁধারে
স্মৃতির জাবর কাটি ।
ওই জনাকীর্ণ নিস্তব্ধতায়
তুমি মনে রেখো আমায় ।
আলোময় ওই বিশাল গোলকধাধায় হয়তো হারাবো
কিন্তু তুমি মনে রেখো আমায় ।
আবার যখন নিভে যাবে আলো ;
যখন ওই অলস আলোটাকে-
বুভুক্ষের মতো গিলবে আঁধার
“রাতজাগা পাখি”,
তুমি ভুলে যেয়ো না আমায় ।
যেদিন তোমার মনের চাতক পাখিটা
মুক্ত হয়ে উড়বে,
ওই সাদা মেঘেদের দলে-
তুমি মনে রাখবে তো আমায়!
গুটিয়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত
শামুকের মতো
হয়তো খোলসবন্দি হবো শীঘ্রই!
সেদিন
তুমি ভুলে যাবে নাতো আমায়?
Share on:

স্মাইল প্লিজ, আপনারা প্রত্যেকেই একটু হাসুন,
দয়া করে তাড়াতাড়ি, তা না হলে রোদ পড়ে গেলে
আপনারা যে রকম চাইছেন তেমন হবে না,
তেমন উঠবে না ছবি। আপনার ঘড়িটা ডানদিকে
আর একটু, একটু সোজা করে প্লিজ, আপনি কি বলছেন
ঘাড়-টাড় সোজা করে দাঁড়ানো হ্যাবিট নেই, তবে,
কি বলছেন অনেকদিন, অনেকদিন হাসার অভ্যাস,
হাসার-ও অভ্যাস নেই? এদিকে যে রোদ পড়ে এলো
এ রকম ঘাড়গোঁজা বিমর্ষ মুখের একদল
মানুষের গ্রুপফটো, ফটো অনেকদিন থেকে যায়,
ব্রমাইড জ্বলে যেতে প্রায় বিশ-পঁচিশ বছর।

বিশ-পঁচিশ বছর পরে যদি কোনো পুরোনো দেয়ালে
কিংবা কোনো অ্যালবামে এরকম ফটো কেউ দেখে,
কি বলবেন, বলবেন, ক্যামেরাম্যানের ত্রুটি ছিলো,
ঘাড় ঠিকই সোজা ছিলো, সব শালা ক্যামেরাম্যানের
সেই এক বোকার শাটারে এই রকম ঘটেছে।
Share on:

যেখানেই যাই আমি সেখানেই রাত!

স্টেডিয়ামে খোলা আকাশের নিচে রেস্তোরাঁয়
অসীমা যেখানে তার অত নীল চোখের ভিতর
ধরেছে নিটোল দিন নিটোল দুপুর
সেখানে গেলেও তবু আমার কেবলই রাত
আমার কেবলই শুধু রাত হয়ে যায়!
Share on:

জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের দক্ষিণ প্রান্তের জেলাশহর বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বপুরুষেরা ছিলেন ঢাকা জেলার বিক্রমপুর পরগণা নিবাসী। তাঁর পিতামহ সর্বানন্দ দাশগুপ্ত (১৯৩৮-৮৫) বিক্রমপুরথেঁকে স্থানান্তরিত হয়ে বরিশালে আবাস গাড়েন।সর্বানন্দ জন্মসূত্রে হিন্দু ছিলেন ; পরে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নেন। তিনি বরিশালে ব্রাহ্ম সমাজ আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেন এবং তাঁর মানহিতৈষী কাজের জন্যে সমাদৃত ছিলেন।জীবনানন্দের পিতা সত্যানন্দ দাশগুপ্তের সর্বাসন্দের দ্বিতীয় পুত্র। সত্যানন্দ দাশগুপ্ত (১৮৬৩-১৯৪২) ছিলেন বরিশাল ব্রজমোহন স্কুলের শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, বরিশাল ব্রাহ্ম সমাজের সম্পাদক এবং ব্রাহ্মসমাজের মুখপত্র ব্রাহ্মবাদী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক।

জীবনানন্দের মাতা কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন কবি, তার সুপরিচিত কবিতা আদর্শ ছেলে (আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/ কথায় না বড় হয়ে কাজে বড়ো হবে) আজও শিশুশ্রেণীর পাঠ্য। জীবনানন্দ ছিলেন পিতামাতার জ্যেষ্ঠ সন্তান। তার ডাকনাম ছিল মিলু। তার ভাই অশোকানন্দ দাশ ১৯০৮ সালে এবং বোন সুচরিতা দাশ ১৯১৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা কম বয়সে স্কুলে ভর্তি হওয়ার বিরোধী ছিলেন ব’লে বাড়িতে মায়ের কাছেই মিলুর বাল্যশিক্ষার সূত্রপাত। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই পিতার কণ্ঠে উপনিষদ আবৃত্তি ও মায়ের গান শুনতেন। লাজুক স্বভাবের হলেও তার খেলাধুলা, ভ্রমণ ও সাঁতারের অভ্যাস ছিল। ছেলেবেলায় একবার কঠিন অসুখে পড়েন।
স্বাস্থ্যউদ্ধারের জন্যে মাতা ও মাতামহ হাসির গানের কবি চন্দ্রনাথের সাথে লক্ষ্মৌ, আগ্রা, দিল্লী প্রভৃতি জায়গা ভ্রমণ করেন।
১৯০৮ সালের জানুয়ারিতে আট বছরের মিলুকে ব্রজমোহন স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি করানো হয়। ইস্কুলে থাকাকালীন সময়েই তার বাংলা ও ইংরেজিতে রচনার সূচনা হয়, এছাড়াও ছবি আঁকার দিকেও তার ঝোঁক ছিল। ১৯১৫ সালে তিনি ব্রজমোহন বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগ সহ ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। দু’ বছর পর ব্রজমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় পূর্বের ফলাফলের পুনরাবৃত্তি ঘটান এবং অতঃপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার উদ্দেশ্যে বরিশাল ত্যাগ করেন।

জীবনানন্দের সাহিত্যিক জীবন বিকশিত হতে শুরু করে। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ১৯২৫ এর জুনে মৃত্যুবরণ করলে জীবনানন্দ তার স্মরণে ‘দেশবন্ধুর প্রয়াণে’ নামক একটি কবিতা রচনা করেন, যা বঙ্গবাণী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কবিতাটি পরবর্তীতে তার প্রথম কাব্য সংকলন ঝরা পালকে স্থান করে নেয়। কবিতাটি পড়ে কবি কালিদাস রায় মন্তব্য করেছিলেন এ কবিতাটি নিশ্চয়ই কোন প্রতিষ্ঠিত কবির ছদ্মনামে রচনা। ১৯২৫ সালেই তার প্রথম প্রবন্ধ স্বর্গীয় কালীমোহন দাশের শ্রাদ্ধবাসরে প্রবন্ধটি ব্রাহ্মবাদী পত্রিকার পরপর তিনটি সংখ্যায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।

ঐ বছরেই কল্লোলে ‘নীলিমা’ কবিতাটি প্রকাশিত হলে তা অনেক তরুণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ধীরে ধীরে কলকাতা, ঢাকা এবং অন্যান্য জায়গার বিভিন্ন সাহিত্যপত্রিকায় তার লেখা ছাপা হতে থাকে; যার মধ্যে রয়েছে সে সময়কার সুবিখ্যাত পত্রিকা কল্লোল, কালি ও কলম, প্রগতি প্রভৃতি। ১৯২৭ সালে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঝরা পালক প্রকাশিত হয়। সে সময় থেকেই তিনি তার উপাধি দাশগুপ্তের বদলে কেবল দাশ লিখতে শুরু করেন।

