জয় গোস্বামী (নভেম্বর ১০, ১৯৫৪) একজন প্রখ্যাত বাঙালি কবি এবং সাহিত্যিক । জয় গোস্বামীর জন্ম কলকাতা শহরে। ছোটবেলায় তাঁর পরিবার রানাঘাটে চলে আসে। তখন থেকেই তাঁর স্থায়ী নিবাস সেখানে। তাঁর পিতা রাজনীতি করতেন, তাঁর হাতেই জয় গোস্বামীর কবিতা লেখার হাতে খড়ি। ছয় বছর বয়সে তাঁর পিতার মৃত্যু হয়। তাঁর মা শিক্ষকতা করে তাঁকে লালন পালন করেন। মা ছিলেন রাণাঘাট লালগোপাল স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা | কবি প্রথাগত শিক্ষার ফাঁস ছিড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন স্কুলের ১১ ক্লাস পড়তে পড়তেই | তাঁর প্রথম কবিতা সিলিং ফ্যান | তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় তিনটি লিটিল ম্যাগাজিনে – “সীমান্তে সাহিত্য”, “পদক্ষেপ” এবং “হোম শিখা” | ১৯৭৬ সালে তাঁর কবিতা দেশ পত্রিকায় প্রথম বার ছাপা হয় | পরে তিনি ঐ পত্রিকাতেই একজন সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন |
তিনি , ১৯৮৯ সালে কাব্যগ্রন্থ “ঘুমিয়েছ ঝাউপাতা”র জন্য আনন্দ পুরস্কারে ভূষিত হন, ১৯৯৭ সালে ভূষিত হন বাংলা একাদেমি পুরস্কারে “বজ্র বিদ্যুৎ ভর্তি খাতা”র জন্য এবং সাহিত্য একাদেমি পুরস্কার পান “পাগলী তোমার সঙ্গে”র জন্য | জয় গোস্বামী এ যুগের অন্যতম জনপ্রিয় এবং শক্তিশালী কবি | তাঁর কবিতা সম্বন্ধে আমাদের নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই মনে করি | তাঁর লেখা উপন্যাসের মধ্যে “মনোরমার উপন্যাস”,”সেই সব শেয়ালেরা”, “সুড়ঙ্গ ও প্রতিরক্ষা” ইত্যাদি |
অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস এবং অত্যাচারিতের পাশে দাঁড়ানো জয় গোস্বামীর অন্যতম গুণ| গুজরাতের দাঙ্গার পর কবিতায় ধিক্কার আমরা দেখেছি | সম্প্রতি (২০০৬ – ২০০৭) সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রামের জমি বাঁচাও আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি তাঁর কবিতায় ধিক্কার জানিয়েছেন | এই কবিতা নিয়ে, “বিজল্প” প্রকাশিত তাঁর ১৫টি কবিতার বই “শাসকের প্রতি” ।
এর আগেও কবি নানা সময় নানা বিষয়ে তাঁর প্রতিবাদ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় প্রকাশ করেছেন | একবার তাঁর কন্যার ইস্কুলের কতৃপক্ষকে বাংলায় চিঠি লেখায়, তারা তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে | তারা জানায় যে তারা নাকি শুধু ইংরেজীতেই লেখা চিঠি গ্রহণ করে থাকে এবং বাংলায় চিঠি গ্রহণ করতে তারা বাধ্য নয় | এর প্রতিবাদে কবি তাঁর কন্যাকে কলকাতার কসবা অঞ্চলের সেই নামী স্কুল থেকে তুলে এনে অন্যত্র ভর্তি করিয়েছিলেন | সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলনে কবির প্রকাশ্য বিরোধী ভূমিকার ফলস্বরূপ তাঁকে তাঁর দীর্ঘদিনের কাজে ইস্তফা দিয়ে বেরিয়ে আসতে হয়েছে |
কবিতা
- ক্রিসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ (১৯৭৬)
- প্রত্নজীব (১৯৭৮)
- আলেয়া হ্রদ (১৯৮১)
- উন্মাদের পাঠক্রম (১৯৮৬)
- ভূতুমভগবান (১৯৮৮)
- ঘুমিয়েছো, ঝাউপাতা? (১৯৮৯)
- আজ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করো
- বজ্র বিদ্যুং ভর্তি খাতা (১৯৯৫)
- ওহ স্বপ্ন (১৯৯৬)
- পাগলী, তোমার সঙ্গে (১৯৯৪)
- পাতার পোষাক (১৯৯৭)
- বিষাদ (১৯৯৮)
- যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল (১৯৯৮)
- মা নিষাদ (১৯৯৯)
- সূর্য পোড়া ছাই (১৯৯৯)
- জগৎবাড়ি (২০০০)
- কবিতাসংগ্রহ (১৯৯৭-২০০১)
- প্রেতপুরুষ ও অনুপম কথা (২০০৪)
- শাসকের প্রতি (২০০৭)
- হৃদয়ে প্রেমের শীর্ষ (১৯৯৪)
- মনোরমের উপন্যাস (১৯৯৪)
- সেইসব শেয়ালেরা (১৯৯৪)
- সুড়ঙ্গ ও প্রতিরক্ষা (১৯৯৫)
- রৌদ্রছায়ার সংকলন (১৯৯৮)
- সংশোধন বা কাটাকুটি (২০০১)
- সাঁঝবাতীর রূপকথারা (২০০১)
- দাদাভাইদের পাড়া
- ব্রহ্মরাক্ষস
- সব অন্ধকার ফুলগাছ
0 comments