Powered by Blogger.
Love Bit
  • Home
  • All Videos
  • All Poem
  • Short Biography
  • About Us
  • Contact Us

CATEGORY >


সৈয়দ শামসুল হক (জন্ম ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৩৫) একজন বিখ্যাত বাংলাদেশী সাহিত্যিক। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প তথা সাহিত্যের সকল শাখায় সাবলীল পদচারণার জন্য তাঁকে ‘সব্যসাচী লেখক’ বলা হয়। সব্যসাচী লেখক হিসেবে তাঁর পরিচিতি রয়েছে।। সৈয়দ শামসুল হক মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান। বাংলা একাডেমী পুরস্কার পাওয়া সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে কম বয়সে এ পুরস্কার লাভ করেছেন।

সৈয়দ শামসুল হক সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ও হালিমা খাতুন দম্পতির আট সন্তানের প্রথম সন্তান। পিতা সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন পেশায় ছিলেন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার।

তিনি কুড়িগ্রামে ডাক্তারি চর্চা করতেন। সৈয়দ শামসুল হকের ভাষ্য অনুযায়ী তাঁর রচিত প্রথম পদ তিনি লিখেছিলেন এগারো-বারো বছর বয়সে। টাইফয়েডে শয্যাশায়ী কবি তাঁর বাড়ীর রান্নাঘরের পাশে সজনে গাছে একটি লাল টুকটুকে পাখি দেখে দুলাইনের একটি পদ “আমার ঘরে জানালার পাশে গাছ রহিয়াছে/ তাহার উপরে দুটি লাল পাখি বসিয়া আছে।” রচনা করেন। এরপর ১৯৪৯-৫০ সালের দিকে ম্যাট্রিক পরীক্ষার পরে ব্যক্তিগত খাতায় ২০০টির মতো কবিতা রচনা করেন। সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৫১ সালের মে মাসে। ফজলে লোহানী সম্পাদিত ‘’অগত্যা’’ পত্রিকায়। সেখানে “উদয়াস্ত” নামে তাঁর একটি গল্প ছাপা হয়।

সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হকের শিক্ষাজীবন শুরু হয় কুড়িগ্রাম মাইনর স্কুলে। সেখানে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুলে। এরপর ১৯৫০ সালে গণিতে লেটার মার্কস নিয়ে সৈয়দ শামসুল হক ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

সৈয়দ শামসুল হকের পিতার ইচ্ছা ছিলো তাঁকে তিনি ডাক্তারী পড়াবেন। পিতার এরকম দাবি এড়াতে তিনি ১৯৫১ সালে বম্বে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি বছরখানেকের বেশী এক সিনেমা প্রডাকশ হাউসে সহকারী হিসেবে কাজ করেন। এরপর ১৯৫২ সালে তিনি দেশে ফিরে এসে জগন্নাথ কলেজে নিজের ইচ্ছাঅনুযায়ী মানবিক শাখায় ভর্তি হন। কলেজ পাসের পর ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। পরবর্তীতে স্নাতক পাসের আগেই ১৯৫৬ সালে সেখান থেকে পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখে বেরিয়ে আসেন। এর কিছুদিন পর তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘’দেয়ালের দেশ’’ প্রকাশিত হয়।

কবিতা
একদা এক রাজ্যে,বিরতিহীন উৎসব,অপর পুরুষ

 উপন্যাস
নীল দংশন, স্তব্ধতার অনুবাদ, নিষিদ্ধ লোবান, খেলারাম খেলে যা

গল্প
তাস, রক্ত গোলাপ

অন্যান্য
পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়

চলচিত্র
নিষিদ্ধ লোবান অবলম্বনে গেরিলা ছবিটি তৈরি হয়েছে।

পুরস্কার
তিনি তাঁর সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৬৬ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ১৯৬৯ সালে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮৩ সালে আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে একুশে পদক, ১৯৮৭ সালে পদাবলী কবিতা পুরস্কার, ১৯৯০ সালে নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক সহ অনেক পুরস্কার লাভ করেন।

------------------------------  ছড়িয়ে দিন ইচ্ছেমত  ------------------------------
Share on:
মাঝরাতে ছায়ামানব রাতপ্রহরী আমি
ঘুমিয়ে বন্ধু আমার একান্তে হৃদয়ে
আকাশের নীল মুছে রুপালি আলো
বন্ধুগল্পে স্বপ্নমাঝে প্রদীপ তুমি জালো
যদি মেঘলা ক্ষণে আকাশের জলে
কোনো অবলা আখিজল ঝরে,
ও আমার অভিমানী কিছু অনুভুতি
জীবন থেকে হারিয়ে যেয়েও ফিরে আসে

যদি কখনো একাকী সময় কাটে
বুঝে নিও আমার অধ্যায় নিঃসঙ্গ
ইচ্ছেঘুড়ি এলোমেলো দুরে কোথাও
কোন সে সুনয়না আমায় ভালোবেসে
দুঃখের প্রহরে সুখের ছোয়ায়
বিষন্ন হৃদয়ে এক মুহূর্ত স্পর্শে
আকাশনীলা তারার মেলায় তুমি
চিরন্তন ছায়ামানবী তুমি
Share on:

হাওয়া বয় সন সন
তারারা কাঁপে।
হৃদয়ে কি জং ধরে
পুরানো খাপে।
কার চুল এলোমেলো।
কি বা তাতে এলো গেলো !
কার চোখে কত জল
কে বা তা মাপে ?


দিনগুলি কুড়োতে
কত কি তো হারালো।
ব্যথা কই সে ফলা-র
বিঁধেছে যা ধারালো !

হাওয়া বয় সন সন
তারারা কাঁপে।
জেনে কি বা প্রয়োজন
অনেক দূরে বন
রাঙা হ’ল কুসুমে, না,
বহ্নিতাপে ?
হৃদয়ে মরচে-ধরা
পুরানো খাপে।
Share on:

আমার জীবন ভালোবাসাহীন গেলে
কলঙ্ক হবে কলঙ্ক হবে তোর,
খুব সামান্য হৃদয়ের ঋণ পেলে
বেদনাকে নিয়ে সচ্ছলতার ঘর

বাঁধবো নিমেষে। শর্তবিহীন হাত
গচ্ছিত রেখে লাজুক দু’হাতে আমি
কাটাবো উজাড় যুগলবন্দী হাত
অযুত স্বপ্নে। শুনেছি জীবন দামী,

একবার আসে, তাকে ভালোবেসে যদি
অমার্জনীয় অপরাধ হয় হোক,
ইতিহাস দেবে অমরতা নিরবধি
আয় মেয়ে গড়ি চারু আনন্দলোক।

দেখবো দেখাবো পরস্পরকে খুলে
যতো সুখ আর দুঃখের সব দাগ,
আয় না পাষাণী একবার পথ ভুলে
পরীক্ষা হোক কার কতো অনুরাগ।
Share on:

“ভৈঁরো-কাওয়ালী“

 পিও     শারাব পিও !

তোরে    দীর্ঘ সে কাল গোরে হবে ঘুমাতে।

সে        তিমির-পুরে

তোর     বন্ধু স্বজন প্রিয়া রবেনা সাথে ।।

পিও      নিমেষ-মধু !

পুনঃ      গাহিবনা কা’ল আজি যে গীত গাহি।

শোনো    শোনো মোর গান ―

‘রাতে     শুকাল যে গুল হাসিবেনা সে প্রাতে’ ।।

ওরা       ‘কহিছে সদাই ―

           ‘পাবি মোহিনী হুরী’, শোনো আমার বাণী ―

ওরে       মধুরতর

            এই আঙুর-পানি এই পানশালাতে ।।

ধর         নগদা যা পাস,

            মিছে র’সনে ব’সে বাকী পাওনা-আশায়,

দূরে        ম্রিদং বাজে

            শুধু ফাঁকা আওয়াজে তোর মন ভোলাতে’।
Share on:

তুমি ভালো না বাসলেই বুঝতে পারি ভালোবাসা আছে।
তুমি ভালো না বাসলেই ভালোবাসা জীবনের নাম
ভালোবাসা ভালোবাসা বলে
দাঁড়ালে দু’হাত পেতে
ফিরিয়ে দিলেই
বুঝতে পারি ভালোবাসা আছে।

না না বলে ফেরালেই
বুঝতে পারি ফিরে যাওয়া যায় না কখনো।
না না বলে ফিরিয়ে দিলেই
ঘাতক পাখির ডাক শুনতে পাই চরাচরময়

সুসজ্জিত ঘরবাড়ি
সখের বাগান
সভামঞ্চে করতালি
জয়ধ্বনি পুষ্পার্ঘ্য ইত্যাদি
সব ফেলে
তোমার পায়ের কাছে অস্তিত্ব লুটিয়ে দিয়ে
তোমাকে না পেলে, জানি
যে পায়, সে পায়
কি অমূল্য ধন।
Share on:

কাব্যগ্রন্থঃ সাগর সঙ্গীত
কবিতাঃ তরঙ্গে তরঙ্গে আজ যেই গীত বাজে

তরঙ্গে তরঙ্গে আজ যেই গীত বাজে,
সোনার স্বপন ভরা প্রভাতের মাঝে;
সেই গীতে ভরি গেছে হৃদয় আমার,
গগনে পবনে বহে সেই গীত ধার!
কি মোরে করেছ আজ! মনখানি মম,
শত শত তন্ত্রীভরা গীতযন্ত্র সম, —
পরশি তোমার করে কাঁপিয়া কাঁপিয়া,
গরবে গৌরবে আজ উঠিছে বাজিয়া।
Share on:

“হে কবি! নীরব কেন-ফাল্গুন যে এসেছে ধরায়,
বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?”
কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি-
“দখিন দুয়ার গেছে খুলি?
বাতাবী নেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের মুকুল?
দখিনা সমীর তার গন্ধে গন্ধে হয়েছে কি অধীর আকুল?”