প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের কয়েক মাসের মাথাতেই তিনি সিটি কলেজে তার চাকরিটি হারান। ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে কলেজটিতে ছাত্র অসন্তোষ দেখা দেয়, ফলাফলস্বরূপ কলেজটির ছাত্রভর্তির হার আশঙ্কাজনকহারে কমে যায়। জীবনানন্দ ছিলেন কলেজটির শিক্ষকদের মধ্যে কনিষ্ঠতম এবং অর্থনৈতিক অসুবিধার পড়ে কলেজ তাকেই চাকরিচ্যুত করে।
কলকাতার সাহিত্যচক্রেও সে সময় তার কবিতা কঠিন সমালোচনার মুখোমুখি হয়। সে সময়কার প্রখ্যাত সাহিত্য সমালোচক সজনীকান্ত দাশ শনিবারের চিঠি পত্রিকায় তার রচনার নির্দয় সমালোচনায় প্রবৃত্ত হন। কলকাতায় করবার মতোন কোন কাজ ছিল না বিধায় কবি ছোট্ট শহর বাগেরহাটের প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তবে তিন মাস পরেই তিনি কলকাতায় প্রত্যাবর্তন করেন।

এ সময় তিনি চরম অর্থনৈতিক দুর্দশায় পড়েছিলেন। জীবনধারণের জন্যে তিনি টিউশানি করাতেন এবং সাথে সাথে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরির সন্ধান করছিলেন। ১৯২৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি দিল্লির রামযশ কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। বরিশালে তার পরিবার তার বিয়ের আয়োজন করছিল এবং ১৯৩০ সালের ৯ই মে তারিখে তিনি লাবণ্য দেবীর সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ে হয়েছিলো ঢাকায়, ব্রাহ্ম সমাজের রামমোহন লাইব্রেরিতে।বিয়ের পর আর দিল্লিতে ফিরে যাননি তিনি, ফলে সেখানকার চাকরিটি খোয়ান।
এরপর প্রায় বছর পাঁচেক সময় জীবনানন্দ কর্মহীন অবস্থায় ছিলেন। মাঝে কিছু দিন ইনশিওরেন্স কোম্পানির এজেন্ট হিসাবে কাজ করেছেন, ছোট ভাই এর কাছ থেকে অর্থ ধার করে ব্যবসার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কোনটাই স্থায়ী হয়নি।

১৯৩১ সালে কবির প্রথম সন্তান মঞ্জুশ্রীর জন্ম হয়। প্রায় সে সময়েই তার ক্যাম্পে কবিতাটি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সম্পাদিত পরিচয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং সাথে সাথে তা কলকাতার সাহিত্যসমাজে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়। কবিতাটির আপাত বিষয়বস্তু ছিল জোছনা রাতে হরিণ শিকার। অনেকেই এই কবিতাটি পাঠ করে তা অশ্লীল হিসেবে চিহ্নিত করেন।

তিনি তার বেকারত্ব, সংগ্রাম ও হতাশার এই সময়কালে বেশ কিছু ছোটগল্প ও উপন্যাস রচনা করেছিলেন, তবে তার জীবদ্দশায় সেগুলো প্রকাশিত হয়নি। ১৯৩৪ সালে তিনি একগুচ্ছ কবিতা রচনা করেন যা পরবর্তীতে তার রূপসী বাংলা কাব্যের প্রধান অংশ নির্মাণ করে। জীবনানন্দ এ কবিতাগুলো প্রকাশ করেননি এবং তার মৃত্যুর পর কবিতাগুলো একত্র করে ১৯৫৭ সালে রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।

১৪ই অক্টোবর, ১৯৫৪ তারিখে কলকাতার বালিগঞ্জে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় তিনি আহত হন। ট্রামের ক্যাচারে আটকে তার শরীর দলিত হয়ে গিয়েছিল। ভেঙ্গে গিয়েছিল কণ্ঠা, ঊরু এবং পাঁজরের হাড়। গুরতমভাবে আহত জীবনানন্দের চিৎকার শুনে ছুটে এসে নিকটস্থ চায়ের দোকানের মালিক চূণীলাল এবং অন্যান্যরা তাঁকে উদ্ধার করে। তাঁকে ভর্তি করা হয় শম্ভূনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। এ সময় ডাঃ ভূমেন্দ্র গুহ সহ অনেক তরুণ কবি জীবনানন্দের সুচিকিৎসার জন প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন। কবি-সাহিত্যিক সজনীকান্ত দাশ  এ ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

তাঁর অনুরোধেই পশ্চিম বঙ্গের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় কবিকে দেখতে এসেছিলেন এবং আহত কবির সুচিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছিলেন যদিও এতে চিকিৎসার তেমন উন্নতি কিছু হয় নি। এ সময় স্ত্রী লাবণ্য দাশকে কদাচিৎ কাছে দেখা যায়। তিনি টালিগঞ্জে সিনেমার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। জীবনানন্দের অবস্থা ক্রমশঃ জটিল হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন কবি। চিকিৎসক ও সেবিকাদের সকল প্রচেষ্টা বিফলে দিয়ে ২২শে অক্টোবর, ১৯৫৪ তারিখে রাত্রি ১১ টা ৩৫ মিনিটে কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।

------------------------  ছড়িয়ে দিন ইচ্ছেমত  ----------------------------------
Share on:

কাজী নজরুল ইসলাম (মে ২৫, ১৮৯৯ — আগস্ট ২৯, ১৯৭৬), বাঙালি কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, দার্শনিক, যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক, দেশপ্রেমী এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ – দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি বলা হয়। তার কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের প্রতি মানুষের অত্যাচার এবং দাসত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে – কাজেই “বিদ্রোহী কবি”।
নজরুল এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়। স্থানীয় এক মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজও করেছিলেন। বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতে যেয়ে তিনি কবিতা, নাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এসময় তিনি কলকাতাতেই থাকতেন। এসময় তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। প্রকাশ করেন বিদ্রোহী এবং ভাঙার গানের মত কবিতা; ধূমকেতুর মত সাময়িকী। জেলে বন্দী হলে পর লিখেন রাজবন্দীর জবানবন্দী। এই সব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। ধার্মিক মুসলিম সমাজ এবং অবহেলিত ভারতীয় জনগণের সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক ছিল। তার সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালবাসা, মুক্তি এবং বিদ্রোহ। ধর্মীয় লিঙ্গভেদের বিরুদ্ধেও তিনি লিখেছেন। ছোট গল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। বাংলা কাব্য তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন। এটি হল ইসলামী সঙ্গীত তথা গজল। নজরুল প্রায় ৩০০০ গান রচনা এবং সুর করেছেন যেগুলো এখন নজরুল সঙ্গীত বা “নজরুল গীতি” নামে পরিচিত এবং বিশেষ জনপ্রিয়। মধ্যবয়সে তিনি পিক‌স ডিজিজে আক্রান্ত হন। এর ফলে দীর্ঘদিন তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। একই সাথে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকা আসেন। এসময় তাকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয়। এখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। (বাংলা উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহীত)

--------------------------  ছড়িয়ে দিন ইচ্ছেমত  -------------------------
Share on:

গুলি লেগে পড়ে গেল |
তুলে ধরতে যাচ্ছে তার বউ |
বন্দুক উঁচিয়ে ধরো |
বলো— ‘না, তুলবি না—’
বলো— ‘যা সরে যা বলছি—’ তাও
যদি না শোনে তাহলে
স্বামীর সাহায্যকারী হাতদুটোয়
সোজা গুলি করো |
যে-নারী ধর্ষণ করতে বাধা দিচ্ছে তার
যৌনাঙ্গে লাঠির মাথা সোজা ভরে দাও
যন্ত্রণায় সে যখন দয়া চায়, গালাগালি করে
তার সামনে তার শিশুটিকে দু’পা ধরে
দুই দিকে টানো,
টানো,
যতক্ষণ না সোজাসুজি ছিঁড়ে যাচ্ছে
টানো!
একে বলে সোজা কথা |
এরই নাম ক্ষমতা দেখানো!
Share on:

বড্ড বেশিই আজ তোমায় মনে পড়ছে।অন্যদিন যে তোমায় মনে পড়ে না, তা কিন্তু নয়!! প্রতিটি মুহূর্ত তোমায় নিয়ে ভাবি।
পার্থক্য হলো, কখনো খুব বেশি মনে পড়ে, আর কখনো একটু কম।।
তবুও তোমায় এক মুহূর্তের জন্যও ভুলে থাকা সম্ভব নয়।
জানি আমাদের সম্পর্কটা কখনোই আর আগের মতো স্বাভাবিক হবে না।
আমাদের এক সাথে থাকাটাও আর সম্ভব নয়।
তবুও কেন জানি সব সময় তোমাকেই আমার পাশে ভাবি।
একা পথ চলতেও মনে হয় তুমি আমার সাথেই আছো, এইতো আমরা হাত ধরে হাঁটছি।জানি না কোন অজানা বাঁধনে তুমি বেঁধেছো আমায়, কোন মায়ায় জড়িয়েছি আমি।
আচ্ছা, আমাদের এক সাথে কাটানো সময়গুলো তোমার কি একটুও মনে পড়ে না?
আমাদের মোটরবাইকে পথচলা কিংবা রাতে তোমার কাঁধে মাথা রেখে রিক্সায় গোটা শহর যে আমরা বেড়াতাম।
তোমার কি কিছুই মনে পড়ে না??মনে পড়ে না সেই সময়গুলো আমরা একসঙ্গে কাটিয়েছি?
ভুলে গেছো কি আমায়? ভুলে গেছে আমার ভালোবাসা??
তোমার জন্য রাত জেগে, না খেয়ে অপেক্ষা করার মানুষটা তো এই আমি।। আমিই ছিলাম।।
কি করে সবটা ভুলে গেলে বলতে পারো??
অভিমান করে চলে যেতে চাইলেই তুমি বলতে কখনোই আমাকে যেতে দিবে না তুমি,, এটাও কি ভুলে গেছো??
সবকিছু এক নিমিষেই ভুলে যেতে পারলে তুমি??
আমার কি ভুল ছিলো বলো! কেনো আজ আমাকে বাধ্য হতে হলো তোমায় ছেড়ে আসতে।।
কেনো নিয়মটা এতো নিষ্ঠুর হলো বলবে? কেনো তোমাকে আমি আমার করে রাখতো পারলাম না??!!
কেনো তুমি আমার হয়ে থেকে গেলে না????
কেনো আমার একটা আবদার তুমি রাখতে পারলে না?
খুব বেশি কিছু কি চেয়েছি তোমার কাছে বলো।। শুধু তোমাকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম, তোমাকে পাশে পেতে চেয়েছিলাম।।কোনো অন্যায় আবদার তো করি নি।।
তবে কেনো আমাকে এতো একা করে দিলে তুমি? কেনো??????
কেনো আমাকে আজও সবার সামনে অভিনয় করতে হয় বলতে পারো?? ভালো থাকার অভিনয়।।
কেনো এখনো প্রতিটি রাত নিরবে কেঁদে যাই আমি।
আমার ভালোবাসাতে কি কোনো কমতি ছিলো? আমি কি ভালোবাসতে পারি নি তোমাকে??
কেনো এত বড় শাস্তিটা তুমি আমায় দিলে?
কেনো এই বোঝা চাপিয়ে দিলে তুমি??
সব তো নিয়ে গেলে স্মৃতি গুলো কেনো রেখে গেলে বলো? নিয়ে যেতে পারলে না তুমি সেগুলো??
কেনো নিয়ে গেলে না??
যদি নিতে একটু হলেও বুঝতে, পেয়ে হারানোর ব্যাথা কতটা যন্ত্রণাদায়ক।।
থাকনা,, তুমি তো ভালো আছো আমাকে ছেড়ে।।
আমি না হয় তোমার স্মৃতির মাঝেই আমার সুখ খুঁজে নেবো।।
তবে জেনে রাখো,,
তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকা তো সম্ভব কিন্তু তোমাকে ছাড়া ভালো থাকা এক মুহূর্তের জন্যও সম্ভব নয়।
ভালো থেকো মি. জনাব।।।



=========== 🔔 Follow Me On 🔔 =============

👉 Website: ➜ http://love-bit.blogspot.com
👉 Youtube: ➜ http://youtube.com/lovebit
👉 Facebook Page: ➜ https://www.facebook.com/Lovebitpro
👉 Facebook Group:➜ https://www.facebook.com/groups/Lovebit.BE
👉 Instagram: ➜ https://www.instagram.com/lovebit.be
👉 Linkedin:➜ https://www.linkedin.com/in/Lovebit-BE
👉 Twitter:➜ https://www.twitter.com/Lovebit_BE
👉 Google+:➜ https://plus.google.com/u/0/115891410513092460720
Thanks!!!
Share on:

এক
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি মধ্যে ক্ষীর নদী,
উইড়া যাওয়ার সাধ ছিল, পাঙ্খা দেয় নাই বিধি |
                                                 — রাখালী গান

এই এক গাঁও, ওই এক গাঁও — মধ্যে ধু ধু মাঠ,
ধান কাউনের লিখন লিখি করছে নিতুই পাঠ |
এ-গাঁও যেন ফাঁকা ফাঁকা, হেথায় হোথায় গাছ ;
গেঁয়ো চাষীর ঘরগুলি সব দাঁড়ায় তারি পাছ |
ও-গাঁয় যেন জমাট বেঁধে বনের কাজল কায়া,
ঘরগুলিরে জড়িয়ে ধরে বাড়ায় বনের মায়া |

এ-গাঁও চেয়ে ও-গাঁর দিকে, ও-গাঁও এ-গাঁর পানে,
কতদিন যে কাটবে এমন, কেইবা তাহা জানে!
মাঝখানেতে জলীর বিলে জ্বলে কাজল-জল,
বক্ষে তাহার জল-কুমুদী মেলছে শতদল |
এ-গাঁর ও-গাঁর দুধার হতে পথ দুখানি এসে,
জলীর বিলের জলে তারা পদ্ম ভাসায় হেসে!
কেউবা বলে — আদ্যিকালের এই গাঁর এক চাষী,
ওই গাঁর এক মেয়ের প্রেমে গলায় পরে ফাঁসি ;
এ-পথ দিয়ে একলা মনে চলছিল ওই গাঁয়ে,
ও-গাঁর মেয়ে আসছিল সে নূপুর-পরা পায়ে!

এইখানেতে এসে তারা পথ হারায়ে হায়,
জলীর বিলে ঘুমিয়ে আছে জল-কুমুদীর গায়ে |
কেইবা জানে হয়তো তাদের মাল্য হতেই খসি,
শাপলা-লতা মেলছে পরাগ জলের উপর বসি |
মাঠের মাঝের জলীর বিলের জোলো রঙের টিপ,
জ্বলছে যেন এ-গাঁর ও-গাঁর বিরহেরি দীপ !
বুকে তাহার এ-গাঁর ও-গাঁর হরেক রঙের পাখি,
মিলায় সেথা নতুন জগৎ নানান সুরে ডাকি |
সন্ধ্যা হলে এ-গাঁর পাখি ও-গাঁর পানে ধায়,
ও-গাঁর পাখি এ-গাঁয় আসে বনের কাজল ছায় |
এ-গাঁর লোকে নাইতে আসে, ও-গাঁর লোকেও আসে
জলীর বিলের জলে তারা জলের খেলায় ভাসে |

এ-গাঁও ও-গাঁও মধ্যে ত দূর — শুধুই জলের ডাক,
তবু যেন এ-গাঁয় ও-গাঁয় নেইকো কোন ফাঁক |
ও-গাঁর বধু ঘট ভরিতে যে ঢেউ জলে জাগে,
কখন কখন দোলা তাহার এ-গাঁয় এসে লাগে |
এ-গাঁর চাষী নিঘুম রাতে বাঁশের বাঁশীর সুরে,
ওইনা গাঁয়ের মেয়ের সাথে গহন ব্যথায় ঝুরে!
এ-গাঁও হতে ভাটীর সুরে কাঁদে যখন গান,
ও-গাঁর মেয়ে বেড়ার ফাঁকে বাড়ায় তখন কান |
এ-গাঁও ও-গাঁও মেশামেশি কেবল সুরে সুরে ;
অনেক কাজে এরা ওরা অনেকখানি দূরে |