“এখনো দেখনি তুমি?” কহিলাম “কেন কবি আজ
এমন উন্মনা তুমি? কোথা তব নব পুষ্পসাজ?”
কহিল সে সুদূরে চাহিয়া-
“অলখের পাথার বাহিয়া
তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান?
ডেকেছে কি সে আমারে? -শুনি নাই,রাখিনি সন্ধান।”

কহিলাম “ওগো কবি, রচিয়া লহ না আজও গীতি,
বসন্ত-বন্দনা তব কণ্ঠে শুনি-এ মোর মিনতি।”
কহিল সে মৃদু মধুস্বরে-
“নাই হ’ল, না হোক এবারে-
আমার গাহিতে গান! বসন্তরে আনিতে ধরিয়া-
রহেনি,সে ভুলেনি তো, এসেছে তো ফাল্গুন স্মরিয়া।”

কহিলাম “ওগো কবি, অভিমান করেছ কি তাই?
যদিও এসেছে তবু তুমি তারে করিলে বৃথাই।”
কহিল সে পরম হেলায়-
“বৃথা কেন? ফাগুন বেলায়
ফুল কি ফোটে নি শাখে? পুষ্পারতি লভে নি কি ঋতুর রাজন?
মাধবী কুঁড়ির বুকে গন্ধ নাহি? করে নি সে অর্ঘ্য বিরচন?”

“হোক, তবু বসন্তের প্রতি কেন এই তব তীব্র বিমুখতা?”
কহিলাম “উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা?”
কহিল সে কাছে সরি আসি-
“কুহেলী উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী-
গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে
রিক্ত হস্তে। তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোন মতে।”
Share on:

তোমার চোখের মতো কয়েকটি চামচ পড়ে আছে দ্যাখো প্রশান্ত টেবিলে
আর আমার হাত ঘড়ি
নীল ডায়ালের তারা জ্বলছে মৃদু আমারই কব্জিতে !

টুরিস্টের মতো লাগছে দেখতে আমাকে
সাংবাদিকের মতো ভীষণ উৎসাহী
এ মুহূর্তে সিগ্রেটের ছাই থেকে
শিশিরের মতো নম্র অপেক্ষার কষ্টগুলি ঝেড়ে ফেলেছি কালো এ্যাসট্রেতে !
রেস্তোরাঁয় তুমি কি আসবেনা আজ স্বাতী ?

তোমার কথার মতো নরম সবুজ
কেকগুলি পড়ে আছে একটি পিরিচে
তোমার চোখের মতো কয়েকটি চামচ !

তোমার হাসির মতো উড়ছে চাইনিজ পর্দা রেস্তোরাঁয়
আর একটি অস্থির নীল প্রজাপতি পর্দার বুনট থেকে উড়ে এসে
ঢুকে গেছে আমার মাথায় !

রেস্তোরাঁয় তুমি কি আসছোনা আজ স্বাতী ?
রেস্তোরাঁয় তুমি কি আসবেনা আর স্বাতী ?
Share on:

কবিতা বোঝে না এই বাংলার কেউ আর
দেশের অগণ্য চাষী, চাপরাশী
ডাক্তার উকিল মোক্তার
পুলিস দারোগা ছাত্র অধ্যাপক সব
কাব্যের ব্যাপারে নীরব!

স্মাগলার আলোচক সম্পাদক তরুণীর দল
কবিতা বোঝে না কোনো সঙ
অভিনেত্রী নটী নারী নাটের মহল
কার মনে কাতোটুকু রঙ?
ও পাড়ার সুন্দরী রোজেনা
সারা অঙ্গে ঢেউ তার, তবু মেয়ে
কবিতা বোঝে না!

কবিতা বোঝে না আর বাংলার বাঘ
কুকুর বিড়াল কালো ছাগ,
খরগোস গিরগিটি চতুর বানর
চক্রদার যত অজগর!

কবিতা বোঝে না এই বাঙলার বনের হরিণী
জঙ্গলের পশু-পাশবিনী।
শকুনী গৃধিনী কাক শালিক চড়ুই
ঘরে ঘরে ছুঁচো আর উই;
বাংলার আকাশের যতেক খেচর
কবিতা বোঝে না তারা। কবিতা বোঝে না অই
বঙ্গোপসাগরের কতেক হাঙর!
Share on:
 
কে আর বুঝিবে হায় এ দেশের বাণী?
এ দেশের লোক যারা,
সকলইতো গেছে মারা,
আছে শুধু কতগুলি শৃগাল শকুনি!
সে কথা ভাবিতে হায়
এ প্রাণ ফেটে যায়,
হৃদয় ছাপিয়ে উঠে – চোখ ভরা পানি।
কে আর বুঝিবে হায় এ দেশের বাণী!
এ দেশের লোক যত
বিলাস ব্যসনে রত
এ দেশের দুঃখ কিছু নাহি বুঝে তারা।
দেশ গেল ছারেখারে,
এ কথা বলিব কারে?
ভেবে ভেবে তবু মোর হয়ে গেছে সারা!
প্রাণভরা হাহাকার
চোখ ভরা অশ্রুধার,
এ হৃদি যে হয়ে গেছে মরুভূমি-পারা!
Share on:


গাহি সাম্যের গান-
মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান,
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে, সল কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।
‘পূজারী, দুয়ার খোল,
ক্ষুদার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পূজার সময় হলো!’
স্বপ্ন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয়
দেবতার বরে আজ রাজা-টাজা হ’য়ে যাবে নিশ্চয়!
জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুদায় কন্ঠ ক্ষীণ
ডাকিল পান্থ, ‘দ্বার খোল বাবা, খাইনি তো সাত দিন!’
সহসা বন্ধ হ’ল মন্দির, ভুখারী ফিরিয়া চলে,
তিমির রাত্রি, পথ জুড়ে তার ক্ষুদার মানিক জ্বলে!
ভুখারী ফুকারি’ কয়,
‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়!’


মসজিদে কাল শিরনী আছিল, অঢেল গোস্ত রুটি
বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটিকুটি!
এমন সময় এলো মুসাফির গায়ে-আজারির চিন্
বলে ‘বাবা, আমি ভুকা ফাকা আছি আজ নিয়ে সাত দিন!’
তেরিয়াঁ হইয়া হাঁকিল মোল্লা – “ভ্যালা হ’ল দেখি লেঠা,
ভুখা আছ মর গো-ভাগাড়ে গিয়ে! নামাজ পড়িস বেটা?”
ভুখারী কহিল, ‘না বাবা!’ মোল্লা হাঁকিল – তা’ হলে শালা
সোজা পথ দেখ!’ গোস্ত-রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা!
ভুখারী ফিরিয়া চলে,
চলিতে চলিতে বলে-
“আশিটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তোমায় কভু,
আমার ক্ষুদার অন্ন তা’বলে বন্ধ করোনি প্রভু
তব মসজিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী,
মোল্লা-পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবী!”
Share on:

একবার বলেছি, তোমাকে আমি ভালোবাসি।
একবার বলেছি, তোমাকে আমি, তোমাকেই ভালোবাসি।
বল
এখন সে কথা আমি ফেরাব কেমনে !
আমি একবার বলেছি তোমাকে …
এখন তোমাকে আমি ঘৃণা করি।
এখন তোমার
দৃষ্টির কবলে এলে ক্ষতস্থান জ্বলে জ্বলে ওঠে।
তোমার সান্নিধ্যে এলে তুমি উষ্ণ নাভিমূল থেকে
বাতাসে ছড়াও তীব্র সাপিনীর তরল নিঃস্বাস। আমি
যতবার ছুটতে চাই, তোমার দৃষ্টির বাইরে যেতে চাই, তুমি
দু চোখে কী ইন্দ্রজাল মেলে রাখ ! আমি ছুটতেও পারি না
আমি ফেরাতে পারি না কথা
আমি একবার বলেছি, তোমাকে …

সম্রাজ্ঞীর বেশে আছ। নতজানু আমি
দাসানুদাসের ভঙ্গি করপুটে, দেখি
তোমার মুখের রেখা অবিচল, স্থির জঙ্ঘা তোলে না টঙ্কার,
তুমি পবিত্রতা পবিত্রতা বলে
অস্পষ্ট চিত্কার কর, তুমি
কেবলি মালিন্য দেখ, অশ্লীলতা, ক্রমান্বয়ে ঘৃণা
ক্রোধ বাড়ে, উত্তেজনা বাড়ে
নামে উষ্ণ জলস্রোত। তুমি
এইভাবে প্রবল ঘৃণায়
আমাকে ভাসিয়ে দিয়ে অহঙ্কার রাখতে চাও অটুট। তবুও
পৃথিবীতে আছে কিছু মানুষের অবস্থান, তারা
অপমানে ধন্য হয়
উপেক্ষায় ঋজু;
তারা স্বভাব-কাঙাল ! যদি
একবার বলে তবে ফেরাতে পারে না। আমি
ফেরাতে পারি না। আমি
একবার বলেছি, তোমাকে আমি ভালোবাসি।
ভালোবাসা ভালোবাসা ভালোবাসা
ভালোবাসা ! সে কেমন, কোন দীপ্র স্বর্গীয় প্রতাপ
যার মৃত্যু নেই
জন্মান্তর নেই?
Share on:

কিছুদিন আগে সংবাদ সংগ্রহের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের একটা অগ্রবর্তী ঘাঁটিতে গিয়েছিলাম। ক্যাম্প-কমান্ডার ভীষণ ব্যস্ত ছিলেন। সেই ব্যস্ততার মুহূর্তে আমার দিকে একটা খাতা এগিয়ে দিয়ে বললেন, আপনি বসুন। এই খাতাটা পড়ুন বসে বসে। আমি কয়েকটা কাজ সেরে নিই। এরপর আপনার সঙ্গে আলাপ করব। খাতাটা হাত বাড়িয়ে নিলাম। লাল মলাটে বাঁধানো একটা খাতা। ধুলো, কালি আর তেলের কালচে দাগে ময়লা হয়ে গেছে এখানে-ওখানে। খাতাটা খুললাম। মেয়েলি ধরনের গোটা-গোটা হাতে লেখা। মাঝেমধ্যে একটু এলোমেলো। আমি পড়তে শুরু করলাম।

প্রথম প্রথম কাউকে মরতে দেখলে ব্যথা পেতাম। কেমন যেন একটু দুর্বল হয়ে পড়তাম। কখনো চোখের কোণে একফোঁটা অশ্রু হয়তো জন্ম নিত। এখন অনেকটা সহজ হয়ে গেছি। কী জানি, হয়তো অনুভূতিগুলো ভোঁতা হয়ে গেছে, তাই। মৃত্যুর খবর আসে। মরা মানুষ দেখি। মৃতদেহ কবরে নামাই। পরক্ষণে ভুলে যাই।
রাইফেলটা কাঁধে তুলে নিয়ে ছোট্ট টিলাটার ওপরে এসে দাঁড়াই। সামনে তাকাই। বিরাট আকাশ। একটা লাউয়ের মাচা। কচি লাউ ঝুলছে। বাতাসে মৃদু দুলছে। কয়েকটা ধানক্ষেত। দুটো তালগাছ। দূরে আরেকটা গ্রাম। খবর এসেছে ওখানে ঘাঁটি পেতেছে ওরা। একদিন যারা আমাদের অংশ ছিল। একসঙ্গে থেকেছি। শুয়েছি। খেয়েছি। ঘুমিয়েছি। এক টেবিলে বসে গল্প করেছি। প্রয়োজন বোধে ঝগড়া করেছি।

ভালোবেসেছি। আজ তাদের দেখলে শরীরের রক্ত গরম হয়ে যায়। চোখ জ্বালা করে ওঠে। হাত নিশপিশ করে। পাগলের মতো গুলি ছুড়ি। মারার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠি। একজনকে মারতে পারলে উল্লাসে ফেটে পড়ি। ঘৃণার থুতু ছিটাই মৃতদেহের মুখে।
সামনের ধানক্ষেত। আলের উপরে কয়েকটা গরু। একটা ছাগল। একটানা ডাকছে। একঝাঁক পাখি উড়ে চলে গেল দূরে গ্রামের দিকে। কী যেন নড়েচড়ে উঠল সেখানে। মুহূর্তে দৃষ্টি স্থির হয়ে গেল। ক্যাম্প-কমান্ডারকে খবর দিলাম।

স্যার, মনে হচ্ছে ওরা এগুতে পারে।
তিনি একটা ম্যাপের ওপরে ঝুঁকে পড়ে হিসাব কষছিলেন। মুখ তুলে তাকালেন। একজোড়া লাল চোখ। গত দু-রাত ঘুমোননি। অবকাশ পাননি বলে। তিনি তাকালেন। বললেন, কী দেখেছ?
বললাম, মনে হলো একটা মুভমেন্ট।
ভুল দেখেছ। আমাকে মাঝপথে থামিয়ে দিলেন তিনি। ওদের দু-একদিনের মধ্যে এগোবার কথা নয়। যাও ভালো করে দেখো।
চলে এলাম নিজের জায়গায়। একটানা তাকিয়ে থাকি। মাঝেমধ্যে তন্দ্রা এসে যায়। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। হয়তো তাই ভুল দেখি।

কিন্তু বুড়িগঙ্গার পাশে লঞ্চঘাটের অপরিসর বিশ্রামাগারে যে-দৃশ্য দেখেছিলাম সেটা ভুল হওয়ার নয়। শুনেছিলাম, বহুলোক আশ্রয় নিয়েছিল সেখানে। যখন গেলাম, দেখলাম কেউ নেই।
দেখলাম।

মেঝেতে পুডিংয়ের মতো জমাট রক্ত।
বুটের দাগ।
অনেক খালি পায়ের ছাপ।
ছোট পা। বড় পা। কচি পা।
কতগুলো মেয়ের চুল।
দুটো হাতের আঙুল।
একটা আংটি।
চাপ চাপ রক্ত।
কালো রক্ত। লাল রক্ত।
মানুষের হাত। পা। পায়ের গোড়ালি।
পুডিংয়ের মতো রক্ত।
খুলির একটা টুকরো অংশ।
এক খাবলা মগজ।
রক্তের ওপরে পিছলে-যাওয়া পায়ের ছাপ।
অনেক ছোট-বড় ধারা। রক্তের ধারা।
একটা চিঠি।
মানিব্যাগ।
গামছা।
একপাটি চটি।
কয়েকটি বিস্কুট।
জমে থাকা রক্ত।
একটা নাকের নোলক।
একটি চিরুনি।
বুটের দাগ।
লাল হয়ে যাওয়া একটা সাদা ফিতে।
চুলের কাঁটা।
দেশলাইয়ের কাঠি।
একটা মানুষকে টেনে নিয়ে যাওয়ার ছাপ।
রক্তের মাঝখানে এখানে-ওখানে অনেকগুলো ছড়ানো।
পাশের নর্দমাটা বন্ধ।
রক্তের স্রোত লাভার মতো জমে গেছে সেখানে।
দেখছিলাম।
দেখে ঊর্ধ্বশ্বাসে পালিয়েছিলাম সেখান থেকে।
আমি একা নই। অসংখ্য মানুষ।
অসংখ্য মানুষ পিঁপড়ের মতো ছুটছিল।
মাথায় সুটকেস, বগলে কাপড়ের গাঁটরি। হাতে হ্যারিকেন। কোমরে বাচ্চা।
চোখেমুখে কী এক অস্থির আতঙ্ক।
কথা নেই। মৌন সবাই।
সহসা কে যেন বলল, ওদিকে যাবেন না। মিলিটারি। নৌকায় করে করে লোকজন সব ওপারে পালাচ্ছিল। মিলিটারি ওদের ওপরে গুলি করেছে। দু-তিন শ লোক মারা গেছে ওখানে। যাবেন না।
মনে হলো পায়ের সঙ্গে যেন কয়েক মণ পাথর বেঁধে দিয়েছে কেউ।
একা নই। অসংখ্য মানুষ। সহস্র চোখ। হতবিহ্বল মুহূর্ত। কোনদিকে যাব। পেছনে ফিরে যাওয়ার পথ নেই। মৃতদেহের স্তূপের নিচে সে পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
সামনে এগিয়ে যাব। ভরসা পাচ্ছিনে। সেখানেও হয়তো মৃতের পাহাড় পথ অবরোধ করে দাঁড়িয়ে আছে।
কোনদিকে যাব?
পরমুহূর্তে একটা হেলিকপ্টারের শব্দ শুনতে পেলাম। আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সবাই ছুটতে লাগলাম আমরা। যে যেদিকে পারছে ছুটছে। কাঁচকি মাছের মতো চারপাশে ছিটকে যাচ্ছে সবাই।
হেলিকপ্টার মাথার ওপরে নেমে এলো।
তারপর।
তারপর মনে হলো একসঙ্গে যেন অনেকগুলো বাজ পড়ল। মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে গেলাম। কিছু দেখতে পাচ্ছি না। শুধু অনেকগুলো শব্দের তাণ্ডব। মেশিনগানের শব্দ। বাচ্চাদের কান্না। কতগুলো মানুষের আর্তনাদ। কাতরোক্তি। কয়েকটা কুকুরের চিৎকার। কান্না। মেশিনগানের শব্দ। মানুষের বিলাপ। একটি কিশোরের কণ্ঠস্বর। বা’জান। বা’জান। হারিয়ে যাওয়া বাবাকে ডাকছে সে। বা’জান। বা’জান। তারপর শ্মশানের নীরবতা। ঘাড়ের কাছে চিনচিনে একটা ব্যথা। ধীরে ধীরে মুখ তুলে তাকালাম।
দেখলাম। না, কিছুই দেখতে পেলাম না। সব কিছু ঝাপসা হয়ে এলো। মনে হলো চারপাশে অন্ধকার নেমে আসছে। বুঝতে পারলাম জ্ঞান হারাচ্ছি। কিংবা মারা যাচ্ছি।
সামনে ধানক্ষেত। একটা লাউয়ের মাচা। কচি লাউ ঝুলছে। পেছনে কয়েকটা বাঁশবন। আড়ালে চার-পাঁচটা তাঁবু। একটা পুরনো দালান। ওখানে আমরা থাকি।
মোট সাতাশজন মানুষ।
প্রথম ঊনিশজন ছিলাম। আটজন মারা গেল মর্টারের গুলিতে। ওদের নামিয়ে দিয়ে যখন ক্যাম্পে ফিরলাম, তখন আমরা এগারোজন।
একজন পালিয়ে গেল সে-রাতে। গেল, আর এলো না। আর একজন মারা গেল হঠাৎ অসুখ করে। কী অসুখ বুঝে ওঠার আগেই হাত-পা টান টান করে শুয়ে পড়ল সে। আর উঠল না। তার বুকপকেটে একটা চিঠি পেয়েছিলাম। মায়ের কাছে লেখা। মা। আমার জন্য তুমি একটুও চিন্তা কোরো না, মা। আমি ভালো আছি।
চিঠিটা ওর কবরে দিয়ে দিয়েছি। থাকো। ওখানেই থাকো। তখন ছিলাম ন’জন। এখন আবার বেড়ে সাতাশে পৌঁছেছি।
সাতাশজন মানুষ।
নানা বয়সের। ধর্মের। মতের।
আগে কারো সঙ্গে আলাপ ছিল না। পরিচয় ছিল না। চেহারাও দেখিনি কোনোদিন।
কেউ ছাত্র ছিল। কেউ দিন-মজুর। কৃষক। কিংবা মধ্যবিত্ত কেরানি। পাটের দালাল। অথবা পদ্মাপারের জেলে।
এখন সবাই সৈনিক।
একসঙ্গে থাকি। খাই। ঘুমোই।
রাইফেলগুলো কাঁধে তুলে নিয়ে যখন কোনো শত্রুর সন্ধানে বেরোই তখন মনে হয় পরস্পরকে যেন বহুদিন ধরে চিনি। জানি। অতি আপনজনের মতো অনুভব করি।
মনে হয় দীর্ঘদিনের আত্মীয়তার এক অবিচ্ছেদ্য বাঁধনে আবদ্ধ আমরা। আমাদের অস্তিত্ব ও লক্ষ্য দুই-ই এক। মাঝেমধ্যে বিশ্রামের মুহূর্তে গোল হয়ে বসে গল্প করি আমরা।
অতীতের গল্প।
বর্তমানের গল্প।
ভবিষ্যতের গল্প।
টুকিটাকি নানা আলোচনা।




ওষুধ ফুরিয়ে গেছে। আনতে হবে। ক’দিন ধরে শুধু ডাল-ভাত চলছে। একটু মাছ আর মাংস পেলে মন্দ হতো না। সাতাশজন মানুষ আমরা। মাত্র ন’টা রাইফেল। আরো যদি অস্ত্র পেতাম। সবার হাতে যদি একটা করে রাইফেল থাকত, তাহলে সেদিন ওদের একজন সৈন্যও পালিয়ে যেতে দিতাম না।
মোট দু শ জনের মতো এসেছিল ওরা। ৪৫টা লাশ পেছনে ফেলে পালিয়েছে। তাড়া করেছিলাম আমরা। খেয়াপার পর্যন্ত। গুলি ফুরিয়ে গিয়েছিল বলে ফিরে চলে এসেছি।
এসে দেখি আশপাশের গ্রাম থেকে অসংখ্য ছেলে-বুড়ো-মেয়ে-গেরস্তবাড়ির বউ ছুটে এসেছে সেখানে।
কারো হাতে ঝাঁটা। দা। কুড়াল। খুন্তি।
মৃতদেহগুলোর মুখে ঝাঁটা মারছে ওরা।
কুড়াল দিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেলছে ওদের হাত। পা। মাথা। বুকের পাঁজর। দা দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে একটা মৃতদেহকে শত টুকরো করতে করতে জনৈক বৃদ্ধ চিৎকার করে কাঁদছিলেন। আমার পুলাডারে মারছস। বউডারে নিয়া গেছস। মাইয়াডারে পাগল করছস। আমার সোনার সংসার পুড়ায়া দিছস।
আল্লার গজব পড়ব। আল্লাহর গজব পড়ব। ঘৃণা। ক্রোধ। যন্ত্রণা।
আমরা বাধা দিলাম। আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ডুকরে কেঁদে উঠল ওরা। করুণ বিলাপ শুরু করল। বিলাপের অবসরে নিজেদের সহস্র দুঃখ-বেদনার ইতিহাস বর্ণনা করতে লাগল।
ছেলে নেই। স্বামী নেই। স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছে। যুবতী মেয়েটাকে ধরে নিয়ে গেছে। তিন মাস হলো। হালের গরু। গোলার ধান। গায়ের অলংকার। কিছু নেই। সব লুট করেছে।
ঘৃণা। ক্রোধ। যন্ত্রণা।
এত সব বুকে নিয়ে ওরা বাঁচবে কেমন করে। একটা বিস্ফোরণে যদি সব কিছু ভেঙে চুরমার হয়ে যেত তাহলে হয়তো বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে পারত ওরা।
ওরা একা নয়। অনেকগুলো মানুষ। সাড়ে সাত কোটি। এক কোটি লোক ঘর-বাড়ি-মাটি ছেড়ে পালিয়েছে, তিন কোটি লোক সারাক্ষণ পালাচ্ছে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে।
ভয়। ত্রাস। আতঙ্ক।
জ্ঞান ফিরে এলে আমিও পালিয়েছিলাম। পোড়ামাটির ঘ্রাণ নিতে নিতে। অনেক মৃতদেহ ডিঙিয়ে। কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী ভেদ করে।
একটা গয়না নৌকায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। ছেলে-বুড়ো-মেয়ে-বাচ্চাতে গিজগিজ করছিল সেটা। দুইপাশের গ্রামগুলোতে আগুন জ্বলছে।
কিছুক্ষণ আগে কয়েকটা প্লেন এসে একটানা বোমাবর্ষণ করেছে সেখানে।
কাছেই একটা মফস্বল শহর। এখনো পুড়ছে। কালো জমাট ধোঁয়া কুণ্ডলী পাকিয়ে পাকিয়ে উঠছে আকাশের দিকে। একটা মানুষ নেই। কুকুর নেই। জন্তু-জানোয়ার নেই। শূন্য বাড়িগুলো প্রেতপুরীর মতো দাঁড়িয়ে। সহসা অনেকগুলো মেয়ের কণ্ঠস্বর শোনা গেল। তাকিয়ে দেখলাম। দূরে নদীর পারে একসঙ্গে জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে কতগুলো মেয়ে চিৎকার করে নৌকাটাকে পাড়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ডাকছে। ওরা আশ্রয় পেতে চায় নৌকাতে।
না, না, খবরদার, নৌকা ভেড়াবে না। জনৈক বৃদ্ধা ওদের দিকে তাকিয়ে খেঁকিয়ে উঠল।
কেন, কী হয়েছে?
কী আর হবে? বাজে মেয়ে। বাজারের মেয়ে।
বাজারের মেয়ে মানে?
মানে আবার কী সাহেব। বেশ্যা। বেশ্যা চেনেন না? ঘৃণায় চোখমুখ কুঁচকে এলো তার।
তার একার নয়। অনেকের।
অনেকেই মুখ বার করে তীরে দাঁড়িয়ে-থাকা বেশ্যাগুলোকে দেখল। না না। নৌকা থামাবার দরকার নেই। আপদগুলো মরুক। মরলেই ভালো।
নৌকা থামাও। সহসা ভিড়ের ভেতর থেকে একটা ছেলে চিৎকার করে উঠল। মুখভরা খোঁচা-খোঁচা দাড়ি। রক্তজবার মতো লাল চোখ। শিগগির নৌকাতে তুলে নাও ওদের। কঠিন কণ্ঠে আদেশ করল সে। উত্তরে বুড়োটা বিরক্তি প্রকাশ করল। না, নৌকা থামবে না।
সঙ্গে সঙ্গে সামনে লাফিয়ে এসে বুড়োটার গলা চেপে ধরল ছেলেটা। কুত্তার বাচ্চা। তোমাকে এক্ষুণি তুলে ওই নদীর জলে ফেলে দেব আমি। কোন্ শালা শুওরের বাচ্চা আছে এখানে বাধা দেয় আমাকে।
নৌকা ভেড়াও মাঝি। ওদের তুলে নাও।
কয়েকটা নীরব মুহূর্ত। নৌকা ভিড়ল।
ভয়ে-আতঙ্কে অর্ধমৃত বেশ্যাগুলো ভেড়ার পালের মতো নৌকায় এসে চড়ল।
ছোট বেশ্যা। মাঝারি বেশ্যা। বড় বেশ্যা।
কিশোর বেশ্যা। যুবতী বেশ্যা। বৃদ্ধ বেশ্যা।
ঘৃণায় একপাশে সরে গেল নৌকার কুলীন যাত্রীরা। বেশ্যারা কোনো কথা বলল না। এককোণে গাদাগাদি করে বসল।
অনেকগুলো মুখ।
একটা মুখ আমার মায়ের মতো দেখতে।
মা এখন কী করছে?
মায়ের কথা মনে পড়তে বুকটা ব্যথা করে উঠল।
ছোট ভাই। বোন ইতুদি। ওরা কেমন আছে?
বেঁচে আছে, না মরে গেছে?
জানি না। হয়তো বহুদিন জানব না।
তবু একটা কথা বারবার মনের মধ্যে উঁকি দেয় আমার।
আবার কি ওদের সঙ্গে একসঙ্গে নাস্তার টেবিলে বসতে পারব আমি?
আবার কি রোজ সকালে মা আমার বদ্ধ দুয়ারে এসে কড়া নেড়ে ডাকবে? কিরে, এখনো ঘুমোচ্ছিস? অনেক বেলা হয়ে গেল যে।
ওঠ্। চা খাবি না?
কিংবা।
দল বেঁধে সবাই বাড়ির ছাদের ওপর কেরাম খেলা। পারব কি আবার?
অথবা।
মাকে সাক্ষী রেখে, সবাই মিলে বাবার পকেট মারা? হয়তো। জানি না।
জানতে গেলে ভাবনা হয়। ভাবনাটাই একটা যন্ত্রণা। অথচ ভাবতে আমি এককালে ভীষণ ভালোবাসতাম। বিশেষ করে জয়াকে নিয়ে।
চিনু ভাবীর জয়া। কতভাবে ভেবেছি ওকে।
কখনো সমুদ্রের উত্তাল পটভূমিতে।
কখনো ঢেউ-জাগানো মিছিলের মাঝখানে।
কখনো ছোট্ট একটি ঘরের একান্তে। দিনে। রাতে।
অন্ধকারের নিবিড়তায়।
কিংবা কোনো দুপুরে। কোনো রেস্তোরাঁর কোণের টেবিলে। নিরিবিলি নির্জনে। দুই কাপ চা সামনে রেখে অনেকক্ষণ ধরে কোনো কথা না বলে বসে-থাকার মুহূর্তে। ভাবতে ভালো লাগত।
ইছামতী, করতোয়া, মুয়ূরাক্ষী বলে যে নদীর নাম, তার জলে দুজনে সাঁতার কেটে ঢেউয়ের সঙ্গে কানামাছি খেলতে।
জয়া কোনোদিন সমুদ্র দেখেনি। সমুদ্র দেখার বড় ইচ্ছে ছিল তার।
একদিন হাসতে হাসতে বলল : জানো, সমুদ্র দেখে এলাম। কখন! কোথায়? অবাক হয়েছিলাম আমি।
কেন, এই শহরে? কপালে জমে-ওঠা বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো আঁচল দিয়ে মুছে দিয়ে বলেছিল জয়া। শহরের অলিতে-গলিতে এত সমুদ্রের ছড়াছড়ি জীবনে দেখেছ কখনো?
জনতার সমুদ্র।
সমুদ্রের চেয়ে গভীর।
সাগরের চেয়েও উত্তাল।
গতিময়।
মনে হচ্ছিল সামনে শত বাধার পাহাড় আসুক না কেন, সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।
কোটি কোটি মুখ। পাথরে খোদাই করা চেহারা। মুষ্টিবদ্ধ হাত সীমানা ছাড়িয়ে।
লক্ষ-কোটি বজ্রের শব্দ কিংবা ঢেউয়ের ধ্বনি সে মিছিলের গর্জনের কাছে অর্থহীন।
আগে তো দেখিনি কোনোদিন।
বাহান্নর ফেব্রুয়ারিতে। চুয়ান্নতে। বাষট্টি, ছেষট্টি কিংবা ঊনসত্তরে অনেক দেখেছি।
কিন্তু এত প্রাণের জোয়ার কখনো দেখিনি।
এত মৃত্যুও দেখিনি আগে।