এ-গাঁর লোকে দল বাঁধিয়া ও-গাঁর লোকের সনে,
কাইজা ফ্যাসাদ্ করেছে যা জানেই জনে জনে |
এ-গাঁর লোকেও করতে পরখ্ ও-গাঁর লোকের বল,
অনেকবারই লাল করেছে জলীর বিলের জল |
তবুও ভাল, এ-গাঁও ও-গাঁও, আর যে সবুজ মাঠ,
মাঝখানে তার ধূলায় দোলে দুখান দীঘল বাট ;
দুই পাশে তার ধান-কাউনের অথই রঙের মেলা,
এ-গাঁর হাওয়ায় দোলে দেখি ও-গাঁয় যাওয়ার ভেলা |
Share on:

দুই

এক কালা দতের কালি যা দ্যা কলম লেখি,
আর এক কালা চক্ষের মণি, যা দ্যা দৈনা দেখি,

      —ও কালা, ঘরে রইতে দিলি না আমারে |
                                          — মুর্শিদা গান

এই গাঁয়ের এক চাষার ছেলে লম্বা মাথার চুল,
কালো মুখেই কালো ভ্রমর, কিসের রঙিন ফুল!
কাঁচা ধানের পাতার মত কচি-মুখের মায়া,
তার সাথে কে মাখিয়ে দেছে নবীন তৃণের ছায়া |
জালি লাউয়ের ডগার মত বাহু দুখান সরু,
গা-খানি তার শাঙন মাসের যেমন তমাল তরু |
বাদল-ধোয়া মেঘে কে গো মাখিয়ে দেছে তেল,
বিজলী মেয়ে পিছলে পড়ে ছড়িয়ে আলোর খেল |
কচি ধানের তুলতে চারা হয়ত কোনো চাষী,
মুখে তাহার ছড়িয়ে গেছে কতকটা তার হাসি |

কালো চোখের তারা দিয়েই সকল ধরা দেখি,
কালো দতের কালি দিয়েই কেতাব কোরাণ লেখি |
জনম কালো, মরণ কালো, কালো ভূবনময় ;
চাষীদের ওই কালো ছেলে সব করেছে জয় |

সোনায় যে জন সোনা বানায়, কিসের গরব তার’
রঙ পেলে ভাই গড়তে পারি রামধণুকের হার |
কালোয় যে-জন আলো বানায়, ভুলায় সবার মন,
তারি পদ-রজের লাগি লুটায় বৃন্দাবন |
সোনা নহে, পিতল নহে, নহে সোনার মুখ,
কালো-বরণ চাষীর ছেলে জুড়ায় যেন বুক |
যে কালো তার মাঠেরি ধান, যে কালো তার গাঁও!
সেই কালোতে সিনান করি উজল তাহার গাও |

আখড়াতে তার বাঁশের লাঠি অনেক মানে মানী,
খেলার দলে তারে নিয়েই সবার টানাটানি |
জারীর গানে তাহার গলা উঠে সবার আগে,
“শাল-সুন্দী-বেত” যেন ও, সকল কাজেই লাগে |
বুড়োরা কয়, ছেলে নয় ও, পাগাল লোহা যেন,
রূপাই যেমন বাপের বেটা, কেউ দেখেছ হেন?
যদিও রূপা নয়কো রূপাই, রূপার চেয়ে দামী,
এক কালেতে ওরই নামে সব গাঁ হবে নামী |
Share on:

তিন

ওই গাঁখানি কালো কালো, তারি হেলান দিয়ে,
ঘরখানি যে দাঁড়িয়ে হাসে ছোনের ছানি নিয়ে ;
সেইখানে এক চাষীর মেয়ে নামটি তাহার সোনা,
সাজু বলেই ডাকে সবে, নাম নিতে যে গোনা |
লাল মোরগের পাখার মত ওড়ে তাহার শাড়ী,
ভোরের হাওয়া যায় যেন গো প্রভাতী মেঘ নাড়ি |
মুখখানি তার ঢলঢল ঢলেই যেত পড়ে,
রাঙা ঠোঁটের লাল বাঁধনে না রাখলে তায় ধরে |
ফুল-ঝর-ঝর জন্তি গাছে জড়িয়ে কেবা শাড়ী,
আদর করে রেখেছে আজ চাষীদের ওই বাড়ি |
যে ফুল ফোটে সোণের খেতে, ফোটে কদম গাছে,
সকল ফুলের ঝলমল গা-ভরি তার নাচে |

কচি কচি হাত পা সাজুর, সোনায় সোনার খেলা,
তুলসী-তলায় প্রদীপ যেন জ্বলছে সাঁঝের বেলা |
গাঁদাফুলের রঙ দেখেছি, আর যে চাঁপার কলি,
চাষী মেয়ের রূপ দেখে আজ তাই কেমনে বলি ?
রামধনুকে না দেখিলে কি-ই বা ছিল ক্ষোভ,
পাটের বনের বউ টুবাণী, নাইক দেখার লোভ |
দেখেছি এই চাষী মেয়ের সহজ গেঁয়ো রূপ,
তুলসী-ফুলের মঞ্জরী কি দেব-দেউলের ধূপ!
দু একখানা গয়না গায়ে, সোনার দেবালয়ে,
জ্বলছে সোনার পঞ্চ প্রদীপ কার বা পূজা বয়ে!
পড়শীরা কয়—মেয়ে ত নয়, হলদে পাখির ছা,
ডানা পেলেই পালিয়ে যেত ছেড়ে তাদের গাঁ |

এমন মেয়ে—বাবা ত নেই, কেবল আছেন মা ;
গাঁওবাসীরা তাই বলে তায় কম জানিত না |
তাহার মতন চেরন “সেওই” কে কাটিতে পারে,
নক্সী করা পাকান পিঠায় সবাই তারে হারে |
হাঁড়ির উপর চিত্র করা শিকেয় তোলা ফুল,
এই গাঁয়েতে তাহার মত নাইক সমতুল |
বিয়ের গানে ওরই সুরে সবারই সুর কাঁদে,
“সাজু গাঁয়ের লক্ষ্মী মেয়ে” — বলে কি লোক সাধে?
Share on:

চার
চৈত্র গেল ভীষণ খরায়, বোশেখ রোদে ফাটে,
এক ফোঁটা জল মেঘ চোঁয়ায়ে নামল না গাঁর বাটে |
ডোলের বেছন ডোলে চাষীর, বয় না গরু হালে,
লাঙল জোয়াল ধূলায় লুটায় মরচা ধরে ফালে |
কাঠ-ফাটা রোদ মাঠ বাটা বাট আগুন লয়ে খেলে,
বাউকুড়াণী উড়ছে তারি ঘূর্ণী ধূলী মেলে |
মাঠখানি আজ শূণ্য খাঁ খাঁ, পথ যেতে দম আঁটে,
জন্-মানবের নাইক সাড়া কোথাও মাঠের বাটে :
শুকনো চেলা কাঠের মত শুকনো মাঠের ঢেলা,
আগুন পেলেই জ্বলবে সেথায় জাহান্নামের খেলা |
দরগা তলা দুগ্ধে ভাসে, সিন্নি আসে ভারে :
নৈলা গানের ঝঙ্কারে গাঁও কানছে বারে বারে |
তবুও গাঁয়ে নামল না জল, গগনখানা ফাঁকা ;
নিঠুর নীলের বক্ষে আগুন করছে যেনে খাঁ খাঁ |