সামনে তাকাই। বিরাট আকাশ। কয়েকটা লাউয়ের মাছা। কচি লাউ ঝুলছে। কয়েকটা ধানক্ষেত। দুটো তালগাছ। দূরে আর একটা গ্রাম।
প্রতিদিন দেখি।
জয়াকেও এত নিবিড় করে দেখিনি কোনোদিন। পেছনে কয়েকটা বাঁশবন। আড়ালে চার-পাঁচটা তাঁবু। একটা পুরনো দালান। সে দালানের গায়ে কাঠকয়লা দিয়ে অনেক ছোট ছোট রেখা এঁকেছি আমরা। ওগুলো মৃতের হিসাব।
আমাদের নয়।
ওদের।
যখনই কোনো শত্রুকে বধ্ করেছি, তখনই একটা নতুন রেখা টেনে দিয়েছি দেয়ালে। হিসাব রাখতে সুবিধে হয় তাই। প্রায়ই দেখি। গুনি। তিন শ বাহাত্তর, তিহাত্তর, চুয়াত্তর। পুরো দেয়ালটা কবে ভরে যাবে সে প্রতীক্ষায় আছি।
আমাদের যারা মরেছে। তাদের হিসাবও রাখি। কিন্তু সেটা মনে মনে। মনের মধ্যে অনেকগুলো দাগ। সেটাও মাঝে মাঝে গুনি।
একদিন।
বেশ কিছুদিন আগে। সেক্টর কমান্ডার এসেছিলেন আমাদের ক্যাম্পে, দেখতে। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিলাম আমরা। অভিবাদন করেছিলাম তাঁকে।
তিনি আমাদের একটি প্রশ্ন করেছিলেন।
প্রায় এক ধরনের উত্তর দিয়েছিলাম আমরা।
বলেছিলাম, দেশের জন্য। মাতৃভূমির জন্য যুদ্ধ করছি। যুদ্ধ করছি দেশকে মুক্ত করার জন্য।
বাংলাদেশ।
না, পরে মনে হয়েছিল উত্তরটা বোধ হয় ঠিক হয়নি। নিজেরা অনেকক্ষণ আলাপ করেছি। উত্তরটা ঠিক হলো কি? দেশ তো হলো ভূগোলের ব্যাপার। হাজার বছরে যার হাজারবার সীমারেখা পাল্টায়। পাল্টেছে। ভবিষ্যতেও পাল্টাবে।
তাহলে কিসের জন্য লড়ছি আমরা?
বন্ধুরা নানাজনে নানারকম উক্তি করেছিল।
কেউ বলেছিল, আমরা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যে লড়ছি। ওরা আমাদের মা-বোনদের কুকুর-বেড়ালের মতো মেরেছে, তাই। তার প্রতিশোধ নিতে চাই।
কেউ বলেছিল, আমরা আসলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ছি। ওই শালারা বহু অত্যাচার করেছে আমাদের ওপর। শোষণ করেছে। তাই ওদের তাড়ানোর জন্য লড়ছি।
কেউ বলেছিল, আমি অতশত বুঝি না মিয়ারা। আমি শেখ সাহেবের জন্য লড়ছি।
কেউ বলেছিল, কেন লড়ছি জানো? দেশের মধ্যে যত গুণ্ডা-বদমাশ, ঠগ, দালাল, ইতর, মহাজন আর ধর্মব্যবসায়ী আছে তাদের সবার পাছায় লাথি মারতে।
আমি ওদের কথাগুলো শুনছিলাম। ভাবছিলাম। মাঝেমধ্যে আলোচনায় অংশ নিতে গিয়ে তর্ক করছিলাম।
কিন্তু মন ভরছিল না।
কিসের জন্য লড়ছি আমরা? এত প্রাণ দিচ্ছি, এত রক্তক্ষয় করছি?
হয়তো সুখের জন্য। শান্তির জন্য। নিজের কামনা-বাসনাগুলোকে পরিপূর্ণতা দেওয়ার জন্য।
কিংবা শুধু বেঁচে থাকার তাগিদে। নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য। অথবা সময়ের প্রয়োজনে। সময়ের প্রয়োজন মেটানোর জন্য লড়ছি আমরা।
অতশত ভাবতে পারি না। আমার ছোট মাথায় অত ভাবনা এখন আর ধরে না। ব্যথা করে। যেটা বুঝি সেটা সোজা। আমাদের মাটি থেকে ওদের তাড়াতে হবে। এটাই এখনকার প্রয়োজন।
দেয়ালের রেখাগুলো বাড়ছে।
মনের দাগও বাড়ছে প্রতিদিন।
হাতের কবজিতে এসে একটা গুলি লেগেছিল কাল। সেটা হাতে না লেগে বুকে লাগতে পারত। মাত্র দু-আঙুলের ব্যবধান।
এখন ক’দিন বিশ্রাম।
মা কাছে থাকলে মাথায় হাত বুলিয়ে দিত। কাঁদত। বকুনি দিয়ে বলত, বাহাদুর। অত সামনে এগিয়ে গিয়েছিলি কেন? সবার পেছনে থাকতে পারলি না? আর অত বাহাদুরির দরকার নেই বাবা। ঘরের ছেলে এখন ঘরে ফিরে চল।
ঘর?
সত্যি, মানুষের কল্পনা বড় অদ্ভুত।
ঘরবাড়ি কবে ওরা পুড়ে ছাই করে দিয়েছে। তবু ঘরের কথা ভাবতে মন চায়।
খবর পেয়েছি মা, বাবা, ভাই, বোন ওরা সবাই কোথায় যেন চলে গেছে। হয়তো কোনো গ্রাম, কোনো গঞ্জে। কোনো উদ্বাস্তু শিবিরে। কিংবা—
না। ওটা আমি ভাবতে চাই না।
জয়ার কোনো খবর নেই। কোথায় গেল মেয়েটা?
জানি না। জানতে গেলে ভয় হয়।
শুধু জানি, এ যুদ্ধে আমরা জিতব আজ, নয় কাল। নয়তো পরশু।
একদিন আমি আবার ফিরে যাব। আমার শহরে, আমার গ্রামে। তখন হয়তো পরিচিত অনেক মুখ সেখানে থাকবে না। তাদের আর দেখতে পাব না আমি। যাদের পাব তাদের প্রাণভরে ভালোবাসব।
যারা নেই কিন্তু একদিন ছিল, তাদের গল্প আমি শোনাব ওদের।
সেই ছেলেটির গল্প। বুকে মাইন বেঁধে যে ট্যাংকের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
কিংবা সেই বুড়ো কৃষক। রাইফেলটা হাতে তুলে নিয়ে যে মৃদু হেসে বলেছিল, চললাম। আর ফিরে আসেনি। অথবা উদ্বাস্তু শিবিরের পাঁচ লাখ মৃত শিশু।
দশ হাজার গ্রামের আনাচ-কানাচে এক কোটি মৃতদেহ।
না এক কোটি নয়, হয়তো হিসাবের অঙ্ক তখন তিন কোটিতে গিয়ে পৌঁছেছে।
এক হাজার এক রাত কেটে যাবে হয়তো। আমার গল্প তবু ফুরাবে না।
সামনে ধানক্ষেত। বিরাট আকাশ। একটা লাউয়ের মাচা, কচি লাউ ঝুলছে। দুটো তালগাছ। দূরে আরেকটা গ্রাম। গ্রামের নাম রোহনপুর। ওখানে এসে ঘাঁটি পেতেছে ওরা, একদিন যারা আমাদের অংশ ছিল।
ডায়েরিতে আর কিছু লেখা নেই।

খাতাটা ক্যাম্প-কমান্ডারের দিকে এগিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করলাম, কার লেখা, আপনার?
না। আমাদের সঙ্গের একজন মুক্তিযোদ্ধার।

তাঁর সঙ্গে একটু আলাপ করতে পারি কি? আবার প্রশ্ন করলাম।
উত্তর দিতে গিয়ে মুহূর্ত-কয়েক আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন তিনি। তারপর বললেন, দিন কয়েক আগে একটা অপারেশনে গিয়ে ওদের হাতে ধরা পড়েছে সে।
তারপর?
তারপরের খবর ঠিক বলতে পারছি না। হয়তো মেরে ফেলেছে। বেঁচেও থাকতে পারে হয়তো।

চোখজোড়া অজান্তে আবার খাতাটার ওপরে নেমে এলো। অনেকক্ষণ উল্টেপাল্টে দেখলাম সেটা। তারপর মুখটা ঘুরিয়ে নিলাম বাইরের দিকে।

বিরাট আকাশ। একটা লাউয়ের মাছা, কচি লাউ ঝুলছে। কয়েকটা ধানক্ষেত। দুটো তালগাছ। দূরে আরেকটা গ্রাম। সেখানে আগুন জ্বলছে।

-----সমাপ্ত-----
Share on:

চোখ ভরে যে দেখতে চাও
রঞ্জন রশ্মিটা চেনো তো?
বুক ভরে যে শ্বাস নিতে চাও
জানো তো অক্সিজেনের পরিমাণটা কত?
এত যে কাছে আসতে চাও
কতটুকু সংযম আছে তোমার?
এত যে ভালোবাসতে চাও
তার কতটুকু উত্তাপ সইতে পারবে তুমি?
Share on:

করিতে পারি না কাজ
সদা ভয় সদা লাজ
সংশয়ে সংকল্প সদা টলে –
পাছে লোকে কিছু বলে।
আড়ালে আড়ালে থাকি
নীরবে আপনা ঢাকি,
সম্মুখে চরণ নাহি চলে
পাছে লোকে কিছু বলে।
হৃদয়ে বুদবুদ মত
উঠে চিন্তা শুভ্র কত,
মিশে যায় হৃদয়ের তলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
কাঁদে প্রাণ যবে আঁখি
সযতনে শুকায়ে রাখি;-
নিরমল নয়নের জলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
একটি স্নেহের কথা
প্রশমিতে পারে ব্যথা –
চলে যাই উপেক্ষার ছলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
মহৎ উদ্দেশ্য যবে,
এক সাথে মিলে সবে,
পারি না মিলিতে সেই দলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
বিধাতা দেছেন প্রাণ
থাকি সদা ম্রিয়মাণ;
শক্তি মরে ভীতির কবলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
Share on:

দয়িতা, তোমার প্রেম আমাদের সাক্ষ্য মানে নাকি?
সূর্য-ডোবা শেষ হল কেননা সূর্যের যাত্রা বহুদূর।
নক্ষত্র ফোটার আগে আমি একা মৃত্তিকার পরিত্যক্ত,বাকি
আঙুর, ফলের ঘ্রাণ, গম, যব, তরল মধু-র
রৌদ্রসমুজ্জল স্নান শেষ করি। এখন আকাশতলে সিন্ধুসমাজের
ভাঙা উতরোল স্বর শোনা যায় গুঞ্জনের মতো-
দয়িতা, তোমার প্রেম অন্ধকারে শুধু প্রবাসের
আরেক সমাজযাত্রা। আমাদেরই বাহুবল বিচূর্ণ, আহত
সেই সব সাক্ষ্যগুলি জেগে ওঠে। মনে হল
প্রতিশ্রুত দিন হতে ক্রমাগত, ধীরে ধীরে, গোধুলিনির্ভর
সূর্যের যাত্রার পথ। তবু কেন ষোলো
অথবা সতের-এই খেতের উৎসব শেষে, ফল হাতে, শস্যের বাজারে
আমাদের ডেকেছিলে সাক্ষ্য দিতে? তুমুল, সত্বর,
পরস্পরাহীন সাক্ষ্য সমাপন হতে হতে ক্রমান্বয়ে বাড়ে।
Share on:


আমারে সকল ক্ষুদ্রতা হতে
বাঁচাও প্রভু উদার।
হে প্রভু! শেখাও – নীচতার চেয়ে
নীচ পাপ নাহি আর।

যদি শতেক জন্ম পাপে হই পাপী,
যুগ-যুগান্ত নরকেও যাপি,
জানি জানি প্রভু, তারও আছে ক্ষমা-
ক্ষমা নাহি নীচতার।।

ক্ষুদ্র করো না হে প্রভু আমার
হৃদয়ের পরিসর,
যেন সম ঠাঁই পায়
শত্রু-মিত্র-পর।

     নিন্দা না করি ঈর্ষায় কারো
অন্যের সুখে সুখ পাই আরো,
কাঁদি তারি তরে অশেষ দুঃখী
ক্ষুদ্র আত্মা তার।।
Share on:

তুমি কি আমার আকাশ হবে?
মেঘ হয়ে যাকে সাজাব
আমার মনের মত করে ।
তুমি কি আমার নদী হবে?
যার নিবিড় আলিঙ্গনে ধন্য হয়ে
তরী বেশে ভেসে যাব কোন অজানা গন্তব্যের পথে ।
তুমি কি আমার জোছনা হবে?
যার মায়াজালে বিভোর হয়ে
নিজেকে সঁপে দেব সকল বাস্তবতা ভুলে ।
তুমি কি আমার কবর হবে?
যেখানে শান্তির শীতল বাতাসে
বয়ে যাবে আমার চিরনিদ্রার অফুরন্ত প্রহর ।
Share on:


সেলের তালা খোলা মাত্রই এক টুকরো রোদ এসে পড়লো ঘরের মধ্যে
আজ তুমি আসবে ।
সারা ঘরে আনন্দের শিহরণ খেলছে । যদিও উত্তরের বাতাস
হাড়েঁ কাঁপন ধরিয়ে দিয়ে বইছে , তবু আমি ঠান্ডা পানিতে
হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। পাহারাদার সেন্ট্রিকে ডেকে বললাম,
আজ তুমি আসবে । সেন্ট্রি হাসতে হাসতে আমার সিগ্রেটে
আগুন ধরিয়ে দিল । বলল , বারান্দায় হেটেঁ ভুক বাড়িয়ে নিন
দেখবেন , বাড়ী থেকে মজাদার খাবার আসবে ।

দেখো , সবাই প্রথমে খাবারের কথা ভাবে ।
আমি জানি বাইরে এখন আকাল চলছে । ক্ষুধার্ত মানুষ
হন্যে হয়ে শহরের দিকে ছুটে আসছে । সংবাদপত্রগুলোও
না বলে পারছে না যে এ অকল্পনীয় ।
রাস্তায় রাস্তায় অনাহারী শিশুদের মৃতদেহের ছবি দেখে
আমি কতদিন আমার কারাকক্ষের লোহার জালি
চেপে ধরেছি ।
হায় স্বাধীনতা , অভুক্তদের রাজত্ব কায়েম করতেই কি আমরা
সর্বস্ব ত্যাগ করেছিলাম ।

আর আমাকে ওরা রেখেছে বন্দুক আর বিচারালয়ের মাঝামাঝি
যেখানে মানুষের আত্মা শুকিয়ে যায় । যাতে
আমি আমরা উৎস খুঁজে না পাই ।
কিন্তু তুমি তো জানো কবিদের উৎস কি ? আমি পাষাণ কারার
চৌহদ্দিতে আমার ফোয়ারাকে ফিরিয়ে আনি ।
শত দুর্দৈবের মধ্যেও আমরা যেমন আমাদের উৎসকে
জাগিয়ে রাখতাম ।

চড়ুই পাখির চিৎকারে বন্দীদের ঘুম ভাঙছে ।
আমি বারান্দা ছেড়ে বাগানে নামলাম।
এক চিলতে বাগান
ভেজা পাতার পানিতে আমার চটি আর পাজামা ভিজিয়ে
চন্দ্রমল্লিকার ঝোপ থেকে একগোছা শাদা আর হলুদ ফুল তুললাম ।
বাতাসে মাথা নাড়িয়ে লাল ডালিয়া গাছ আমাকে ডাকলো ।
তারপর গেলাম গোলাপের কাছে ।
জেলখানার গোলাপ , তবু কি সুন্দর গন্ধ !
আমার সহবন্দীরা কেউ ফুল ছিড়েঁ না , ছিঁড়তেও দেয় না
কিন্তু আমি তোমার জন্য তোড়া বাঁধলাম ।