উচ্চে ডাকে বাজপক্ষি “আজরাইলে”র ডাক,
“খর দরজাল” আসছে বুঝি শিঙায় দিয়ে হাঁক!
এমন সময় ওই গাঁ হতে বদনা-বিয়ের গানে,
গুটি কয়েক আসলো মেয়ে এই না গাঁয়ের পানে |
আগে পিছে পাঁচটি মেয়ে—পাঁচটি রঙে ফুল,
মাঝের মেয়ে সোনার বরণ, নাই কোথা তার তুল |
মাথায় তাহার কুলোর উপর বদনা-ভরা জল,
তেল হলুদে কানায় কানায় করছে ছলাৎ ছল |
মেয়ের দলে বেড়িয়ে তারে চিকন সুরের গানে,
গাঁয়ের পথে যায় যে বলে বদনা-বিয়ের মানে |
ছেলের দলে পড়ল সাড়া, বউরা মিঠে হাসে,
বদনা বিয়ের গান শুনিতে সবাই ছুটে আসে |
পাঁচটি মেয়ের মাঝের মেয়ে লাজে যে যায় মরি,
বদনা হাতে ছলাৎ ছলাৎ জল যেতে চায় পড়ি |
এ-বাড়ি যায় ও-বাড়ি যায়, গানে মুখর গাঁ,
ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ছে যেন-রাম-শালিকের ছা |

কালো মেঘা নামো নামো, ফুল তোলা মেঘ নামো,
ধূলট মেঘা, তুলট মেঘা, তোমরা সবে ঘামো!
কানা মেঘা, টলমল বারো মেঘার ভাই,
আরও ফুটিক ডলক দিলে চিনার ভাত খাই!

কাজল মেঘা নামো নামো চোখের কাজল দিয়া,
তোমার ভালে টিপ আঁকিব মোদের হলে বিয়া!
আড়িয়া মেঘা, হাড়িয়া মেঘা, কুড়িয়া মেঘার নাতি,
নাকের নোলক বেচিয়া দিব তোমার মাথার ছাতি |
কৌটা ভরা সিঁদুর দিব, সিঁদুর মেঘের গায়,
আজকে যেন দেয়ার ডাকে মাঠ ডুবিয়া যায়!

দেয়ারে তুমি অধরে অধরে নামো |
দেয়ারে তুমি নিষালে নিষালে নামো |
ঘরের লাঙল ঘরে রইল, হাইলা চাষা রইদি মইল ;
দেয়ারে তুমি অরিশাল বদনে ঢলিয়া পড় |
ঘরের গরু ঘরে রইল, ডোলের বেছন ডোলে রইল ;
দেয়ারে তুমি অধরে অধরে নামো |

বারো মেঘের নামে নামে এমনি ডাকি ডাকি,
বাড়ি বাড়ি চলল তারা মাঙন হাঁকি হাঁকি
কেউবা দিল এক পোয়া চাল, কেউবা ছটাকখানি,
কেউ দিল নুন, কেউ দিল ডাল, কেউ বা দিল আনি |
এমনি ভাবে সবার ঘরে মাঙন করি সারা,
রূপাই মিয়ার রুশাই-ঘরের সামনে এল তারা |
রূপাই ছিল ঘর বাঁধিতে, পিছন ফিরে চায়,
পাঁটি মেয়ের রূপ বুঝি ওই একটি মেয়ের গায়!
পাঁচটি মেয়ে, গান যে গায়, গানের মতই লাগে,
একটি মেয়ের সুর ত নয় ও বাঁশী বাজায় আগে |
ওই মেয়েটির গঠন-গাঠন চলন-চালন ভালো,
পাঁচটি মেয়ের রূপ হয়েছে ওরই রূপে আলো |

রূপাইর মা দিলেন এনে সেরেক খানেক ধান,
রূপাই বলে, “এই দিলে মা থাকবে না আর মান |”
ঘর হতে সে এনে দিল সেরেক পাঁচেক চাল,
সেরেক খানেক দিল মেপে সোনা মুগের ডাল |
মাঙন সেরে মেয়ের দল চলল এখন বাড়ি,
মাঝের মেয়ের মাথার ঝোলা লাগছে যেন ভারি |
বোঝার ভারে চলতে নারে, পিছন ফিরে চায় ;
রূপার দুচোখ বিঁধিল গিয়ে সোনার চোখে হায়!
Share on:

পাঁচ

আশ্বিনেতে ঝড় হাঁকিল, বাও ডাকিল জোরে,
গ্রামভরা-ভর ছুটল ঝপট লট্ পটা সব করে |
রূপার বাড়ির রুশাই-ঘরের ছুটল চালের ছানি,
গোয়াল ঘরের খাম থুয়ে তার চাল যে নিল টানি |
ওগাঁর বাঁশ দশটা টাকায়, সে-গাঁয় টাকায় তেরো,
মধ্যে আছে জলীর বিল কিইবা তাহে গেরো |
বাঁশ কাটিতে চলল রূপাই কোঁচায় বেঁধে চিঁড়া,
দুপুর বেলায় খায় যেন সে—মায় দিয়াছে কিরা |
মাজায় গোঁজা রাম-কাটারী চক্ চকাচক্ ধার,
কাঁধে রঙিন গামছাখানি দুলছে যেন হার |
মোল্লা-বাড়ির বাঁশ ভাল, তার ফাঁপগুলি নয় বড় ;
খাঁ-বাড়ির বাঁশ ঢোলা ঢোলা, করছে কড়মড় |
সর্ব্বশেষে পছন্দ হয় খাঁ-বাড়ির বাঁশ :
ফাঁপগুলি তার কাঠের মত, চেকন-চোকন আঁশ |


বাঁশ কাটিতে যেয়ে রূপাই মারল বাঁশে দা,
তল দিয়ে যায় কাদের মেয়ে—হলদে পাখির ছা!
বাঁশ কাটিতে বাঁশের আগায় লাগল বাঁশের বাড়ি,
চাষী মেয়ের দেখে তার প্রাণ বুঝি যায় ছাড়ি |
লম্বা বাঁশের লম্বা যে ফাঁপ, আগায় বসে টিয়া,
চাষীদের ওই সোনার মেয়ে কে করিবে বিয়া!
বাঁশ কাটিতে এসে রূপাই কাটল বুকের চাম,
বাঁশের গায়ে বসে রূপাই ভুলল নিজের কাম |
ওই মেয়ে ত তাদের গ্রামে বদনা-বিয়ের গানে,
নিয়েছিল প্রাণ কেড়ে তার চিকন সুরের দানে |

“খড়ি কুড়াও সোনার মেয়ে! শুকনো গাছের ডাল,
শুকনো আমার প্রাণ নিয়ে যাও, দিও আখার জ্বাল |
শুকনো খড়ি কুড়াও মেয়ে! কোমল হাতে লাগে,
তোমায় যারা পাঠায় বনে বোঝেনি কেন আগে?”
এমনিতর কত কথাই উঠে রূপার মনে,
লজ্জাতে সে হয় যে রঙিন পাছে বা কেউ শোনে |
মেয়েটিও ডাগর চোখে চেয়ে তাহার পানে,
কি কথা সে ভাবল মনে সেই জানে তার মানে!

এমন সময় পিছন হতে তাহার মায়ে ডাকে,
“ওলো সাজু! আয় দেখি তোর নথ বেঁধে দেই নাকে!
ওমা! ও কে বেগান মানুষ বসে বাঁশের ঝাড়ে!”
মাথায় দিয়ে ঘোমটা টানি দেখছে বারে বারে |

খানিক পরে ঘোমটা খুলে হাসিয়া এক গাল,
বলল, “ও কে, রূপাই নাকি? বাঁচবি বহকাল!
আমি যে তোর হইযে খালা, জানিসনে তুই বুঝি?
মোল্লা বাড়ির বড়ুরে তোর মার কাছে নিস্ খুঁজি |
তোর মা আমার খেলার দোসর—যাকগে ও সব কথা,
এই দুপুরে বাঁশ কাটিয়া খাবি এখন কোথা?”