আজ আর সময় কাটতে চায়না । দাড়ি কাটলাম । বই নিয়ে
নাড়াচাড়া করলাম । ওদিকে দেয়ালের ওপাশে শহর জেগে উঠছে ।
গাড়ীর ভেঁপু রিক্সার ঘন্টাধ্বনি কানে আসছে ।
চকের হোটেলগুলোতে নিশ্চয়ই এখন মাংসের কড়াই ফুটছে ।
আর মজাদার ঝোল ঢেলে দেওয়া হচ্ছে
গরীব খদ্দেরদের পাতে পাতে ।

না বাইরে এখন আকাল । মানুষ কি খেতে পায় ?
দিনমজুরদের পাত কি এখন আর নেহারির ঝোলে ভরে ওঠে ?
অথচ একটা অতিকায় দেয়াল কত ব্যবধানই না আনতে পারে ।
আ , পাখিরা কত স্বাধীন । কেমন অবলীলায় দেয়াল পেরিয়ে যাচ্ছে
জীবনে এই প্রথম আমি চড়ুই পাখির সৌভাগ্যে কাতর হলাম ।

আমাদের শহর নিশ্চয়ই এখন ভিখিরিতে ভরে গেছে ।
সারাদিন ভিক্ষুকের স্রোত সামাল দিতে হয় ।
আমি কতবার তোমাকে বলেছি , দেখো
মুষ্টি ভিক্ষায় দারিদ্র্য দূর হয় না ।
এর অন্য ব্যবস্হা দরকার , দরকার সামাজিক ন্যায়ের ।
দুঃখের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে ।
আ , যদি আমার কথা বুঝতে ।

প্রিয়তমা আমার ,
তোমার পবিত্র নাম নিয়ে আজ সূর্য উদিত হয়েছে । আর
উষ্ণ অধীর রশ্মির ফলা গারদের শিকের ওপর পিছলে যাচ্ছে ।
দেয়ালের ওপাশ থেকে ঘুমভাঙ্গা মানুষের কোলাহল ।
যারা অধিক রাতে ঘুমোয় আর জাগে সকলের আগে ।
যারা ঠেলে ।
চালায় ।
হানে ।
ঘোরায় ।
ওড়ায় ।
পেড়ায় ।
আর হাত মুঠো করে এগিয়ে যায় ।
সভ্যতার তলদেশে যাদের ঘামের অমোঘ নদী ।
কোনদিন শুকোয় না । শোনো , তাদের কলরব ।

বন্দীরা জেগে উঠছে । পাশের সেলে কাশির শব্দ
আমি ঘরে ঘরে তোমার না ঘোষণা করলাম
বললাম , আজ বারোটায় আমার ‘দেখা’ ।
খুশীতে সকলেই বিছানায় উঠে বসলো ।
সকলেরই আশা তুমি কোন না কোন সংবাদ নিয়ে আসবে ।
যেন তুমি সংবাদপত্র ! যেন তুমি
আজ সকালের কাড়জের প্রধান শিরোনামশিরা !

সূর্য যখন অদৃশ্য রশ্মিমালায় আমাকে দোলাতে দোলাতে
মাঝ আকাশে টেনে আনলো
ঠিক তখুনি তুমি এলে ।
জেলগেটে পৌছেঁ দেখলাম , তুমি টিফিন কেরিয়ার সামনে নিয়ে
চুপচাপ বসে আছো ।
হাসলে , ম্লান , সচ্ছল ।
কোনো কুশল প্রশ্ন হলো না ।

সাক্ষাৎকারের চেয়ারে বসা মাত্রই তুমি খাবার দিতে শুরু করলে ।
মাছের কিমার একটা বল গড়িয়ে দিয়ে জানালে ,
আবরা ধরপাকড় শুরু হয়েছে ।
আমি মাথা নাড়লাম ।

মাগুর মাছের ঝোল ছড়িয়ে দিতে দিতে কানের কাছে মুখ আনলে ,
অমুক বিপ্লবী আর নেই
আমি মাথা নামালাম । বললে , ভেবোনা ,
আমরা সইতে পারবো । আল্লাহ , আমাদের শক্তি দিন ।
তারপর আমরা পরস্পরকে দেখতে লাগলাম ।

যতক্ষণ না পাহারাদারদের বুটের শব্দ এসে আমাদের
মাঝখানে থামলো ।


Share on:

তারা- একটি দু’টি তিনটি করে এলো
তখন- বৃষ্টি-ভেজা শীতের হাওয়া
বইছে এলোমেলো,
তারা- একটি দু’টি তিনটি করে এলো।
থই থই থই অন্ধকারে
ঝাউয়ের শাখা দোলে
সেই- অন্ধকারে শন শন শন
আওয়াজ শুধু তোলে।
ভয়েতে বুক চেপে
ঝাউয়ের শাখা , পাখির পাখা
উঠছে কেঁপে কেঁপে ।
তখন- একটি দু’টি তিনটি করে এসে
এক শো দু শো তিন শো করে
ঝাঁক বেঁধে যায় শেষে!
তারা- বললে ও ভাই, ঝাউয়ের শাখা,
বললে ও ভাই পাখি,
অন্ধকারে ভয় পেয়েছো নাকি ?
যখন- বললে, তখন পাতার ফাঁকে
কী যেন চমকালো।
অবাক অবাক চোখের চাওয়ায়
একটুখানি আলো।
যখন- ছড়িয়ে গেলো ডালপালাতে
সবাই দলে দলে
তখন- ঝাউয়ের শাখায়- পাখির পাখায়
হীরে-মানিক জ্বলে।
যখন- হীরে-মানিক জ্বলে
তখন- থমকে দাঁড়াঁয় শীতের হাওয়া
চমকে গিয়ে বলে-
খুশি খুশি মুখটি নিয়ে
তোমরা এলে কারা?
তোমরা কি ভাই নীল আকাশের তারা ?
আলোর পাখি নাম জোনাকি
জাগি রাতের বেলা,
নিজকে জ্বেলে এই আমাদের
ভালোবাসার খেলা।
তারা নইকো- নইকো তারা
নই আকাশের চাঁদ
ছোট বুকে আছে শুধুই
ভালোবাসার সাধ।
Share on:

আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে–
মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে।

আজকে আমার রুদ্ধ প্রাণের পল্বলে –
বান ডেকে ঐ জাগল জোয়ার দুয়ার – ভাঙা কল্লোলে।
আসল হাসি, আসল কাঁদন
মুক্তি এলো, আসল বাঁধন,
মুখ ফুটে আজ বুক ফাটে মোর তিক্ত দুখের সুখ আসে।
ঐ রিক্ত বুকের দুখ আসে –
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!

আসল উদাস, শ্বসল হুতাশ
সৃষ্টি-ছাড়া বুক-ফাটা শ্বাস,
ফুললো সাগর দুললো আকাশ ছুটলো বাতাস,
গগন ফেটে চক্র ছোটে, পিণাক-পাণির শূল আসে!
ঐ ধূমকেতু আর উল্কাতে
চায় সৃষ্টিটাকে উল্টাতে,

আজ তাই দেখি আর বক্ষে আমার লক্ষ বাগের ফুল হাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আজ হাসল আগুন, শ্বসল ফাগুন,
মদন মারে খুন-মাখা তূণ
পলাশ অশোক শিমুল ঘায়েল
ফাগ লাগে ঐ দিক-বাসে
গো দিগ বালিকার পীতবাসে;

আজ রঙ্গন এলো রক্তপ্রাণের অঙ্গনে মোর চারপাশে
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে!
আজ কপট কোপের তূণ ধরি,
ঐ আসল যত সুন্দরী,
কারুর পায়ে বুক ডলা খুন, কেউ বা আগুন,
কেউ মানিনী চোখের জলে বুক ভাসে!
তাদের প্রাণের ‘বুক-ফাটে-তাও-মুখ-ফোটে-না’ বাণীর বীণা মোর পাশে
ঐ তাদের কথা শোনাই তাদের
আমার চোখে জল আসে
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে!

আজ আসল ঊষা, সন্ধ্যা, দুপুর,
আসল নিকট, আসল সুদূর
আসল বাধা-বন্ধ-হারা ছন্দ-মাতন
পাগলা-গাজন-উচ্ছ্বাসে!
ঐ আসল আশিন শিউলি শিথিল
হাসল শিশির দুবঘাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!

আজ জাগল সাগর, হাসল মরু
কাঁপল ভূধর, কানন তরু
বিশ্ব-ডুবান আসল তুফান, উছলে উজান
ভৈরবীদের গান ভাসে,
মোর ডাইনে শিশু সদ্যোজাত জরায়-মরা বামপাশে।

মন ছুটছে গো আজ বল্গাহারা অশ্ব যেন পাগলা সে।
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!!
Share on:

তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল-বোশেখীর ঝড়।
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!

আসছে এবার অনাগত প্রলয়-নেশার নৃত্য পাগল,
সিন্ধু পারের সিংহ-দ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল!
মৃত্যু-গহন অন্ধকুপে
মহাকালের চণ্ড-রূপে—
বজ্র-শিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ঙ্কর!
ওরে ঐ হাসছে ভয়ঙ্কর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!