রূপাই বলে, “মা দিয়েছেন কোঁচায় বেঁধে চিঁড়া”
“ওমা! ও তুই বলিস কিরে? মুখখানা তোর ফিরা!
আমি হেথা থাকতে খালা, তুই থাকবি ভুখে,
শুনলে পরে তোর মা মোরে দুষবে কত রুখে!
ও সাজু, তুই বড় মোরগ ধরগে যেয়ে বাড়ি,
ওই গাঁ হতে আমি এদিক দুধ আনি এক হাঁড়ি |”

চলল সাজু বাড়ির দিকে, মা গেল ওই পাড়া |
বাঁশ কাটতে রূপাই এদিক মারল বাঁশে নাড়া |
বাঁশ কাটিতে রূপার বুকে ফেটে বেরোয় গান,
নলী বাঁশের বাঁশীতে কে মারছে যেন টান!
বেছে বেছে কাটল রূপাই ওড়া-বাঁশের গোড়া,
তল্লা বাঁশের কাটল আগা, কালধোয়ানির জোড়া ;
বাল্ কে কাটে আল্ কে কাটে কঞ্চি কাটে শত,
ওদিক বসে রূপার খালা রান্ধে মনের মত |

সাজু ডাকে তলা থেকে, “রূপা-ভাইগো এসো,”
—এই কথাটি বলতে তাহার লজ্জারো নাই শেষও!
লাজের ভারে হয়তো মেয়ে যেতেই পারে পড়ে,
রূপাই ভাবে হাত দুখানি হঠাৎ যেয়ে ধরে |

যাহোক রূপা বাঁশ কাটিয়া এল খালার বাড়ি,
বসতে তারে দিলেন খালা শীতল পাটি পাড়ি |
বদনা ভরে জল দিল আর খড়ম দিল মেলে,
পাও দুখানি ধুয়ে রূপাই বসল বামে হেলে |
খেতে খেতে রূপাই কেবল খালার তারীফ করে,
“অনেক দিনই এমন ছালুন খাইনি কারো ঘরে |”
খালায় বলে “আমি ত নয়, রেঁধেছে তোর বোনে,”
লাজে সাজুর ইচ্ছা করে লুকায় আঁচল কোণে |
এমনি নানা কথায় রূপার আহার হল সারা,
সন্ধ্যা বেলায় চলল ঘরে মাথায় বাঁশের ভারা |

খালার বাড়ির এত খাওয়া, তবুও তার মুখ,
দেখলে মনে হয় যে সেথা অনেক লেখা দুখ |
ঘরে যখন ফিরল রূপা লাগল তাহার মনে,
কি যেন তার হয়েছে আজ বাঁশ কাটিতে বনে |
মা বলিল, “বাছারে, কেন মলিন মুখে চাও?”
রূপাই কহে, “বাঁশ কাটিতে হারিয়ে এলেম দাও |”
Share on:

ছয়

ঘরেতে রূপার মন টেকে না যে, তরলা বাঁশীর পারা,
কোন বাতাসেতে ভেসে যেতে চায় হইয়া আপন হারা |
কে যেন তার মনের তরীরে ভাটির করুণ তানে,
ভাটিয়াল সোঁতে ভাসাইয়া নেয় কোন্ সে ভাটার পানে |
সেই চিরকেলে গান আজও গাহে, সুরখানি তার ধরি,
বিগানা গাঁয়ের বিরহিয়া মেয়ে আসে যেন তরি!
আপনার গানে আপনার প্রাণ ছিঁড়িয়া যাইতে চায়,
তবু সেই ব্যথা ভাল লাগে যেন, একই গান পুনঃ গায় |
খেত-খামারেতে মন বসেনাকো ; কাজে কামে নাই ছিরি,
মনের তাহার কি যে হল আজ ভাবে তাই ফিরি ফিরি |
গানের আসরে যায় না রূপাই সাথীরা অবাক মানে,
সারাদিন বসি কি যে ভাবে তার অর্থ সে নিজে জানে!
সময়ের খাওয়া অসময় খায়, উপোসীও কভু থাকে,
“দিন দিন তোর কি হল রূপাই” বার বার মায় ডাকে |
গেলে কোনখানে হয়তো সেথাই কেটে যায় সারা দিন,
বসিলে উঠেনা উঠিলে বসেনা, ভেবে ভেবে তনু ক্ষীণ |
সবে হাটে যায় পথ বরাবর রূপা যায় ঘুরে বাঁকা,
খালার বাড়ির কাছ দিয়ে পথ, বাঁশ-পাতা দিয়ে ঢাকা |


পায়ে-পায় ছাই বাঁশ-পাতাগুলো মচ্ মচ্ করে বাজে ;
কেউ সাথে নেই, তবু যে রূপাই মরে যায় যেন লাজে |
চোরের মতন পথে যেতে যেতে এদিক ওদিক চায়,
যদিবা হঠাৎ সেই মেয়েটির দুটি চোখে চোখ যায় |
ফিরিবার পথে খালার বাড়ির নিকটে আসিয়া তার,
কত কাজ পড়ে, কি করে রূপাই দেরি না করিয়া আর |
কোনদিন কহে, “খালামা, তোমার জ্বর নাকি হইয়াছে,
ও-বাড়ির ওই কানাই আজিকে বলেছে আমার কাছে |
বাজার হইতে আনিয়াছি তাই আধসেরখানি গজা |”
“বালাই! বালাই! জ্বর হবে কেন? রূপাই, করিলি মজা ;
জ্বর হলে কিরে গজা খায় কেহ?” হেসে কয় তার খালা,
“গজা খায়নাক, যা হোক এখন কিনে ত হইল জ্বালা ;
আচ্ছা না হয় সাজুই খাইবে |” ঠেকে ঠেকে রূপা কহে,
সাজু যে তখন লাজে মরে যায়, মাথা নিচু করে রহে |

কোন দিন কহে, “সাজু কই ওরে, শোনো কিবা মজা, খালা!
আজকের হাটে কুড়ায়ে পেয়েছি দুগাছি পুঁতির মালা ;
এক ছোঁড়া কয়, “রাঙা সূতো” নেবে? লাগিবে না কোন দাম ;
নিলে কিবা ক্ষতি, এই ভেবে আমি হাত পেতে রইলাম |
এখন ভাবছি, এসব লইয়া কিবা হবে মোর কাজ,
ঘরেতে থাকিলে ছোট বোনটি সে ইহাতে করিত সাজ |
সাজু ত আমার বোনেরই মতন, তারেই না দিয়ে যাই,
ঘরে ফিরে যেতে একটু ঘুরিয়া এ-পথে আইনু তাই |”

এমনি করিয়া দিনে দিনে যেতে দুইটি তরুণ হিয়া,
এ উহারে নিল বরণ করিয়া বিনে-সূতী মালা দিয়া |

এর প্রাণ হতে ওর প্রাণে যেয়ে লাগিল কিসের ঢেউ,
বিভোর কুমার, বিভোর কুমারী, তারা বুঝিল না কেউ |
—তারা বুঝিল না, পাড়ার লোকেরা বুঝিল অনেকখানি,
এখানে ওখানে ছেলে বুড়ো মিলে শুরু হল কানাকানি |

সেদিন রূপাই হাট-ফেরা পথে আসিল খালার বাড়ি,
খালা তার আজ কথা কয়নাক, মুখখানি যেন হাঁড়ি |
“রূপা ভাই এলে?” এই বলে সাজু কাছে আসছিল তাই,
মায় কয়, “ওরে ধাড়ী মেয়ে, তোর লজ্জা শরম নাই?”
চুল ধরে তারে গুড়ুম গুড়ুম মারিল দু’তিন কিল,
বুঝিল রূপাই এই পথে কোন হইয়াছে গরমিল |

মাথার বোঝাটি না-নামায়ে রূপা যেতেছিল পথ ধরি,
সাজুর মায়ে যে ডাকিল তাহারে হাতের ইশারা করি ;
“শোন বাছা কই, লোকের মুখেতে এমন তেমন শুনি,
ঘরে আছে মোর বাড়ন্ত মেয়ে জ্বলন্ত এ আগুনি |
তুমি বাপু আর এ-বাড়ি এসো না |” খালা বলে রোষে রোষে,
“কে কি বলে? তার ঘাড় ভেঙে দেব!” রূপা কহে দম কসে |
“ও-সবে আমার কাজ নাই বাপু, সোজা কথা ভালবাসি,
সারা গাঁয়ে আজ ঢি ঢি পড়ে গেছে, মেয়ে হল কুল-নাশী |”