বইয়ের নামঃ অগ্নিবিণা

{বিঃ দ্রঃ উক্ত কবিতাটি অনেক বড় হওয়ায় একসাথে পুরটা পোস্ট করা গেল না। ইনশাআল্লাহ, আগামিকাল আমি পুরো কবিতাটা আপনাদের উপহার দিতে পারব। ধন্যবাদ}
Share on:

দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি-নিশীথে, যাত্রীরা হুশিয়ার!

দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ?
কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।

তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান!
যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান।
ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদের পথে নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার।

অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরন
কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তি পন।
হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কান্ডারী! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার

গিরি সংকট, ভীরু যাত্রীরা গুরু গরজায় বাজ,
পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ!
কান্ডারী! তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ?
করে হানাহানি, তবু চলো টানি, নিয়াছ যে মহাভার!

কান্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,
বাঙালীর খুনে লাল হল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!
ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর!
উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পূনর্বার।

ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান,
আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন্ বলিদান
আজি পরীক্ষা, জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রাণ?
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কান্ডারী হুশিয়ার!
Share on:
  • ← Previous post
  • Next Post →
Facebook Twitter Gplus RSS

All Category List

  • All Videos (20)
  • Percy Bysshe Shelley (1)
  • Short Biography (15)
  • অমিয় চক্রবর্তী (5)
  • আনিসুল হক (1)
  • আপনি যখন কবি (2)
  • আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ (2)
  • আবুল হাসান (12)
  • আব্দুল হাকিম (1)
  • আল মাহমুদ (5)
  • আসাদ চৌধুরী (3)
  • আহসান হাবীব (5)
  • উৎপলকুমার বসু (1)
  • কাজী নজরুল ইসলাম (16)
  • কামিনী রায় (1)
  • কায়কোবাদ (3)
  • চিত্তরঞ্জন দাশ (6)
  • জয় গোস্বামী (9)
  • জসীম উদ্দিন (18)
  • জহির রায়হান (1)
  • জীবনানন্দ দাশ (18)
  • তসলিমা নাসরিন (6)
  • তারাপদ রায় (2)
  • দাউদ হায়দার (4)
  • নির্মলেন্দু গুণ (45)
  • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (1)
  • পুর্ণেন্দু পত্রী (15)
  • প্রেমেন্দ্র মিত্র (1)
  • ফকির লালন সাঁই (1)
  • ফররুখ আহমেদ (1)
  • বিষ্ণু দে (2)
  • বুদ্ধদেব বসু (2)
  • বেগম সুফিয়া কামাল (2)
  • ময়ুখ চৌধুরী (2)
  • মল্লিকা সেনগুপ্ত (2)
  • মহাদেব সাহা (11)
  • মাইকেল মধুসূদন দত্ত (1)
  • মাহবুব উল আলম চৌধুরী (1)
  • মোফাজ্জল করিম (1)
  • যতীন্দ্র মোহন বাগচী (1)
  • রজনীকান্ত সেন (1)
  • রফিক আজাদ (4)
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (26)
  • রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ (10)
  • রেজাউদ্দিন স্টালিন (1)
  • রোকনুজ্জামান খান (1)
  • শক্তি চট্টোপাধ্যায় (10)
  • শঙ্খ ঘোষ (7)
  • শহীদ কাদরী (2)
  • শামসুর রাহমান (11)
  • শিমুল মুস্তাফা (1)
  • সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (5)
  • সমর সেন (2)
  • সমুদ্র গুপ্ত (5)
  • সুকান্ত ভট্টাচার্য (8)
  • সুকুমার বড়ুয়া (1)
  • সুকুমার রায় (5)
  • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (21)
  • সুভাষ মুখোপাধ্যায় (3)
  • সৈয়দ শামসুল হক (3)
  • হুমায়ুন আজাদ (14)
  • হেলাল হাফিজ (23)

Blog Archive

  • ►  2019 (1)
    • ►  March (1)
  • ▼  2018 (396)
    • ►  July (37)
    • ►  June (253)
    • ▼  May (24)
      • সৈয়দ শামসুল হক
      • সুনয়না ছায়ামানবী – জাকির হাসান
      • জং – প্রেমেন্দ্র মিত্র
      • হৃদয়ের ঋণ – হেলাল হাফিজ
      • ভৈঁরো-কাওয়ালী – “নজরুল গীতিকা”
      • যে পায় সে পায় – আহসান হাবীব
      • তরঙ্গে তরঙ্গে আজ যেই গীত বাজে – চিত্তরঞ্জন দাশ
      • তাহারেই পড়ে মনে – বেগম সুফিয়া কামাল
      • প্রতিক্ষার শোকগাথা – আবুল হাসান
      • অবুঝের সমীকরণ – আল মাহমুদ
      • দেশের বাণী – কায়কোবাদ
      • মানুষ – কাজী নজরুল ইসলাম
      • একবার বলেছি তোমাকে – আহসান হাবীব
      • সময়ের প্রয়োজনে - জহির রায়হান
      • প্রশ্ন – আবুল হাসান
      • পাছে লোকে কিছু বলে – কামিনী রায়
      • উৎসর্গ – উৎপলকুমার বসু
      • মুনাজাত – কাজী নজরুল ইসলাম
      • আকাঙ্খা – আবুল হাসান
      • জেলগেটে দেখা – আল মাহমুদ
      • জোনাকিরা – আহসান হাবীব
      • আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে – কাজী নজরুল ইসলাম
      • প্রলয়োল্লাস – কাজী নজরুল ইসলাম
      • কান্ডারী হুশিয়ার! – কাজী নজরুল ইসলাম
    • ►  April (29)
    • ►  March (13)
    • ►  February (22)
    • ►  January (18)
  • ►  2017 (17)
    • ►  December (14)
    • ►  November (2)
    • ►  October (1)

Translate Your Own Laguage

FB Page

Total Pageviews

Popular Posts

  • Those days of school life - স্কুল লাইফের সেই দিন গুলো || Love Bit
    Those days of school life - স্কুল লাইফের সেই দিন গুলো || Love Bit
  • Obohela (অবহেলা) Part#1 - Bangla New Sad Love Story 😭😥😥 Love Bit
    Obohela (অবহেলা) Part#1 - Bangla New Sad Love Story 😭😥😥 Love Bit
  • মেঘ বলতে আপত্তি কি ? – জয় গোস্বামী
    মেঘ বলতে আপত্তি কি ? – জয় গোস্বামী

Tags

All Videos (20) Percy Bysshe Shelley (1) Short Biography (15) অমিয় চক্রবর্তী (5) আনিসুল হক (1) আপনি যখন কবি (2) আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ (2) আবুল হাসান (12) আব্দুল হাকিম (1) আল মাহমুদ (5) আসাদ চৌধুরী (3) আহসান হাবীব (5) উৎপলকুমার বসু (1) কাজী নজরুল ইসলাম (16) কামিনী রায় (1) কায়কোবাদ (3) চিত্তরঞ্জন দাশ (6) জয় গোস্বামী (9) জসীম উদ্দিন (18) জহির রায়হান (1) জীবনানন্দ দাশ (18) তসলিমা নাসরিন (6) তারাপদ রায় (2) দাউদ হায়দার (4) নির্মলেন্দু গুণ (45) নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (1) পুর্ণেন্দু পত্রী (15) প্রেমেন্দ্র মিত্র (1) ফকির লালন সাঁই (1) ফররুখ আহমেদ (1) বিষ্ণু দে (2) বুদ্ধদেব বসু (2) বেগম সুফিয়া কামাল (2) ময়ুখ চৌধুরী (2) মল্লিকা সেনগুপ্ত (2) মহাদেব সাহা (11) মাইকেল মধুসূদন দত্ত (1) মাহবুব উল আলম চৌধুরী (1) মোফাজ্জল করিম (1) যতীন্দ্র মোহন বাগচী (1) রজনীকান্ত সেন (1) রফিক আজাদ (4) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (26) রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ (10) রেজাউদ্দিন স্টালিন (1) রোকনুজ্জামান খান (1) শক্তি চট্টোপাধ্যায় (10) শঙ্খ ঘোষ (7) শহীদ কাদরী (2) শামসুর রাহমান (11) শিমুল মুস্তাফা (1) সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (5) সমর সেন (2) সমুদ্র গুপ্ত (5) সুকান্ত ভট্টাচার্য (8) সুকুমার বড়ুয়া (1) সুকুমার রায় (5) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (21) সুভাষ মুখোপাধ্যায় (3) সৈয়দ শামসুল হক (3) হুমায়ুন আজাদ (14) হেলাল হাফিজ (23)
latest comments
Hercules Design @Hercules_group
@billykulpa Please contact us via info@hercules-design.com
Reply Retweet Favorite

06 May 2014

Hercules Design @Hercules_group
@billykulpa Please contact us via info@hercules-design.com
Reply Retweet Favorite

06 May 2014

Hercules Design @Hercules_group
@billykulpa Please contact us via info@hercules-design.com
Reply Retweet Favorite

06 May 2014

This blog is to provide you with daily outfit ideas and share my personal style. This is a super clean and elegant WordPress theme for every bloggers. Theme is perfect for sharing all sorts of media online. Photos, videos, quotes, links... etc.

Facebook Twitter Gplus Youtube

Love Bit

LoveBit is a Love Relationship Blog

  • Home
Copyright © LoveZoneBD. All Right Reserved.Developed By ArlenDevs
Created By SoraTemplates | Distributed By MyBloggerThemes