সাজুর মায়ের কথাগুলি যেন বঁরশীর মত বাঁকা,
ঘুরিয়া ঘুরিয়া মনে দিয়ে যায় তীব্র বিষের ধাকা |
কে যেন বাঁশের জোড়-কঞ্চিতে তাহার কোমল পিঠে,
মহারোষ-ভরে সপাং সপাং বাড়ি দিল গিঠে গিঠে |
টলিতে টলিতে চলিল রূপাই একা গাঁর পথ ধরি,
সম্মুখ হতে জোনাকীর আলো দুই পাশে যায় সরি |

রাতের আঁধারে গালি-ভরা বিষে জমাট বেঁধেছে বুঝি,
দুই হাতে তাহা ঠেলিয়া ঠেলিয়া চলে রূপা পথ খুঁজি |
মাথার ধামায় এখনও রয়েছে দুজোড়া রেশমী চুরী,
দুপায়ে তাহারে দলিয়া রূপাই ভাঙিয়া করিল গুঁড়ি |
টের সদাই জলীর বিলেতে দুহাতে ছুঁড়িয়া ফেলি,
পথ থুয়ে রূপা বেপথে চলিল, ইটা খেতে পাও মেলি |
চলিয়া চলিয়া মধ্য মাঠেতে বসিয়া কাঁদিল কত,
অষ্টমী চাঁদ হেলিয়া হেলিয়া ওপারে হইল গত |

প্রভাতে রূপাই উঠিল যখন মায়ের বিছানা হতে,
চেহারা তাহার আধা হয়ে গেছে, চেনা যায় কোন মতে |
মা বলে, “রূপাই কি হলরে তোর?” রূপাই কহে না কথা
দুখিনী মায়ের পরাণে আজিকে উঠিল দ্বিগুণ ব্যথা |
সাত নয় মার পাঁচ নয় এক রুপাই নয়ন তারা,
এমনি তাহার দশা দেখে মায় ভাবিয়া হইল সারা |
শানাল পীরের সিন্নি মানিল খেতে দিল পড়া-পানি,
হেদের দৈন্য দেখিল জননী, দেখিলনা প্রাণখানি |
সারা গায়ে মাতা হাত বুলাইল চোখে মুখে দিল জল,
বুঝিল না মাতা বুকের ব্যথার বাড়ে যে ইহাতে বল |

আজকে রূপার সকলি আঁধার, বাড়া-ভাতে ওড়ে ছাই,
কলঙ্ক কথা সবে জানিয়াছে, কেহ বুঝি বাকি নাই |
জেনেছে আকাশ, জেনেছে বাতাস, জেনেছে বনের তরু ;
উদাস-দৃষ্টি য়ত দিকে চাহে সব যেন শূনো মরু |

চারিদিক হতে উঠিতেছে সুর, ধিক্কার! ধিক্কার!!
শাঁখের করাত কাটিতেছে তারে লয়ে কলঙ্ক ধার |
ব্যথায় ব্যথায় দিন কেটে গেল, আসিল ব্যথার সাঁজ,
পূবে কলঙ্কী কালো রাত এল, চরণে ঝিঁঝির ঝাঁজ!
অনেক সুখের দুখের সাক্ষী বাঁশের বাঁশীটি নিয়ে,
বসিল রূপাই বাড়ির সামনে মধ্য মাঠেতে গিয়ে |

মাঠের রাখাল, বেদনা তাহার আমরা কি অত বুঝি ;
মিছেই মোদের সুখ-দুখ দিয়ে তার সুখ-দুখ খুঁজি |
আমাদের ব্যথা কেতাবেতে লেখা, পড়িলেই বোঝা যায় ;
যে লেখে বেদনা বে-বুঝ বাঁশীতে কেমন দেখাব তায়?
অনন্তকাল যাদের বেদনা রহিয়াছে শুধু বুকে,
এ দেশের কবি রাখে নাই যাহা মুখের ভাষায় টুকে ;
সে ব্যথাকে আমি কেমনে জানাব? তবুও মাটিতে কান ;
পেতে রহি কভু শোনা যায় কি কহে মাটির প্রাণ!
মোরা জানি খোঁজ বৃন্দাবনেতে ভগবান করে খেলা,
রাজা-বাদশার সুখ-দুখ দিয়ে গড়েছি কথার মালা |
পল্লীর কোলে নির্ব্বাসিত এ ভাইবোনগুলো হায়,
যাহাদের কথা আধ বোঝা যায়, আধ নাহি বোঝা যায় ;
তাহাদেরই এক বিরহিয়া বুকে কি ব্যথা দিতেছে দোল,
কি করিয়া আ দেখাইব তাহা, কোথা পাব সেই বোল?
—সে বন-বিহগ কাঁদিতে জানে না, বেদনার ভাষা নাই,
ব্যাধের শায়ক বুকে বিঁধিয়াছে জানে তার বেদনাই |

বাজায় রূপাই বাঁশীটি বাজায় মনের মতন করে,
যে ব্যথা সে বুকে ধরিতে পারেনি সে ব্যথা বাঁশীতে ঝরে |
বাজে বাঁশী বাজে, তারি সাথে সাথে দুলিছে সাঁজের আলো ;
নাচে তালে তালে জোনাকীর হারে কালো মেঘে রাত-কালো |
বাজাইল বাঁশী ভাটিয়ালী সুরে বাজাল উদাস সুরে,
সুর হতে সুর ব্যথা তার চলে যায় কোন দূরে!
আপনার ভাবে বিভোল পরাণ, অনন্ত মেঘ-লোকে,
বাঁশী হতে সুরে ভেসে যায় যেন, দেখে রূপা দুই চোখে |
সেই সুর বয়ে চলেছে তরুণী, আউলা মাথার চুল,
শিথিল দুখান বাহু বাড়াইয়াছিঁড়িছে মালার ফুল |
রাঙা ভাল হতে যতই মুছিছে ততই সিঁদুর জ্বলে ;
কখনও সে মেয়ে আগে আগে চলে, কখনও বা পাছে চলে |
খানিক চলিয়া থামিল করুণী আঁচলে ঢাকিয়া চোখ,
মুছিতে মুছিতে মুছিতে পারে না, কি যেন অসহ শোক!
করুণ তাহার করুণ কান্না আকাশ ছাইয়া যায়,
কি যে মোহের রঙ ভাসে মেঘে তাহার বেদনা-ঘায় |
পুনরায় যেন খিল খিল করে একগাল হাসি হাসে,
তারি ঢেউ লাগি গগনে গগনে তড়িতের রেখা ভাসে |

কখনও আকাশ ভীষণ আঁধার, সব গ্রাসিয়াছে রাহু,
মহাশূণ্যের মাঝে ভেসে উঠে যেন দুইখানি বাহু!
দোলে-দোলে-বাহু তারি সাথে যেন দোলে-দোলে কত কথা,
“ঘরে ফিরে যাও, মোর তরে তুমি সহিও না আর ব্যথা |”
মুহূর্ত পরে সেই বাহু যেন শূণ্যে মিলায় হায়—
রামধনু বেয়ে কে আসে ও মেয়ে, দেখে যেন চেনা যায়!
হাসি হাসি মুখ গলিয়া গলিয়া হাসি যায় যেন পড়ে,
সার গায়ে তার রূপ ধরেনাক, পড়িছে আঁচল ঝরে |
কণ্ঠে তাহার মালার গন্ধে বাতাস পাগল পারা,
পায়ে রিনি ঝিনি সোনার নূপুর বাজিয়া হইছে সারা ;

হঠাৎ কে এল ভীষণ দস্যু—ধরি তার চুল মুঠি,
কোন্ আন্ধার গ্রহপথ বেয়ে শূণ্যে সে গেল উঠি |
বাঁশী ফেলে দিয়ে ডাক ছেড়ে রূপা আকাশের পানে চায়,
আধা চাঁদখানি পড়িছে হেলিয়া সাজুদের ওই গাঁয় |
শুনো মাঠে রূপা গড়াগড়ি যায়, সারা গায়ে ধূলো মাখে,
দেহেরে ঢাকিছে ধূলো মাটি দিয়ে, ব্যথারে কি দিয়ে ঢাকে!
Share on:
  • ← Previous post
  • Next Post →
Facebook Twitter Gplus RSS

All Category List

  • All Videos (20)
  • Percy Bysshe Shelley (1)
  • Short Biography (15)
  • অমিয় চক্রবর্তী (5)
  • আনিসুল হক (1)
  • আপনি যখন কবি (2)
  • আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ (2)
  • আবুল হাসান (12)
  • আব্দুল হাকিম (1)
  • আল মাহমুদ (5)
  • আসাদ চৌধুরী (3)
  • আহসান হাবীব (5)
  • উৎপলকুমার বসু (1)
  • কাজী নজরুল ইসলাম (16)
  • কামিনী রায় (1)
  • কায়কোবাদ (3)
  • চিত্তরঞ্জন দাশ (6)
  • জয় গোস্বামী (9)
  • জসীম উদ্দিন (18)
  • জহির রায়হান (1)
  • জীবনানন্দ দাশ (18)
  • তসলিমা নাসরিন (6)
  • তারাপদ রায় (2)
  • দাউদ হায়দার (4)
  • নির্মলেন্দু গুণ (45)
  • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (1)
  • পুর্ণেন্দু পত্রী (15)
  • প্রেমেন্দ্র মিত্র (1)
  • ফকির লালন সাঁই (1)
  • ফররুখ আহমেদ (1)
  • বিষ্ণু দে (2)
  • বুদ্ধদেব বসু (2)
  • বেগম সুফিয়া কামাল (2)
  • ময়ুখ চৌধুরী (2)
  • মল্লিকা সেনগুপ্ত (2)
  • মহাদেব সাহা (11)
  • মাইকেল মধুসূদন দত্ত (1)
  • মাহবুব উল আলম চৌধুরী (1)
  • মোফাজ্জল করিম (1)
  • যতীন্দ্র মোহন বাগচী (1)
  • রজনীকান্ত সেন (1)
  • রফিক আজাদ (4)
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (26)
  • রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ (10)
  • রেজাউদ্দিন স্টালিন (1)
  • রোকনুজ্জামান খান (1)
  • শক্তি চট্টোপাধ্যায় (10)
  • শঙ্খ ঘোষ (7)
  • শহীদ কাদরী (2)
  • শামসুর রাহমান (11)
  • শিমুল মুস্তাফা (1)
  • সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (5)
  • সমর সেন (2)
  • সমুদ্র গুপ্ত (5)
  • সুকান্ত ভট্টাচার্য (8)
  • সুকুমার বড়ুয়া (1)
  • সুকুমার রায় (5)
  • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (21)
  • সুভাষ মুখোপাধ্যায় (3)
  • সৈয়দ শামসুল হক (3)
  • হুমায়ুন আজাদ (14)
  • হেলাল হাফিজ (23)

Blog Archive

  • ►  2019 (1)
    • ►  March (1)
  • ▼  2018 (396)
    • ►  July (37)
    • ►  June (253)
    • ►  May (24)
    • ►  April (29)
    • ▼  March (13)
      • তুমি – রাজদ্বীপ দত্ত
      • স্মাইল প্লিজ – তারাপদ রায়
      • অপরিচিতি – আবুল হাসান
      • জীবনানন্দ দাশ
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • সোজা কথা – জয় গোস্বামী
      • Keno Tumi Amar Hoye Theke Gele Na - Sad Bengali Au...
      • নক্সী কাঁথার মাঠ (০১/১৪) – জসীম উদ্দিন
      • নক্সী কাঁথার মাঠ (০২/১৪) – জসীম উদ্দিন
      • নক্সী কাঁথার মাঠ (০৩/১৪) – জসীম উদ্দিন
      • নক্সী কাঁথার মাঠ (০৪/১৪) – জসীম উদ্দিন
      • নক্সী কাঁথার মাঠ (০৫/১৪) – জসীম উদ্দিন
      • নক্সী কাঁথার মাঠ (০৬/১৪) – জসীম উদ্দিন
    • ►  February (22)
    • ►  January (18)
  • ►  2017 (17)
    • ►  December (14)
    • ►  November (2)
    • ►  October (1)

Translate Your Own Laguage

FB Page

Total Pageviews

Popular Posts

  • Those days of school life - স্কুল লাইফের সেই দিন গুলো || Love Bit
    Those days of school life - স্কুল লাইফের সেই দিন গুলো || Love Bit
  • Obohela (অবহেলা) Part#1 - Bangla New Sad Love Story 😭😥😥 Love Bit
    Obohela (অবহেলা) Part#1 - Bangla New Sad Love Story 😭😥😥 Love Bit
  • মেঘ বলতে আপত্তি কি ? – জয় গোস্বামী
    মেঘ বলতে আপত্তি কি ? – জয় গোস্বামী

Tags

All Videos (20) Percy Bysshe Shelley (1) Short Biography (15) অমিয় চক্রবর্তী (5) আনিসুল হক (1) আপনি যখন কবি (2) আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ (2) আবুল হাসান (12) আব্দুল হাকিম (1) আল মাহমুদ (5) আসাদ চৌধুরী (3) আহসান হাবীব (5) উৎপলকুমার বসু (1) কাজী নজরুল ইসলাম (16) কামিনী রায় (1) কায়কোবাদ (3) চিত্তরঞ্জন দাশ (6) জয় গোস্বামী (9) জসীম উদ্দিন (18) জহির রায়হান (1) জীবনানন্দ দাশ (18) তসলিমা নাসরিন (6) তারাপদ রায় (2) দাউদ হায়দার (4) নির্মলেন্দু গুণ (45) নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (1) পুর্ণেন্দু পত্রী (15) প্রেমেন্দ্র মিত্র (1) ফকির লালন সাঁই (1) ফররুখ আহমেদ (1) বিষ্ণু দে (2) বুদ্ধদেব বসু (2) বেগম সুফিয়া কামাল (2) ময়ুখ চৌধুরী (2) মল্লিকা সেনগুপ্ত (2) মহাদেব সাহা (11) মাইকেল মধুসূদন দত্ত (1) মাহবুব উল আলম চৌধুরী (1) মোফাজ্জল করিম (1) যতীন্দ্র মোহন বাগচী (1) রজনীকান্ত সেন (1) রফিক আজাদ (4) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (26) রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ (10) রেজাউদ্দিন স্টালিন (1) রোকনুজ্জামান খান (1) শক্তি চট্টোপাধ্যায় (10) শঙ্খ ঘোষ (7) শহীদ কাদরী (2) শামসুর রাহমান (11) শিমুল মুস্তাফা (1) সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (5) সমর সেন (2) সমুদ্র গুপ্ত (5) সুকান্ত ভট্টাচার্য (8) সুকুমার বড়ুয়া (1) সুকুমার রায় (5) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (21) সুভাষ মুখোপাধ্যায় (3) সৈয়দ শামসুল হক (3) হুমায়ুন আজাদ (14) হেলাল হাফিজ (23)
latest comments
Hercules Design @Hercules_group
@billykulpa Please contact us via info@hercules-design.com
Reply Retweet Favorite

06 May 2014

Hercules Design @Hercules_group
@billykulpa Please contact us via info@hercules-design.com
Reply Retweet Favorite

06 May 2014

Hercules Design @Hercules_group
@billykulpa Please contact us via info@hercules-design.com
Reply Retweet Favorite

06 May 2014

This blog is to provide you with daily outfit ideas and share my personal style. This is a super clean and elegant WordPress theme for every bloggers. Theme is perfect for sharing all sorts of media online. Photos, videos, quotes, links... etc.

Facebook Twitter Gplus Youtube

Love Bit

LoveBit is a Love Relationship Blog

  • Home
Copyright © LoveZoneBD. All Right Reserved.Developed By ArlenDevs
Created By SoraTemplates | Distributed By MyBloggerThemes